শিকারপুরের উগ্রতারা মন্দির

Barisalpedia থেকে

হিন্দু পুরাণ অনুসারে সতীদেহ থেকে সৃষ্ট তৃতীয় শাক্তপীঠ সুগন্ধা নামে পরিচিত। সুগন্ধার অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তি রয়েছে। ঐতিহাসিকেরা বরিশাল শহর থেকে তের মাইল উত্তরে প্রাচীন বাখরগঞ্জের সোন্ধা নদীর তীরে এই সুগন্ধার সন্ধান অনুমান করছেন। সে মোতাবেক সুগন্ধার সেই শাক্তপীঠ ও শাক্তপীঠে নির্মিত কালী মন্দির বরিশালের শিকারপুর গ্রামে অবস্থিত। বহুলভাবে পরিচিত শিকারপুরের উগ্রতারার মন্দির। মন্দিরটিতে একটি শবদেহের উপর দাঁড়ানো এক দেবীমূর্তি রয়েছে। তার হাতে আছে খেটক, খড়্গ, নীলপদ্ম এবং নরমুন্ডের কংকাল। মাথার উপর আছে কার্তিক, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব ও গণপতি। অনুমিত হয় মূর্তিটি বৌদ্ধতন্ত্রের উগ্রতারা ছিলো যা পরবর্তীতে হিন্দুরীতির তারায় রূপান্তরিত। হাতের নীলপদ্ম অবশ্য প্রমাণ দেয় প্রমাণ দেয় যে ইনি হিন্দুরীতির তারা দেবীই হবেন।

Image 44.jpg


দেবীর সেবায়েতদের হস্তলিখিত প্রাচীন পুঁথিতে দেখা যায়- শ্রী গঙ্গাগতি চক্রবর্তী ৬১৭ শকাব্দ ইংরেজী ৬৯৫ খ্রিঃ স্বপ্নে সুগন্ধা নদীতটে পাষাণময়ী তারামূর্তি ও স্বয়ম্ভূ শিবলিঙ্গ প্রাপ্ত হন। গঙ্গাগতি চক্রবর্তী সুগন্ধার তীরে তারা ও শিবলিঙ্গ স্থাপন করে অর্চনার ব্যবস্থা করেন। অধ্যাপক ফুচার ১১ শতকের একটি পান্ডুলিপিতে চন্দ্রদ্বীপের তারা মূর্তির উল্লেখ দেখেছেন। শিকারপুরে প্রাপ্ত ১০১৫ খ্রিস্টাব্দের একখানা তালপাতার পুঁথিতে তারামূর্তি অঙ্কিত আছে। ১৮৮৪ খ্রিঃ আটিপাড়া গ্রামের একদল মুসলমান এই মূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলে দেয়। পরে আর একটি কালীমূর্তি শিকারপুর মন্দিরে স্থাপন করা হয়। সে মূর্তিটিও ১৯৭১ খ্রিঃ স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকবাহিনী ভেঙ্গে ফেলে। বর্তমানে আর একটি মূর্তি স্থাপন করে অর্চনা চলছে। তারা মূর্তির সাথে প্রাপ্ত শিবলিঙ্গ তারা মন্দিরে এখনও রক্ষিত আছে। শত শত বছর ধরে শিকারপুরে তারাবাড়িতে মেলা বসছে। পূর্বে ভারতের বিভিন্ন স্থান হতে ভক্তদের সমাগম হতো। শিকারপুরের ধ্বংসপ্রাপ্ত তারামূর্তি ৭ম শতকে স্থাপন করা হয়েছে বলে সেবায়েতরা দাবি করে। কিন্তু ঐতিহাসিকদের মতে, তারা মূর্তিটি পাল রাজত্বের প্রথম যুগের। মূর্তির চার হস্তে খড়গ, তরবারি, নীলোৎপল ও নরমুন্ড। শবের উপর দন্ডায়মান দেবীমূর্তির উপরিভাগে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, কার্তিক ও গণেশের মূতি উৎকীর্ণ। দেবী মূর্তির উপরিভাগে ছোট আকারে খোদিত পাঁচ দেবতার মূতি ভাস্কর্যের চরম অভিব্যক্তি প্রকাশ করে এবং বৌদ্ধধর্মের মহাযানপন্থী পঞ্চধ্যানী বুদ্ধের সন্নিবেশ স্মরণ করিয়ে দেয়।


তথ্যসূত্র: ১। সাইফুল আহসান বুলবুল। বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন। গতিধারা, ঢাকা। ২০১২। ২।সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।