"শাহ কামাল, হজরত"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
("হজরত শাহ্ কামাল মোগল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে (১৬৫৮-১৭০৭) ব..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
হজরত শাহ্ কামাল মোগল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে (১৬৫৮-১৭০৭) বাকলায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের প্রাচীন নাম বাঙ্গালা। তাই শাহ্ কামাল এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করে শাহ্ বাঙ্গাল উপাধি গ্রহণ করেন। শাহ্ বাঙ্গাল পরিবর্তিত হয়ে শেহাঙ্গল হয়েছে।  
+
হজরত শাহ্ কামাল মোগল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে (১৬৫৮-১৭০৭) বাকলায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। তিনি বর্তমান পিরোজপুরের অন্তর্গত নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের শেহাঙ্গল গ্রামে বসবাস শুরু করেন। বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের প্রাচীন নাম বাঙ্গালা। তাই শাহ্ কামাল এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করে শাহ্ বাঙ্গাল উপাধি গ্রহণ করেন। শাহ্ বাঙ্গাল পরিবর্তিত হয়ে শেহাঙ্গল হয়েছে।
  
শাহ কামাল যখন বাকলায় আগমন করেন তখন সেলিমাবাদ পরগণার এক বিরাট অংশ সুন্দরবনে আবৃত ছিল। শাহ কামাল সুন্দরবনের বাঘ বশীভূত করেন। ফলে জঙ্গল কেটে বসতি হলো। শত শত লোক শাহ কামালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। দক্ষিণ বাংলায় তার কয়েকটি ইসলাম প্রচার কেন্দ্র ছিল।  
+
শাহ কামাল যখন বাকলায় আগমন করেন তখন সেলিমাবাদ পরগণার এক বিরাট অংশ সুন্দরবনে আবৃত ছিল। শাহ কামাল সুন্দরবনের বাঘ বশীভূত করেন। ফলে জঙ্গল কেটে বসতি হলো। শত শত লোক শাহ কামালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। দক্ষিণ বাংলায় তার কয়েকটি ইসলাম প্রচার কেন্দ্র ছিল।
  
শেহাঙ্গলের পরেই তার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রচার কেন্দ্র ছিল মোরেলগঞ্জ থানার হোগলাপাশা। হোগলাপাশায় শাহ কামাল একটি মসজিদ নির্মাণ ও দীঘি খনন করেন। তার সময়ের কয়েকটি ইটে বাঘের পায়ের ছাপ আছে। হজরত শাহ কামাল শেহাঙ্গলে ৭টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তার মধ্যে ৬টি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। ১৯৬৭ সালে মাটির টিলা খনন করে একটি মসজিদ আবিষ্কার করা হয়। মসজিদের মধ্যে ধাতু নির্মিত যন্ত্রপাতি ও মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়। মনে হয় জলোচ্ছ্বাস বা মগ-পর্তুগীজদের আক্রমণের ফলে এ অঞ্চল জনশূন্য হয়ে পড়ে।  
+
শেহাঙ্গলের পরেই তার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রচার কেন্দ্র ছিল মোরেলগঞ্জ থানার হোগলাপাশা। হোগলাপাশায় শাহ কামাল একটি মসজিদ নির্মাণ ও দীঘি খনন করেন। তার সময়ের কয়েকটি ইটে বাঘের পায়ের ছাপ আছে। হজরত শাহ কামাল শেহাঙ্গলে ৭টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তার মধ্যে ৬টি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। ১৯৬৭ সালে মাটির টিলা খনন করে একটি মসজিদ আবিষ্কার করা হয়। মসজিদের মধ্যে ধাতু নির্মিত যন্ত্রপাতি ও মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়। মনে হয় জলোচ্ছ্বাস বা মগ-পর্তুগীজদের আক্রমণের ফলে এ অঞ্চল জনশূন্য হয়ে পড়ে।
  
 
শাহ কামাল ও তার দরগাহের অনেক কাহিনী আছে। তার শিষ্য ছিলেন দিলরাজ খাঁ। দিলরাজ খাঁ একরাতে ৭টি দরজা নির্মাণ ও একটি দীঘি খনন করেন। শাহ কামালের মসজিদের নিকট খাঁ বাড়ীর পিছনে দিলরাজ খাঁর মাজার আছে। ১৭ শতকে হজরত শাহ কামাল বাকলা সরকারের সেলিমাবাদ পরগণার জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তার সুফী-সাধনায় মুগ্ধ হয়ে এ অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমান তাকে পরম শ্রদ্ধা করত। আজও শত শত ভক্ত শাহ কামালের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে আসে। প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসে মাজারে উরস ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
 
শাহ কামাল ও তার দরগাহের অনেক কাহিনী আছে। তার শিষ্য ছিলেন দিলরাজ খাঁ। দিলরাজ খাঁ একরাতে ৭টি দরজা নির্মাণ ও একটি দীঘি খনন করেন। শাহ কামালের মসজিদের নিকট খাঁ বাড়ীর পিছনে দিলরাজ খাঁর মাজার আছে। ১৭ শতকে হজরত শাহ কামাল বাকলা সরকারের সেলিমাবাদ পরগণার জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তার সুফী-সাধনায় মুগ্ধ হয়ে এ অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমান তাকে পরম শ্রদ্ধা করত। আজও শত শত ভক্ত শাহ কামালের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে আসে। প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসে মাজারে উরস ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
 +
 +
  
  
 
----
 
----
 
তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ২০১০।
 
তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ২০১০।

১০:৪৩, ২৩ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

হজরত শাহ্ কামাল মোগল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে (১৬৫৮-১৭০৭) বাকলায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। তিনি বর্তমান পিরোজপুরের অন্তর্গত নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের শেহাঙ্গল গ্রামে বসবাস শুরু করেন। বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের প্রাচীন নাম বাঙ্গালা। তাই শাহ্ কামাল এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করে শাহ্ বাঙ্গাল উপাধি গ্রহণ করেন। শাহ্ বাঙ্গাল পরিবর্তিত হয়ে শেহাঙ্গল হয়েছে।

শাহ কামাল যখন বাকলায় আগমন করেন তখন সেলিমাবাদ পরগণার এক বিরাট অংশ সুন্দরবনে আবৃত ছিল। শাহ কামাল সুন্দরবনের বাঘ বশীভূত করেন। ফলে জঙ্গল কেটে বসতি হলো। শত শত লোক শাহ কামালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। দক্ষিণ বাংলায় তার কয়েকটি ইসলাম প্রচার কেন্দ্র ছিল।

শেহাঙ্গলের পরেই তার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রচার কেন্দ্র ছিল মোরেলগঞ্জ থানার হোগলাপাশা। হোগলাপাশায় শাহ কামাল একটি মসজিদ নির্মাণ ও দীঘি খনন করেন। তার সময়ের কয়েকটি ইটে বাঘের পায়ের ছাপ আছে। হজরত শাহ কামাল শেহাঙ্গলে ৭টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তার মধ্যে ৬টি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। ১৯৬৭ সালে মাটির টিলা খনন করে একটি মসজিদ আবিষ্কার করা হয়। মসজিদের মধ্যে ধাতু নির্মিত যন্ত্রপাতি ও মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়। মনে হয় জলোচ্ছ্বাস বা মগ-পর্তুগীজদের আক্রমণের ফলে এ অঞ্চল জনশূন্য হয়ে পড়ে।

শাহ কামাল ও তার দরগাহের অনেক কাহিনী আছে। তার শিষ্য ছিলেন দিলরাজ খাঁ। দিলরাজ খাঁ একরাতে ৭টি দরজা নির্মাণ ও একটি দীঘি খনন করেন। শাহ কামালের মসজিদের নিকট খাঁ বাড়ীর পিছনে দিলরাজ খাঁর মাজার আছে। ১৭ শতকে হজরত শাহ কামাল বাকলা সরকারের সেলিমাবাদ পরগণার জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তার সুফী-সাধনায় মুগ্ধ হয়ে এ অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমান তাকে পরম শ্রদ্ধা করত। আজও শত শত ভক্ত শাহ কামালের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে আসে। প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসে মাজারে উরস ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।




তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ২০১০।