শাহবাজপুর পরগণা

Barisalpedia থেকে

শাহবাজ খাঁ কুম্ভু সম্রাট আকবরের একজন সেনাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি ১৫৮২ খৃৃস্টাব্দে ঈসা খাঁকে দমন করার জন্য ভাটি অঞ্চলে এসেছিলেন। সম্ভবত তিনি সরকার বাকলার উত্তরাংশ দখল করেন এবং তার নামে এ অঞ্চলের নাম হয় শাহবাজপুর। মিঃ ব্লকম্যান বলেন যে, শাহবাজপুরের নাম আরও প্রাচীন। কিন্তু এ কথা সত্য নয়। সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গীরের পূর্বে মোগল বাহিনী বাকলায় আগমন করেনি। পূর্বে ভোলা শাহবাজপুরের অন্তর্ভূক্ত ছিল। তেঁতুলিয়া ও ইলিশা নদী শাহবাজপুরকে দ্বিখন্ডিত করে। হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ নিয়ে উত্তর শাহবাজপুর এবং বোরহানউদ্দিন, দৌলত খাঁ, তজুমদ্দিন ও ভোলা নিয়ে দক্ষিন শাহাবাজপুর গঠিত ছিল। প্রভাবশালী চাঁদ রায় সংগ্রাম শাহের সাথে বাকলার মগ-পর্তুগীজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কৃতিত্বের পরিচয় দেন। সম্রাট সন্তুষ্ট হয়ে চাঁদ রায়কে শাহবাজপুর পরগণার জমিদারী প্রদান করেন। চাঁদ রায় হিজলার গোবিন্দপুরে বসতি স্থাপন করেন। তিনি গোবিন্দপুরে মঠ নির্মাণ ও বাসুদেবের মূর্তি স্থাপন করেন। গোবিন্দপুর মেঘনায় বিলীন হলে বাসুদেবের মূর্তিটি নিখোঁজ হয়ে যায়। ১৯৮৪ খৃৃস্টাব্দে তেঁতুলিয়া গ্রামে একটি পুকুর খননকালে বাসুদেবের মূর্তিটি পাওয়া যায়।

মেঘনা নদীর পশ্চিম তীরে দক্ষিণ শাহবাজপুর অবস্থিত। হাতিয়া এক সময় দক্ষিণ শাহবাজপুর পরগণাধীন ছিল। ভুলুয়া বা নোয়াখালীর আহসান উল্লাহ সিকদার, বিজলী নারায়ণ মজুমদার ও ঢাকার চারজন দক্ষিণ শাহবাজপুরের প্রথম জমিদার। মিঃ গ্রান্টের বিবরণে দেখা যায়, ১৭৫৯ খৃৃস্টাব্দে জনৈক ভূষণ উল্লাহ দক্ষিণ শাহবাজপুর ও শ্রীরামপুরের মালিক ছিলেন। রাজস্ব বাকি পড়ায় আবু সায়েদ নামে একজন ফকির তার স্ত্রী সরতাজ বিবির নামে দক্ষিণ শাহবাজপুর বন্দোবস্ত নেন। আবু সায়েদ ও তার দেওয়ান কৃষ্ণরাম চক্রবর্তী শ্রীরামপুর বা বর্তমান মেহেন্দীগঞ্জের অধিবাসী ছিলেন। তার পৌত্র মির্যাজান বা মির্জা আহমেদ জান ১৭৮০-৯৫ খৃৃস্টাব্দে পরগণার মালিক ছিলেন। মির্যাজান ও তার সৎ ভাই খোদাবক্সের মধ্যে বিবাদের জন্য ১৭৮০ খৃৃস্টাব্দে ৭ আনা জমিদারী নিলামে বিক্রি হয় এবং ঢাকার ব্যবসায়ী খাজা মাইকেল তা ক্রয় করে। বাকি অংশ মাইকেলের পুত্র খাজা আরাতুন ১৭৮৫ খৃৃস্টাব্দে ক্রয় করে। ঢাকার কালেক্টর মিঃ ডগলাস তিন আনা দেড় গণ্ডা জমিদারী মির্যাজানকে ফিরিয়ে দেন। খাজা মাইকেল ও মির্যাজানের বংশধররা দক্ষিন শাহবাজপুরের প্রধান জমিদার ছিলেন। লবণ উৎপাদনের জন্য দক্ষিণ শাহবাজপুর বিখ্যাত ছিল। এই পরগণার মোট রাজস্ব ছিল ৫৪০০০ টাকা। ভোলার এক-তৃতীয়াংশে লবণ চাষ হতো।

দক্ষিণ শাহবাজপুরের জমিদারগণ: দক্ষিণ শাহবাজপুরের জমিদার ও তালুকদারদের ছিলেন গঙ্গাপুরের চৌধুরী, দেওলীর চৌধুরী, বাটামারার সৈয়দ, মনপুরার চৌধুরী, হাজীপুরের রায়, কুতবার চৌধুরী ও বালিয়ার তালুকদার।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।