শায়েস্তা খান ও বাকলা

Barisalpedia থেকে

বরিশাল তথা বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাসে শায়েস্তা খান এক ঐতিহাসিক নাম। তিনি মগ-পর্তুগিজদের আক্রমণ থেকে বরিশাল তথা বাকলা-চন্দ্রদ্বীপকে রক্ষার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।


প্রাথমিক উদ্যোগ

শাহ সুজার পরাজয়ের পরে বাংলার সুবেদার হন শায়েস্তা খান। শায়েস্তা খানও বাকলা থেকে মগ পর্তুগিজ দমনে আন্তরিক ছিলেন। তার সাথে ছিল আওরঙ্গজেব কর্তৃক প্রেরিত সেনাপতি সংগ্রাম শাহ। সংগ্রাম শাহ মেহেন্দীগঞ্জের গোবিন্দপুরে এক বিরাট সেনানিবাস নির্মাণ করেন। এটি সংগ্রাম কেল্লা নামে পরিচিত। এটি ছিল বাংলাদেশে মোগলদের সবচেয়ে বড় নৌঘাটি। আলমগীরনামা থেকে জানা যায় যে এটি ১৬৬৫ সালে নির্মাণ শেষ হয়েছিল। এই কেল্লা প্রায় ১০০ বছর আগে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সংগ্রাম শাহ ঝালকাঠি জেলার রূপসিয়ায় ও রাজাপুরের ইন্দ্রপাশায়ও কিল্লা নির্মাণ করেছিলেন।


স্থায়ী উদ্যোগ

শায়েস্তা খান রাজা রামচন্দ্র বসু, কীর্তি নারায়ণ, সংগ্রাম শাহ ও চাঁদ রায়ের নেতৃত্বে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করেন। শায়েস্তা খান নৌ সেনাপতি ইবনে হোসেনকে ১৬৬৫ খৃস্টাব্দে উত্তর শাহবাজপুরে প্রেরণ করেন। তিনি সংগ্রাম কেল্লাকে কেন্দ্র করে আক্রমণ পরিচালনা করেন। ইবনে হোসেন, সংগ্রাম শাহ ও যুবরাজ কীর্তি নারায়ণ মিলিত প্রচেষ্টায় মেঘনা নদী থেকে মগদের বিতাড়িত করে সন্দ্বীপ দখল করেন। এই যুদ্ধে উলানিয়ার চৌধুরীদের পূর্বপুরুষ মোহাম্মদ হানিফ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। এই বাহিনীর প্রধান ছিলেন শায়েস্তা খার জ্যেষ্ঠ পুত্র বুজুর্গ উমেদ খা। এই বাহিনী ১৬৬৬ খৃস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম দখল করেন।

মগ বিতাড়নের একটি যুদ্ধ শায়েস্তাবাদ নদীতেও হয়েছিল। স্থায়ীভাবে মগ প্রতিরোধের জন্য শায়েস্তা খানের নির্দেশে শায়েস্তাবাদের রাজাপুর (গ্রামের নাম), বাকেরগঞ্জ ও তজুমদ্দিনে দুর্গ নির্মাণ করেন এবং সেসব দুর্গে সৈন্য মোতায়েন করেন। তজুমদ্দিনের দুর্গে এক ফৌজদার ছিলেন। তার পদবি অনুসারে গ্রামের নাম হয়ে যায় ফৌজদারকান্দি।


মগ বিতাড়নে অবদানের পুরস্কার

মগদের সাথে যুদ্ধ জয় এবং সন্দ্বীপ ও চট্টগ্রাম দখলের খবরে আওরঙ্গজেব অত্যন্ত খুশি হন। খুশি হয়ে তিনি বুজুর্গ উমেদ খানকে চন্দ্রদ্বীপের একটি পরগণা দান করেন। সেই পরগণার নাম হয় বুজুর্গ উমেদপুর। বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালি, বেতাগী, মির্জাগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চল বুজুর্গ উমেদপুর পরগণার অন্তর্গত ছিল। বুজুর্গ উমেদ খা বাকেরগঞ্জের যে স্থানে থাকতেন সেখানে সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ রাখা হতো বলে গ্রামটির নাম হয়ে যায় গোলাবাড়ি (গ্রামটি বর্তমানে নেই)। বুজুর্গ উমেদ খার বিষয়ে কিছু অভিযোগ কর্ণগোচর হলে শায়েস্তা খান তাকে ঢাকায় ফেরত নেন। আওরঙ্গজেব সংগ্রাম শাহকে খুশি হয়ে ভূষণার জায়গির দান করেন এবং তাকে রাজা খেতাব দেন। যুদ্ধে চাঁদ রায়ের উপরে খুশি হয়ে তিনি তাকে শাহবাজপুরের জমিদারি দান করেন। মোহাম্মদ হানিফকে শায়েস্তা খান সংগ্রাম কেল্লার জমাদার নিযুক্ত করেন।

উপসংহার

১৬৮৯ সাল পর্যন্ত শায়েস্তা খা সুবেদার ছিলেন। তার সময়কালে বাকলার মানুষেরা মগ অত্যাচার থেকে অনেকখানি নিরাপত্তা লাভ করেছিল।



তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খণ্ড)