শামসুদ্দীন আবুল কালাম

Barisalpedia থেকে

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে সার্থকভাবে উপন্যাসে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে শামসুদ্দীন আবুল কালামের সাথে তুলনীয় আর কোনো উপন্যাসিক বিরল। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও চিত্রনির্মাতা ।

শামসুদ্দীন আবুল কালাম.jpg


জন্ম, নামকরণ, পূর্বপুরুষ ও শৈশব

শামসুদ্দীন আবুল কালাম ১৯২৬ সালের ১ এপ্রিল বৃহত্তর বরিশালের অন্তর্গত বর্তমান ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার কামদেবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর ডাকনাম ছিল কাঞ্চন যা আদরে উচ্চারিত হতো কাঞ্চু রূপে (জামান ১৩০)। ১৯৫৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর নাম ছিল আবুল কালাম শামসুদ্দীন। সমসাময়িক কালের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন-এর সাথে তাঁর নাম মিলে যাওয়ায় পাঠকের বিভ্রান্তি দূরীকরণার্থে ১৯৫৫ সালে তাঁর প্রকাশিত ‘দুই হৃদয়ের তীর’ শীর্ষক গল্পগ্রন্থে প্রথম তিনি নিজের নাম পরিবর্তিত বিন্যাসে শামসুদ্দীন আবুল কালাম লিখতে শুরু করেন (মতিন ১৬২)। শামসুদ্দীন আবুল কালামের পিতার নাম জনাব আকরাম মুন্সী বা মতান্তরে আকরাম আলী এবং মায়ের নাম মেহেরুন্নেসা ওরফে ফুলমেহের (জামান ২০০)। পিতা জনাব আকরাম মুন্সী একজন সমাজসেবী লোক ছিলেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় নলছিটি হাট থেকে চামটা হাট পর্যন্ত জেলা বোর্ড কর্তৃক ১৮ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছিল (জামান ১২৮)। শামসুদ্দীন আবুল কালামের কোনো ভাই ছিল না। তাঁর চার জন বোন ছিলেন যাঁদের নাম যথাক্রমে জাহানারা বেগম, স্বামী মোকসুদ আলি; রওশন আরা বেগম, স্বামী মইনুদ্দিন আহমদ; মমতাজ বেগম, স্বামী মকবুল হোসেন; এবং সাঈদা আখতার খুকু, স্বামী রাশেদুল হক। শামসুদ্দীন আবুল কালামের পিতৃপুরুষরা কামদেবপুর গ্রামের প্রতিপত্তিশালী লোক ছিলেন। বিষখালি নদীর পারে ভবানীপুর লঞ্চ স্টেশন থেকে এক মাইল দূরে অবস্থিত কামদেবপুর গ্রামে দুই প্রতিপত্তিশালী ভাই ছিলেন জহির ও জব্বর। জহিরের পুত্র জিকিরউল্লা আর জব্বরের পুত্র রাজাউল্লা। জিকিরউল্লার দুই ছেলে আকরাম ও একরাম। আকরাম আলীর একমাত্র পুত্র কাঞ্চন অর্থাৎ শামসুদ্দীন আবুল কালাম (জামান ১৩০)। আকরাম আলী বরিশাল কোর্টে নি¤œপদের কর্মচারী ছিলেন (জামান ১৩১)। তখন মুসলমানরা খুব একটা দাপ্তরিক কোনো পদে ছিল না বলেই এই ছোট পদে চাকুরি করেও শেরে বাংলার সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। সে সুবাদে জনাব আকরাম আলী তাঁর ইউনিয়নে ঋণশালিসী বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন (জামান ১৩১)। সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে তাঁর বাবা আকরাম আলী বরিশালের গোরাচাঁদ দাস রোডে টিনের একটি বাসা তৈরি করেছিলেন (জামান ১৩০)। বাড়িটি ছিল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের বর্তমান বাড়িটির বিপরীতে। তাঁর কামদেবপুরস্থ বাড়ির তাঁর কালের প্রতিবেশি হানিফ মিয়ার বর্ণনানুযায়ী শামসুদ্দীন আবুল কালাম ছোটবেলা থেকে তাঁর পিতার সাথে বরিশালের বাসায়ই থাকতেন, কামদেবপুরে খুব বেশি যেতেন না (জামান ১২৭)। এই বাড়িতে থেকেই তিনি বরিশাল জিলা স্কুলে লেখাপড়া করেন এবং বরিশাল জিলা স্কুল থেকেই ম্যাট্রিক পাস করে ১৯৪১ সালে তিনি বিএম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে ভর্তি হন। কলেজে থাকতে তিনি রিভোলুশনিস্ট সোশালিস্ট পার্টির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৪৫ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দী সৈন্যদের মুক্তির দাবিতে বরিশালে যে মিছিল হয় তাতে তিনি সাংবাদিক আবদুল খালেক খান, দৈনিক পাকিস্তানের প্রথম বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হক প্রমুখের সাথে মিছিলের প্রথম সারিতে ছিলেন। শামসুদ্দীন আবুল কালাম তখনকার চল্লিশোর্ধ অভাব-পীড়িত লেখক অমরেন্দ্র ঘোষকে ধরে নিয়ে এসেছিলেন এই পার্টি অফিসে। এই অফিসেই অমরেন্দ্রর উপন্যাস ‘দক্ষিণের বিল’ ও ‘চর কাশেম’এর পান্ডুলিপি থেকে পাঠ শুনতো সবাই (জামান ২৭, ২৮)। অমরেন্দ্র ঘোষ তাঁর ‘জবানবন্দী’ শীর্ষক আত্মজীবনীতেও এ কথা লিখেছেন। স্কুল জীবনেই তাঁর সাহিত্যে হাতেখড়ি। বিএ ক্লাসের ছাত্র হওয়ার আগেই লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত গল্প ‘শাহেরবানু’। পটুয়াখালির তৎকালীন মুন্সেফ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত গল্পটির অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র দৈনিক ‘স্বাধীনতা’র সম্পাদক ও বিখ্যাত গল্পলেখক সোমনাথ লাহিড়ী গল্পটির প্রশংসাসূচক সমালোচনা লিখেছিলেন। ১৯৪৬ সালে বিএ পরীক্ষার পর তিনি সাহিত্যকর্মে আরো নিবিষ্ট হন। তখন বরিশাল থেকে ‘সাত সতেরো’ নামে একটি একটি কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়। বিএম কলেজের বাংলার অধ্যাপক সুধাংশু চৌধুরী এবং শামসুদ্দীন আবুল কালাম যথাক্রমে সংকলনটির সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। এই সংকলনে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, জীবনানন্দ দাশ, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের পাশাপাশি শামসুদ্দীন আবুল কালামেরও তিনটি কবিতা ছিল। বিএ পাসের পর তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯৪৩ ছিল ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের বছর। সেই দুর্ভিক্ষে মানুষের আহাজারি নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন শামসুদ্দীন। তাঁর সেই কবিতাকে ব্যঙ্গ করে তাঁর সহপাঠী অর্থনীতির ছাত্র শিশির গুপ্ত বিএম কলেজের ৭নং কক্ষের দেয়ালে এই ব্যঙ্গ কবিতাটি লিখে রেখেছিলেন: আবুল কালাম শামসুদ্দীন তার মুখে দুটো ভাত দিন কত যে লিখেছেন কবিতা যেন ভাত খায়নি বহুত দিন (জামান ২৬)

১৯৪৬ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ- তে ভর্তি হওয়ার পর কোলকাতায়ই তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে হোসনে আরা ওরফে বিজুর সাথে। ‘সাত সতেরো’ নামক কবিতা পত্রিকায় হোসনে আরাকে নিয়ে তাঁর লিখিত কবিতা প্রকাশিত হয়। দেশবিভাগোত্তর ১৯৫০ এর পরে বাবা-মা এবং বড় দুলাভাই প্রফেসর মকসুদ আলীর অমতে তিনি ঢাকায় হোসনে আরার সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন এবং স্ত্রী ও স্ত্রীর এক ছোট ভাইকে নিয়ে আজিমপুর কলোনির একটি বাসায় সংসার রচনা করেন (জামান ১৩২)।

১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পরেও তিনি কলকাতায় ছিলেন। কোলকাতায় গিয়ে জুনিয়র বন্ধু নির্মল সেন তাঁকে বরিশালে আসার কথা বললে তিনি নির্মল সেনকে বলেছিলেন- ‘নির্মল ওটা কাঠমোল্লাদের দেশ হবে। আমি যাব না। তুই ফিরে যা’ (জামান ৩২)। ১৯৫০ সালে অবশ্য তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় তিনি তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সরকারের প্রচার ও তথ্য দপ্তরে অর্থাৎ রেডিও পাকিস্তানে প্রথমে স্টাফ আর্টিস্ট ও পরে এ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর পদে যোগ দেন। এখানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, ফররুখ আহমদ ও সৈয়দ আলী আহসানের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব হয় (জামান ৩৫)। শিঘ্রই তিনি ঢাকায় কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের প্রচার ও তথ্য দপ্তরের আঞ্চলিক অফিসে যোগ দিয়ে ‘মাহে নও’ পত্রিকা সম্পাদনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন (মতিন ১৬১)। এ সময় তিনি আজিমপুর কলোনিতে থাকতেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কবি গোলাম মোস্তফা, আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ তখন তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন। এ সময়কালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম মাসিক ‘সিনেমা’ পত্রিকায় উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করতেন। এই পত্রিকার উপদেষ্টা হিসেবে তিনি ব্যবহার করতেন ছদ্মনাম ‘আল-বেরুনী’। এই ছদ্মনামে তিনি ধারাবাহিক নাটক লিখতেন ‘সিনেমা’ পত্রিকায়। সাঈদা আখতার খুকুর বর্ণনামতে তিনি সরকারি কাজে করাচিতে থাকাকালীন তাঁর মাতা ফুলমেহের মারা যান। করাচী থেকে দেশে ফিরে শামসুদ্দীন আবুল কালাম মায়ের শোকে ভেঙ্গে পড়েন। তখন তাঁর বাবাও অসুস্থ। তিনি বরিশাল থেকে তাঁর ছোট দুই বোনকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। কিন্তু স্ত্রী হোসনে আরার সাথে বনিবনা না হওয়ার কারণে বোনদেরকে নিজের বাসায় রাখতে পারলেন না। এসব থেকেই স্ত্রীর সাথে তাঁর সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে। এক পর্যায়ে স্ত্রী হোসনে আরা বিজু শামসুদ্দীন আবুল কালামকে পরিত্যাগ করে উদীয়মান অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার সাথে পরিণয়াবদ্ধ হন। সাথে নিয়ে যান শামসুদ্দীন আবুল কালামের একমাত্র কন্যা ক্যামেলিয়াকে। ক্যামেলিয়া পরবর্তীতে গোলাম মুস্তাফার নামেই পরিচিত হর ক্যামেলিয়া মুস্তাফা রূপে। দুঃখজনকভাবে আমাদের কাছে এ মর্মে কোনো তথ্য নেই যে হোসনে আরা বিজুর সাথে শামসুদ্দীন আবুল কালামের কত তারিখে বিয়ে হয়েছিল এবং কত তারিখে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছিল। ১৯৫৬-৫৭ সালে তিনি জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান ইউনেসকোর ফেলোশিপ লাভ করে ছ’মাসেরও অধিককাল পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি দেশ সফর করেন। ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ ইতালীর সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সিনে সিত্তা’য় (ঈরহব ঈরঃঃধ) ফটোগ্রাফি, সেট ডিজাইনিং, পাশ্চাত্য সংগীত এবং চলচ্চিত্র সম্পাদনা সম্পর্কে শিক্ষালাভের জন্য তিনি রোমে ফিরে যান। আশ্চর্যজনক যে তিনি সেবার রোম যান বিমানে নয় বরং জাহাজে। ঢাকা থেকে বিমানে করাচী গিয়ে সেখান থেকে সমুদ্রপথে ভূমধ্যসাগর হয়ে প্রায় মাসখানেক বসে তিনি ইতালী ফৌঁছেছিলেন (জামান ১৪৩)। ১৯৬১ সালে তিনি রোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট. উপাধি লাভ করেন এবং রোমের ‘এক্সপেরিমেন্টাল সেন্টার অব সিনেমাটোগ্রাফি’ থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে একটি ডিপ্লোমা লাভ করেন। ইতালিতে তিনি বিখ্যাত পরিচালক ভিতোরিয়ো ডি সিকা’র সহযোগী হিসেবে চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তাছাড়া ‘লা স্ত্রাদা’ নামের বিখ্যাত চলচ্চিত্রের পরিচালক ফ্রেডারিকো ফেলিনি’র পরবর্তী ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবেও তিনি আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন (মতিন ১০)। জাতিংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার আওতায় প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ শাখায় কাজ করতেন চাকুরি হিসেবে। ১৯৬৪ সালে শামসুদ্দীন আবুল কালাম সাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেয়ে ক্যামেলিয়াকে নিয়ে তিনি লন্ডনে বন্ধু আবদুল মতিন সাহেবের কাছে গিয়েছিলেন এবং জনাব আবদুল মতিনের দক্ষিণ লন্ডনের বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। আবদুল মতিনের কাছে লেখা চিঠিগুলো থেকে জানা যায় ১৯৮৭ সাল থেকে রোমে তাঁর আর্থিক কষ্ট শুরু হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার চাকুরিটি চলে যায়। ড. নূরুল ইসলাম ঐ বিভাগের বড় কর্মকর্তা হয়ে বসার পর জনাব ইসলাম এই বিভাগের ডকুমেন্টারি নির্মাণের কাজ আর রিনিউ না করায় তার এই চাকুরি আর হয় না। ১৯৭৯ সালের আগে ঢাকায় ফেরত আসার কথা ভাবছিলেন কিন্তু ৮৭ সালে ভাবছেন ‘ঢাকায় ফেরাও আত্মহত্যার সামিল হবে’। ৮৭ সালে এক চিঠিতে লিখেছেন- ‘ফ্লাইবুর্গে (জার্মানী) যাওয়ার বিষয়ও অনিশ্চিত, আমেরিকার দিকে সুযোগ সত্বেও মন উঠলো না, তবে শান্তিনিকেতনে সুযোগ পেতে পারি’ (মতিন ৪৫)। নাগরিকত্ব ছাড়া শুধু অবস্থান অনুমতি নিয়ে তিনি রোমে থাকছেন। ১৯৮৮ সালে লিখেছেন ‘আরও বছর খানেক পরে আমি প্রয়োজনীয় নাগরিকত্ব পাবো’। ১৯৯০ সালে তিনি ফুসফুস ও হৃদরোগে বেশ ভুগেছেন। ৩ অক্টোবর ১৯৯০ তারিখের চিঠিতে জানা যায় ভেরোনায় তাঁর ফুসফুসে ও হৃদপিন্ডে সার্জারি হয়েছে। ১৯৯৩ সালের পর থেকে চোখের গ্লকোমা তীব্র হতে থাকে। ১৯৯৪ সালের পরে পুরো সুস্থ তিনি আর কখনো হননি। ১৯৯৭ সালের ১০ জানুয়ারি রোমে তাঁর এ্যাপার্টমেন্টে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃত্যুর সঠিক তারিখ আজও অজানা। তবে সেলিনা বাহার জামানের বক্তৃতা থেকে জানা যায় যে এই খবরটি বাংলাদেশে এসেছে মার্চের ১২ তারিখের পরে। গ্রন্থাবলি গল্পগ্রন্থ ১) শাহের বানু: এটি শামসুদ্দীন আবুল কালামের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। ১৯৪৫ সালে এটি কলকাতা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় প্রকাশ কোলকাতার নবযুগ প্রকাশনী কর্তৃক ১৯৫৭ সালে। উৎসর্গ: অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত। এটিতে ১০টি গল্প ছিল- ক) শাহের বানু, খ) ইতিকথা, গ) জাহাজঘাটের কুলি, ঘ) কেরায়া নায়ের মাঝি, ঙ) পৌষ, চ) শেষ প্রহর, ছ) মূলধন, জ) মুক্তি, ঝ) জোর যার, ও ঞ) ভাঙন। ২) অনেক দিনের আশা। ওয়াসী বুক সেন্টার, ঢাকা। সেপ্টেম্বর ১৯৫২। প্রচ্ছদ আমিনুল ইসলাম। মূল্য ৩ টাকা। এ বইয়ে রয়েছে ১০টি গল্প: ক) অনেক দিনের আশা, খ) পৌষস্বপ্ন, গ) কলাবতী, ঘ) আসা যাওয়ার কথা, ঙ) হঠাৎ, চ) কালীদহের তীরে, ছ) দুর্যোগ, জ) ক্ষুধা, ঝ) বাঁদর, ও ঞ) মৌসুম। ৩) পথ জানা নাই: এটি ১৯৫৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এটিতেও ১০টি গল্প- ক) পথ জানা নাই, খ) বন্যা, গ) মেঘনায় কত জল, ঘ) জীবনে শুভ অর্থ, ঙ) বজ্র, চ) মদন মাঝির গেলেপতার, ছ) সরজমিন, জ) বান, ঝ) কালো রাত্রির ভোর, ও ঞ) অনেক দিনের আশা। ৪) ঢেউ। ওয়াসী বুক সেন্টার। মার্চ ১৯৫৩। প্রচ্ছদ: আমিনুল ইসলাম। উৎসর্গ: নেই। মূল্য: ২ টাকা। সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এটিতে রয়েছে ৭টি গল্প- ক) মাধ্যাকর্ষণ, খ) একটি নিদারুণ দুর্ঘটনা, গ) একটি উপন্যাসের খসড়া, ঘ) জামাই, ঙ) বসন্ত, চ) রাগ, ও ছ) ঢেউ। ৫) দুই হৃদয়ের তীর। কোহিনুর লাইব্রেরী, ঢাকা। ১৯৫৫। প্রচ্ছদ: আখতারুজ্জামান। উৎসর্গ: সৈয়দ আজিজুল হক। মূল্য: ২.৫০টাকা। এটিতে রয়েছে ৮টি গল্পÑ ক) নবমেঘভার, খ) এক দুপুরবেলার সুর, গ) প্রথম হাসির ইতিকথা, ঘ) অম্লমধুর, ঙ) যুগেযুগে, চ) অভাবনীয়, ছ) নীল দেওয়াল, ও জ) দুই হৃদয়ের তীর। ৬) পুঁই ডালিমের কাব্য। মুক্তধারা। ১৯৮৭। প্রচ্ছদ: হাশেম খান। উৎসর্গ: ডক্টর শিশির কুমার বরাট। মূল্য: ৩২টাকা। বইটিতে রয়েছে ১২টি ছোটগল্প ও ১টি আত্মজীবনীমূলক লেখা। গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক) পুঁই ডালিমের কাব্য, খ) জীবন শিল্পী, গ) লালবাত্তি, ঘ) কায়কারবার, ঙ) ভাঙ্গন, চ) গায়ের আগুন, ছ) সেই লোকটি আর সেই পাখিটির কথা, জ) সেই মেয়েটি ও তার কাঠ-গোলাপ গাছটির কথা, ঝ) রাগবিরাগের নানাজি ও ম্যাজিক লন্ঠন ইত্যাদি। এই বইয়ের গল্পগুলো ১৯৭২ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকশিত হয়েছিল। নিয়ামত হোসেনের ‘শামসুদ্দীন আবুল কালাম: মনপ্রাণ পড়ে থাকত যাঁর এদেশে’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে জানা যায় শামসুদ্দীন আবুল কালাম একদিন বেড়াতে গিয়েছিলেন এলিফ্যান্ট রোডে এক বাড়িতে। সেখানে একটি ডালিম গাছের পাশে ছোট্ট একটি লতানো পুঁইডগা দেখে সে কি খুশি! বললেন, এটা নিয়ে লিখবো। সেই লেখাই ‘পুঁই ডালিমের কাব্য’ (জামান ৮৯)। ৭) মজাগাঙের গান। মুক্তধারা। মার্চ ১৯৮৭। প্রচ্ছদ: সিরাজুল হক। উৎসর্গ: বেগম আনোয়ারা বাহার চৌধুরী। মূল্য: ৩০ টাকা। এটিতে রয়েছে ১০টি গল্প: ক) রক্তের স্বাদ, খ) নকল, গ) নেপথ্যে, ঘ) ওয়েভলেংথ, ঙ) মানসকন্যা, চ) মজা গাঙের গান, ছ) সুটকেস, জ) দায়-দাবি, ঝ) কথা, ও ঞ) একটি প্রবন্ধের গল্প। ১৯৪৫ সালে ছাত্রজীবনে তিনি ‘কাকলিমুখর’ নামে একটি গল্প লেখেন। গল্পটির নায়ক ছিলেন সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত রাজবন্দী নলছিটি থানার সিদ্ধকাঠি গ্রামের দিবাকর মুখার্জী। ছাত্রজীবনেই শামসুদ্দীন আবুল কালামের ছোটগল্প ‘কলম’ কলকাতার মাসিক ‘সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পঞ্চাশের দশকে এই গল্পটি পূর্ববঙ্গে ম্যাট্রিকের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত ছিল। উপন্যাস ১। কাশবনের কন্যা। এটি শামসুদদীন আবুল কালামের প্রথম উপন্যাস এবং এটি ১৯৫৪ সালে (বাংলা ১৩৬১) ওসমানিয়া বুক ডিপো থেকে প্রকাশিত হয়। অবশ্য এটি লেখা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। ১৯৮৩-৮৪ (বাংলা ১৩৯০-৯১) সালে এটি পুনর্লিখিত হয় এবং এর পুনর্লিখিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে মুক্তধারা বইটির রজত জয়ন্তী সংস্করণ প্রকাশ করে। এই গ্রন্থের সুবাদেই তিনি ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। তবে এ গ্রন্থের জন্য তাঁকে নিন্দাও কম কুড়াতে হয়নি। ১৯৯৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে বন্ধু আবদুল মতিনকে লেখা এক চিঠিতে শামসুদ্দীন আবুল কালাম এই গ্রন্থ সম্পর্কে লেখেন ‘. . . আমার হেলায়-ফেলায় লেখা ‘কাশবনের কন্যা’ যখন যখন বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেই সময় (পঞ্চাশের দশকে) বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী মহল থেকে কেবল নিন্দাবাদই নয়, এমনকি অশ্লীলতার অজুহাতে এবং অ-পাকিস্তানী মনোভাব প্রচারে দুষ্ট বলে বাজেয়াপ্ত করার কথাও উঠে। ‘দৈনিক আজাদ’ সম্পাদক (আবুল কালাম শামসুদ্দীন) আমাকে সরাসরিও বলেন যে, মুসলমান কখনও বৈষ্ণব হয় না। তাঁর প্রধান আপত্তি ছিল, বইয়ের মলাটের পরেই উদ্ধৃত পল্লী-পদাবলী ‘গৌররূপ দেখিয়া হইয়াছি পাগল...’ গীতিটি। পরবর্তী সংস্করণে আমি তা পরিবর্তনে বাধ্য হই। প্রকাশক তো গোড়াতেই সে বইয়ের অনেকাংশ বাদ দিয়েছিলেন। ফলে অনুবাদ সম্ভব হয় না ইউনেস্কোর উদ্যোগে, না শ্রীমতী লীলা রায়ের আগ্রহে।’ শামসুদ্দীন আবুল কালাম অন্য এক চিঠিতে লেখেন ‘ ‘কাশবনের কন্যা’র জন্য বাংলা একাডেমীর সৈয়দ আলী আহসানের পুরস্কারও সেই সময় পেন-এর কলকাতা প্রতিনিধি অন্নদাশঙ্কর রায়ের উৎসাহ ব্যতীত সম্ভব হতো না।... যখন ‘মাহে নও’ পত্রিকার জন্য ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেন উক্ত গ্রন্থের বিষয়ে অজ¯্র প্রশংসা করে আমাকে শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের সম্মান দেন, ছান্দসিক কবি আবদুল কদিরের হাতে তা খন্ডিত হয়’ (মতিন ৩৪)। ২। আলমনগরের উপকথা। কোহিনুর লাইব্রেরী, ঢাকা। ১৯৫৪। মূল্য চার টাকা। উৎসর্গ: মোসাম্মৎ নগিনা খাতুন ও মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। রচনাকাল ১৯৫২। এর পূর্বনাম ছিল ‘দুই মহল’। ৩। আশিয়ানা। জাহাঙ্গীরনগর পাবলিসিং হাউস। জুলাই ১৯৫৫। প্রচ্ছদ: হাবিবুল্লা খান। উৎসর্গ: জয়নুল আবেদীন। মূল্য: এক টাকা চারি আনা। এই বইয়ের পরিচয়ে লেখক বইয়ের শুরুতে ‘নিবেদন’ শিরোনামে কয়েকটি কথা লিখেছেন: ‘এই গ্রন্থের মূল কাহিনীটি ‘একটি নীড়ের কাহিনী’ নামক ছোটগল্পের আকারে কলিকাতা হইতে ‘মহাকাল’ (শ্রী প্রতাপ রায়) সম্পাদিত ‘কালান্তর’ নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছিল। ১৯৪৯ সনে রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা হইতে ইহার বেতার-নাট্যরূপ প্রচারিত হয়। বেতার-নাট্যে ইহার নোতুন নাম করণ করা হইয়াছিল ‘নীড়’; উক্ত গল্প এবং বেতার-নাট্য অবলম্বনেই বর্তমান চিত্রনাট্যটি রচিত হইয়াছে। এই আঙ্গিকে পূর্ব-পাকিস্তানে উপন্যাস লিখিবার প্রচেষ্টা এই প্রথম। ‘এই চিত্র-নাট্যটি উর্দুতেও অনুবাদিত হইয়াছে। পাঠক সাধারণের নিকট ইহা আদরণীয় হইলে ভবিষ্যতে এই ধরণের আরও বই লিখিবা ইচ্ছা রহিল। এই পুস্তকখানি প্রকাশের ব্যাপারে বন্ধু অধ্যাপক আহ্মদ শরীফ, ইকবাল একাডেমীর রিসার্চ-স্কলার আবু সায়ীদ নুরুদ্দিন, কাজী আবদুল ওয়াদুদ এবং আজাদ ও মোহাম্মদী কর্তৃপক্ষের নিকট আমি সবিশেষ কৃতজ্ঞ; মামুলী ধন্যবাদ দিয়া তাহা শেষ করা চলে না।’ ৪। জীবনকাব্য। দি প্যারাডাইজ লাইব্রেরী। ১৯৫৬। প্রচ্ছদ: মোস্তফা শওকত কামাল। উৎসর্গ: জনাব আবু হোসেন সরকার। মূল্য: ৩ টাকা। রচনাকাল: ১৯৪৭-১৯৫৩। এই গ্রন্থের ভূমিকায়ও তিনি লিখেছেন ‘আজাদ-সম্পাদক সাহেবের নামের সঙ্গে আমার নাম এক হওয়াতে যে সব অসুবিধা সৃষ্টি হইয়াছে, তাহা নিরসনের জন্য এখন হইতে আমার নাম ‘শামসুদ্দীন আবুল কালাম’ লিখিতেছি’। ৫। কাঞ্চনমালা। ওসমানিয়া বুক ডিপো। ১৯৬২। দ্বিতীয় প্রকাশ: ১৯৭৪। মূল্য ৯.৫০টাকা। বেদে সম্প্রদায়ের জীবনালেখ্য। ৬। জায়জঙ্গল। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ঢাকা। ১৯৭৮। প্রকাশক পাওয়া না যাওয়ায় এ উপন্যাসটি লেখককে নিজ অর্থে প্রকাশ করতে হয়েছিল। শেষে একটু সস্তায় সকল কপি এক সহৃদয় এবং লেককের সুহৃদ এক প্রকাশক কিনে নিয়েছিলেন (জামান ৮৮)। ৭। মনের মতো ঠাঁই। মুক্তধারা, ঢাকা। ১৯৮৫। ৮। সমুদ্রবাসর। মুক্তধারা, ঢাকা। ১৯৮৬। ৯। যার সাথে যার। মুক্তধারা, ঢাকা। ১৯৮৬। ১০। নবান্ন। মুক্তধারা, ঢাকা। ১৯৮৭। ১১। কাঞ্চনগ্রাম। সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা। ১৯৯৮। ১৯৭২ সালের জুন ও জুলাই মাসে ঢাকায় অবস্থান কালে এবং রোমে ফিরে আসার পরে ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে শামসুদ্দীন আবুল কালাম এ উপন্যাসের খসড়া প্রস্তুত করেন। একই সাথে উপন্যাসটির বাংলা ও ইংরেজি চিত্রনাট্যও প্রস্তুত করেন। ১৯৮৬ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে রোম ও মিলান শহরের সান রাফায়েল হাসপাতালে উপন্যাসটি পুনর্লিখন করেন। ১৯৮৭ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে ঢাকায় অবস্থান কালে লেখার কাজ শেষ করেন (মতিন ৩০)। কিশোর উপন্যাস ১। রাতের অতিথি। দেবসাহিত্য কুটীর, কোলকাতা। প্রকাশ সন বাংলা ১৩৫১ মোতাবেক ১৯৪৫ খৃস্টাব্দ। আবু কায়সারের ‘ছোটদের বন্ধু শামসুদ্দীন আবুল কালাম’ প্রবন্ধ থেকে জানা যায় দেবসাহিত্য কুটীরের বিখ্যাত প্রহেলিকা সিরিজের ১২ নং বই হিসেবে এটি প্রকাশিত হয়েছিল। বইটি লেখক বরিশালের বিপিন স্মৃতি পাঠাগারকে উৎসর্গ করেছিলেন। দেব সাহিত্য কুটীর তখন শিশুদের জন্য প্রকাশ করছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা সিরিজ, কিশোরদের জন্য প্রহেলিকা সিরিজ এবং আরো একটু বড়দের জন্য পিরামিড সিরিজ। বাংলার বাঘা সাহিত্যিকদের প্রায় সবাই এই সিরিজে লিখেছেন। সেই সিরিজে মাত্র সতের (?) বছর বয়সের শামসুদ্দীন আবুল কালাম লিখেছিলেন ‘রাতের অতিথি’। এ ছিল কল্পনার চেয়েও উচ্চতর এক সাফল্য। (জামান ৮৩-৮৪) ২। কাকলী মুখর। বেঙ্গল পাবলিশার্স, কোলকাতা। প্রকাশকাল ১৯৪৮এর পূর্বে কোনো সময়। একটি মফস্বল শহরের একদল ছেলেমেয়ে কীভাবে একটি ক্লাব গড়ে তোলে, বইটিতে সেই কাহিনিই চমৎকারভাবে তুলে ধরেছিলেন লেখক। (জামান ৮৫) ৩। সবাই যাকে করলো হেলা। ওসমানিয়া বুক ডিপো, ঢাকা। দ্বিতীয় প্রকাশ: ১৯৬৫। পত্রসংকলন ১। কুসুমেষু। ম্যাগনামওপাস, ঢাকা। মার্চ ২০০৬। গ্রন্থনা: ফখরুজ্জামান চৌধুরী। ২। শামসুদ্দীন আবুল কালাম ও তাঁর পত্রাবলী। র‌্যাডিক্যাল এশিয়া পাবলিকেশনস, ঢাকা। ২০০৬। সম্পাদনা: আবদুল মতিন। এটি ১৯৭২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত লন্ডন নিবাসী জনাব আবদুল মতিনকে লেখা শামসুদ্দীন আবুল কালামের ৪৭টি চিঠির একটি সংকলন। এই ৪৭টি চিঠি ছাড়াও বইয়ে রয়েছে অন্নদাশঙ্করের কাছে লেখা একখানা চিঠি এবং দিল্লি নিবাসী দেবীপ্রসাদ দাসের কাছে লেখা একটি চিঠি।

অপ্রকাশিত গ্রন্থ ১. সোনারগাঁও ২. দুমুড়ি সময় ৩. কল্যাণীয়াসু / ক্যামেলিয়ার চিঠি। [২৫/১১/১৯৯৪ তারিখে ভাগ্নে অধ্যাপক হারুন অর রশিদের কাছে লেখা চিঠি থেকে জ্ঞাত] ৪. সিরতাকী ৫. ক্ষীর সাগর ৬. পালতোলা নাও। [২৫/১১/১৯৯৪ তারিখে ভাগ্নে অধ্যাপক হারুন অর রশিদের কাছে লেখা চিঠি থেকে জ্ঞাত] ৭. ঢেউ ভরা নদী। [২৫/১১/১৯৯৪ তারিখে ভাগ্নে অধ্যাপক হারুন অর রশিদের কাছে লেখা চিঠি থেকে জ্ঞাত] ৮. সাগর ঠিকানা ৯. কূলউপকূল ১০. জীবনবহতা ১১. ঈষদাভাস । জনাব আবদুল মতিন ১৯৯৬ সালে রোমে জনাব শামসুদ্দীন আবুল কালামের সাথে দেখা করেন। সেখানে তিনি জানতে পারেন যে শামসুদ্দীন আবুল কালাম তাঁর আত্মজীবনীর প্রথম খ- প্রায় পাঁচশো পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখে ফেলেছেন এবং এই প্রথম খ-ের নাম দিয়েছেন ‘ঈষদাভাস’। ১২. জনৈক লেখকের জন্ম ১৩. বয়ঃসন্ধিকাল ১৪. দি গার্ডেন অব কেইন ফ্রুটস। এটি তাঁর ‘নবান্ন’ উপন্যাসের ইংরেজি ট্রান্সক্রিয়েশন। বইটি ব্রিটেনের খ্যাতনামা পুস্তক প্রকাশক হাইনেম্যান থেকে প্রকাশের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি (মতিন ২৫)। ১৫. দি ব্যাটেল অব বাংলাদেশ। এটি পরবর্তীতে বাংলায় ‘কাঞ্চনগ্রাম’ নামে লিখিত হয় (মতিন ২৯) ১৬. শরৎ চন্দ্রের ‘মহেশ’ অবলম্বনে একটি নাটক। [২৫/১১/১৯৯৪ তারিখে ভাগ্নে অধ্যাপক হারুন অর রশিদের কাছে লেখা চিঠি থেকে জ্ঞাত] ১৭. শেলীর জীবনী অবলম্বনে লিখিত একটি নাটক। [২৫/১১/১৯৯৪ তারিখে ভাগ্নে অধ্যাপক হারুন অর লশিদের কাছে লেখা চিঠি থেকে জ্ঞাত] ১৮. দুঃখমোচন। [২৫/১১/১৯৯৪ তারিখে ভাগ্নে অধ্যাপক হারুন অর রশিদের কাছে লেখা চিঠি থেকে জ্ঞাত] ১৯. পলিমাটির দেশ। [২৫/১১/১৯৯৪ তারিখে ভাগ্নে অধ্যাপক হারুন অর রশিদের কাছে লেখা চিঠি থেকে জ্ঞাত] এত বড় লেখকের বইও অপ্রকাশিত রয়ে যায়, আমাদের প্রকাশকরা প্রকাশ করেন না, করেননি। ২৮ নভেম্বর ১৯৯৪ তারিখে শামসুদ্দীন আবুল কালাম অনেক কষ্টের সাথে বন্ধু আবদুল মতিনকে লেখেন- ‘ঢাকায় একজন প্রকাশকের কাছে সম্বন্ধ স্থাপন করা সম্ভব হলে আমার প্রায় ২০টিরও বেশি পা-ুলিপি তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতাম। আমার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এগুলো একেবারে নিশ্চিহ্ন ‎হয়ে যাবে।’ এই উপেক্ষায় এমনকি তিনি স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন তাঁর জীবনের প্রথমদিকে গুণী মানুষদের কাছ থেকে পাওয়া মূল্যায়ন ও অভিনন্দনের ঘটনাগুলোও- ‘যে-সময়ে আমার ‘কেরায়া নায়ের মাঝি’, ‘পলিমাটির দেশ’, ‘শাহের বানু’ ইত্যাদি ক্রমাগত কোলকাতার অতি বিখ্যাত এবং বড়জনদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, সেই সময়টির বিষয়ে কোনও বাঙালি মুসলমান কিছুই লেখে না; আমার প্রতি ঈর্ষাবশত আমি অনেক প্রকার আক্রমণেরও সম্মুখীন হই। একজন বাঙালি হিন্দু লেখক (শ্রী নরেন্দ্রনাথ রায়) এ বিষয়ে লিখেছিলেন, এক সময়শ্রী অন্নদাশঙ্কর রায় আমাকে সর্বভরতীয় লেখকসমাজে তুলে নিতে আগ্রহী হন, অচিন্ত্যকুমার, জীবনানন্দ, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, তারাশঙ্কর, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এবং আরো বহুজ বাঙালি মুসলমান, বিশেষ করে জনসাধারণের কথা সাহিত্যে তুলে আনছি বলে আমাকে স্বাগত জানান, কখনও কখনও অভিনন্দিতও করেন’ (মতিন ৪৩)। উদ্ধৃত গ্রন্থাবলি ১. জামান, সেলিনা বাহার (সম্পা.)। শামসুদ্দীন আবুল কালাম স্মারক গ্রন্থ। বুলবুল পাবলিশিং হাউস, ঢাকা। ১৯৯৮। ২. মতিন, আবদুল। শামসুদ্দীন আবুল কালাম ও তাঁর পত্রাবলী। র‌্যাডিকাল এশিয়া পাবলিকেশনস, ঢাকা। ২০০৬।