শান্তি ঘোষ (দাস)

Barisalpedia থেকে

ইংরেজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সের হত্যাকারী বিখ্যাত বিপ্লবী শান্তি ঘোষের (২২.১১.১৯১৬ - ২৭.৩.১৯৮৯) মূল নিবাস ছিল বরিশালের পিরোজপুরের রায়েরকাঠি গ্রামে। কলকাতায় জন্ম। লেখাপড়া কুমিল্লায়। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সমর্থক পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ ছিলেন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের দর্শনের অধ্যাপক।

শান্তি ঘোষ কুমিল্লা ফয়জুন্নিসা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্র, বিপ্লবী যুগান্তর দলের প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্মর প্রভাবে ওই দলের উৎসাহী কর্মী হয়ে ওঠেন। সাইমন কমিশন-বিরোধী আন্দোলন (১৯২৮), আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০) কুমিল্লা জনজীবনে সেদিন যে আলোড়ন তুলেছিল, তার অভিঘাত তাঁর কিশোরী মনেও এসে পড়েছিল। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত ছাত্র কনফারেন্সের পর তাঁরা ছাত্রসংঘ গড়ে তোলেন, আর সভাপনেত্রী ছিলেন প্রফুল্লনলিনী, সম্পাদিকা শান্তি এবং ক্যাপ্টেন সুনীতি। তখন ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে ঘোরাফেরা করা অভাবনীয় ছিল। তাই শহরের দশ মাইল দূরে ময়নামতী-কোঠাবাড়ির পাহাড়ে-জঙ্গলে বীরেন্দ্র ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে তাঁদের বন্দুক ছোঁড়ার অনুশীলন শুরু হয়। লাঠিখেলা, ছোরাখেলা, ব্যায়াম, ড্রিলও তাঁরা শিখতে থাকেন। তিরিশের দশকের গোড়ায় পরপর কয়েকটি ঘটনা- চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার অধিকার, বিনয়-বাদল-দীনেশের কীর্তি, হিজলি বন্দিনিবাসে গুলিচালনা, বিচারপতি গার্লিক ও মেদিনপিুরের ম্যাজিস্ট্রেট পেডি হত্যা- তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। এইরকম পরিস্থিতিতে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে পনেরো ও চোদ্দো বছরের ওই দুই কিশোরী, শান্তি ও সুনীতি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সের কুঠিতে অভিযান চালান। ঘটনাস্থলেই ম্যাজিস্ট্রেটের মৃত্যু হয় এবং তাঁরা ধরা পড়েন। সশস্ত্র বিপ্লবের এটাই ছিল মেয়েদের প্রথম পদক্ষেপ। বিচারে তাঁদের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের আদেশ হয়। নাবালিকা কিশোরী বলে ফাঁসির আদেশ না পাওয়ায় তাঁরা নিরাশ হয়েছিলেন। বিভিন্ন জেলে তাঁদের পৃথক পৃথক করে রাখা হয়েছিল- শান্তি ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণির কয়েদি, সুনীতিকে করা হয় তৃতীয় শ্রেণির। বন্দিজীবনে সুনীতির উপর অপমানকর অন্যায় উৎপীড়নের অন্ত ছিল না। সাত বছর পর গান্ধীজির প্রচেষ্টায় অন্য সকল রাজনৈতিক বন্দির সঙ্গে তাঁদেরও মুক্তি আসে। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কারামুক্তির পর তিনি কলকাতার উইমেনস্ কলেজে ভরতি হন। কিছুকাল কমিউনিস্ট পার্টির কাছাকাছি এসেছিলেন। রাজাবাজারে একটি বিড়ির কারখানায় কিছুদিন সংগঠকের কাজ করেন। পরে কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে অধ্যপক চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৯৬২ - ৬৭ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক বিধানসভার সদস্য এবং ১৯৫২-৬২ ও ১৯৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য বিধান পরিষদের সদস্য ছিলেন। রচিত গ্রন্থ: ‘অরুণ বহ্নি’।


তথ্যসূত্র: ১। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান (২য় খন্ড)। ২। সিরাজউদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খণ্ড)