শরৎ কুমার ঘোষ

Barisalpedia থেকে

শরৎকুমার ঘোষের পোশাকি নাম পুরুষোত্তমানন্দ অবধূত। তাঁর জন্ম ১৮৮৩ সালে। মৃত্যু ১ এপ্রিল ১৯৫৮। পিতার নাম নীলকমল ঘোষ। গ্রাম: কাঁকরদা, থানা: বাকেরগঞ্জ, জেলা: বরিশাল।

শিক্ষাজীবন

শরৎকুমার ঘোষ বরিশালের ব্রজমোহন স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ ও ব্রজমোহন কলেজ থেকে এফ.এ. পাশ করে কলকাতায় বি.এ. অবধি পড়াশোনা করেন।

কর্মজীবন

শরৎকুমার ঘোষ বি.এ. অবধি পড়াশোনা করে বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলে শিক্ষকতা আরম্ভ করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে স্কুল কর্তৃপক্ষের অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। এই সময়ে তাঁর গুরুদেব শ্রী নিত্যগোপাল (যোগাচার্য শ্রীমৎ জ্ঞানানন্দ অবধূত) দেবের জীবন ও দর্শন অবলম্বনে বেদান্তের এক ভাষ্য রচনা করে কলকাতা থিয়োসফিক্যাল সোসাইটিতে একাদিক্রমে ১৪টি রবিবার সেই বিষয়ে বক্তৃতা দেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে বাংলার বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে এবং বৃন্দাবন, সুরাট, বরোদা, আহমেদাবাদ প্রভৃতি স্থানে রাজনৈতিক কাজে সক্রিয় হন ও কারাবরণ করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে লবণ আইন অমান্য করে সপরিবারে গ্রেপ্তার হন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনেও কারারুদ্ধ থাকেন। রাজনৈতিক জীবনে বহুবার বিভিন্ন কারণে যেমন জাতীয় বিদ্যালয় গঠনের সংকল্পে, বরিশাল টাউন হলে সিনেমা আরম্ভ করার প্রতিবাদে, বিলাতি দ্রব্য বয়কট করার দাবিতে, ভোলাতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে, ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মান্দালয় জেলে রাজবন্দিদের প্রতি সহানুভূতিতে তিনি অনশনব্রত পালন করেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে জেলে থাকাকালীন ১১টি প্রধান উপনিষদ ও শ্রীমদ্ভগবদগীতার বৈপ্লবিক ভাষ্য রচনা করেন। বর্ণাশ্রমের উচ্চ-নীচ ভেদাভেদের মূলোচ্ছেদের জন্য শাস্ত্রগত চিন্তাধারা তিনি এই ভাষ্যগুলিতে ও পূর্বোক্ত বেদান্তভাষ্যে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। কলেজ জীবনে ‘সত্যব্রত সমিতি’ গঠন করেছিলেন। পরবর্তীকালে ‘বিশ্বকল্যাণ সভা’ ,‘আনন্দমঠ’ প্রভৃতি সংস্থা স্থাপন করেন। কংগ্রেসের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় কংগ্রেস ছেড়ে ‘স্বরাজ সেবক সংঘ’ গড়েন। এর পরের কীর্তি ‘গৌরাঙ্গগোষ্ঠী’ ও ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ‘নরনারায়ণ’ আশ্রম প্রতিষ্ঠা। এই আশ্রম ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ২৪ পরগনার বাগুইআটিতে স্থানান্তরিত করেন।

রচনাবলী

ভাষ্যগুলি ছাড়া ‘শ্রী নিত্যগোপাল: দর্শনে ও জীবনে’ এবং মহাত্মা গান্ধীর গঠনমূলক কর্মপদ্ধতির দার্শনিক আলোচনা পুস্তকও লিখে গিয়েছেন। ‘নরনারায়ণ আশ্রম’র প্রচারপত্র ‘উজ্জ্বল ভারত’ প্রকাশ করেন। নিজেকে তিনি বলতেন ‘ছেড়া মাদুরের দলে’র লোক।

মৃত্যু

১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় শ্রীশ্রীনিত্যগোপাল দেবের সমাধিক্ষেত্র ‘মহানির্বাণ মঠে’ তাঁর জন্মবার্ষিকীতে বক্তৃতা প্রদানকালে অজ্ঞান হয়ে পড়ে পরদিন দেহত্যাগ করেন।


তথ্যসূত্র: বাঙালি চরিতাভিধান (প্রথম খন্ড)। কোলকাতা: সাহিত্য সংসদ। ২০১৩।