শচীন্দ্রনাথ করগুপ্ত
হাবড়ায় ‘গ্রামসেবা সংঘ’- এর প্রতিষ্ঠাতা। জন্ম ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯০৫। মৃত্যু ১১ মে ১৯৭৫। জন্মস্থান গৌরনদী থানার নলচিড়া গ্রাম। পিতা রাসবিহারী করগুপ্ত।
ছাত্রজীবনেই তিনি বরিশালে প্রজ্ঞানন্দ সরস্বতীর প্রতিষ্ঠিত শঙ্কর মঠের সংস্পর্শে এসে বিপ্লবী ধারায় অনুপ্রাণিত হন। ১৯২২ খৃস্টাব্দে তিনি নিজ গ্রামে ‘বিবেক আশ্রম’ গড়ে তুলে যুবছাত্রদের নৈতিক ও চারিত্রিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন। ১৯২৮ খৃস্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেস অধিবেশনে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যোগ দেন। ১৯২৯ খৃস্টাব্দে শেষের দিকে মেছুয়াবাজার বোমা মামলায় প্রথম কারারুদ্ধ হন। ৮.২.১৯৩১ তারিখে দীনেশ মজুমদার ও সুশীল দাশগুপ্তের সঙ্গে তিনি মেদিনীপুর জেল ভেঙে পালিয়ে আসেন। পলাতক অবস্থায় বাংলার বিভিন্ন জেলায় বিপ্লবী আন্দোলন সংগঠিত করার সময় ধরা পড়ে দ্বীপান্তরিত হন। আন্দামান সেলুলার জেলে বন্দিদের প্রতি অত্যাচারের প্রতিবাদে যে অনশন ধর্মঘট হয়েছিল তিনি তাতে অংশ নেন। ৫ বছর পর আলিপুর জেলে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়। এখানে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৫ খৃস্টাব্দে কারামুক্ত হন এবং ১৯৪৬ খৃস্টাব্দে এক বিবৃতি দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সংশ্রব ত্যাগ করেন। ১৯৪৭-৪৯ খৃস্টাব্দে পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ কলকাতায় কংগ্রেস সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তখনই তিনি এ.আই.সি.সি.-র সদস্য। ১৯৪৯ খৃস্টাব্দে তিনি উদবাস্তুদের মধ্যে সেবাকাজ করার উদ্দেশ্যে হরিপুরে (কল্যাণগড়) আসেন। এই বছরের শেষে কুচবিহার ভুখা মিছিলে পুলিশের গুলি বর্ষণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি রাজনীতির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করেন। ডিসেম্বর ১৯৪৯ খৃস্টাব্দে হাবড়ার নিকটবর্তী হাটথুবা অঞ্চলে স্থানীয় হাজী এলাহি বক্স সাহেবের প্রদত্ত ৭৫ শতক জমিতে ‘গ্রাম সেবা সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করে আমৃত্যু সংঘের কাজ করে গেছেন। তা ছাড়া হাবড়ার প্রতিটি শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
তথ্যসূত্র: বাঙালি চরিতাভিধান (প্রথম খন্ড)। কোলকাতা: সাহিত্য সংসদ। ২০১৩।