লক্ষ্মণকাঠির বিষ্ণুমূর্তি

Barisalpedia থেকে

চন্দ্রদ্বীপে প্রাপ্ত প্রাচীন মূর্তিগুলোর মধ্যে গৌরনদী থানায় লক্ষ্মণকাঠির বিষ্ণুমূর্তিটি বাংলার ভাস্কর্য শিল্পের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ চৈত্র মঙ্গলবার গৌরনদীর আটক গ্রামে পুকুর খনন করার সময় মহাবিষ্ণুর চতুর্ভুজ প্রকান্ড মূর্তিটি পাওয়া যায়। খুব সম্ভব রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক কারণে মূর্তিটি কয়েকশ’ বছর পূর্বে পুকুরের মাটির নিচে প্রেথিত হয়। প্রকান্ড এ মূর্তিটি ধূসর বর্ণেও কৃষ্ণ পাথরের ওপর সুন্দরভাবে খোদিত। কৃষ্ণ পাথরের এ বিষ্ণু মূর্তিটি ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চ। উর্ধে উড্ডীয়মান ত্রিনেত্র গরুড়ের পাখার ওপর বিষ্ণু ললিতাসনে উপবিষ্ট। বিষ্ণুর উর্ধ দক্ষিণ ও বাম হস্তে ধৃত পদ্মানালের ওপর যথাক্রমে লক্ষ্মী (গজলক্ষ্মী) ও বিনাবাদিনী বাণীমূর্তি। অন্য দু’হস্তে চক্র পুরুষসহ চক্র ও গদাদেবী। মস্তকের ষটকোণে কিরীটির মধ্যস্থলে ধ্যানস্থ চতুর্ভুজ দেবমূর্তি। হস্তোপরি লক্ষ্মী ও সরস্বতী (শ্রী ও পুষ্টি) এবং কিরীটস্থ ধ্যানী দেবমূর্তি- এ দু’টি আলোচ্য মূর্তিও বিশেষত্ব। বিষ্ণু মূর্তিতে এগুলো দেখা যায় না। সম্ভবত এটা বৌদ্ধ মহাযান মতের প্রভাব সূচিত করে। ঐতিহাসিক এন. কে. ভট্টশালী মূর্তিটিকে গুপ্ত যুগের বলে দাবি করেন। কিন্তু বৌদ্ধ মহাযান মতের প্রভাব প্রমাণ করে মূর্তিটি পাল আমলের প্রথম যুগের- অষ্টম শতকের। ডঃ নীহারবঞ্জন রায় তার বাংলার ইতিহাসে এ মূর্তি সম্পর্কে বলেছেন, “বরিশাল জেলার লক্ষ্মণকাঠির সুপ্রসিদ্ধ বিষ্ণু প্রতিমার পশ্চাতে হাসের ওপর আসীন শ্রী ও পুষ্টির প্রতিকৃতি এবং মুুকুটে চতুর্হস্ত ধ্যানী বুদ্ধপ্রতিম প্রতিমাটি মুর্তিতত্ত্বের দিক হতে উল্লেখযোগ্য। উভয় লক্ষ্মণেই মহাযান বৌদ্ধ প্রতিমার রূপ কল্পনা নিঃসন্দেহে সক্রিয়।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।