রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি, পিরোজপুর

Barisalpedia থেকে

মোগল সম্রাট শাহজাহানের বাংলা অঞ্চলে আগমনের সময়ে হুগলি জিলার দিগঙ্গার জমিদার রাঢ় দেশীয় সেন বংশোদ্ভব কিংকর ভুঁইয়ার পুত্র মদনমোহন সম্রাটের সাক্ষাৎ লাভে সমর্থ হন। এই সময় বুদ্ধিমান মদনমোহন এই দেশীয় বিভিন্ন উপহার সামগ্রী এবং সম্রাটের গুণগান করার মাধ্যমে তার কৃপা লাভে সমর্থ হন। তুষ্ট সম্রাট তাকে রায় রাইয়া উপাধিতে ভুষিত করে এই অঞ্চলের খাজনা আদায়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। চতুর মদনমোহন বাংলা অঞ্চলের বিভিন্ন জমিদারি থেকে প্রচুর রাজস্ব আদায় করেন এবং রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হওয়া অনেক জমিদারি খাস পরগনায় পরিণত করেন। এই রাজস্ব আদায় অভিযান লব্ধ আয় এবং নানা উপঢৌকনসহ তিনি নবাবের সঙ্গে পুনরায় দেখা করেন। মদনমোহনের এই সাফল্য নবাবকে বিশেষ প্রীত করে এবং তিনি তাকে বিশেষ উপহার দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। মদনমোহন সেই সুযোগে নবাবের নিকট খাস পরগনাগুলির পত্তনি গ্রহণ প্রার্থনা করেন। নবাব তার প্রার্থনা মঞ্জুর করে সেলিমাবাদের সনদ প্রদান করেন। মদনমোহন তার পুত্র শ্রীনাথের নামে সনদ গ্রহণ করে নথুল্লাবাদ এলাকায় কাচারি স্থাপন করে বসবাস শুরু করেন। মদনমোহন পরিবারের চতুর্থ পুরুষ রুদ্রনারায়ণ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে নথুল্লাবাদ ত্যাগ করে বলেশ্বরের পূর্বতীরে রাজধানী স্থাপন করে, নুতন রাজধানীর নামকরন করেন রায়েরকাঠি। পরবর্তী সময়ে রুদ্রনারায়ণ পরিবারের শত্রুজিৎ রায়েরকাঠির উন্নতি সাধন করেন। শত্রুজিৎ-এর অধস্তন পুরুষেরা বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাসে বিশেষ ভুমিকায় অধিষ্ঠিত বলে প্রতীয়মাণ। বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত রায়েরকাঠি জমিদারবাড়ি সেই গৌরবময় অধ্যায়ের নীরব সাক্ষী মাত্র।



তথ্যসূত্র: সাইফুল আহসান বুলবুল। বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন। গতিধারা, ঢাকা। ২০১২।