রামমোহন মাল

Barisalpedia থেকে

বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাসে বীরশ্রেষ্ঠ রামমোহন মাল এক রূপকথার নায়ক ছিলেন। তিনি ছিলেন রাজা রামচন্দ্র বসুর প্রধান শরীররক্ষক বা বর্তমান অভিধায় প্রেসিডেন্টের গার্ড রেজিমেন্ট প্রধান।

রামমোহন মালের পৈতৃক নিবাস ছিল ভারতের সীমান্ত প্রদেশে। তিনি জাতিতে ক্ষত্রিয় । তার পিতা ভুলুয়ায় বসতি স্থাপন করেন। রামমোহনের বীরত্বের কথা শুনে কন্দর্প নারায়ণ তাকে প্রধান শরীররক্ষক নিযুক্ত করেন। রামমোহন ও তার পুত্রগন প্রথমে রাকুদিয়া ও পরে উজিরপুরে বসতি স্থাপন করেন। রামমোহনের পুত্র কৃষ্ণজীবন রাজার নৌবাহিনীর প্রধান বা মীরবহর ছিলেন।

রামচন্দ্রকে তার শ্বশুর প্রতাপাদিত্য হত্যা করতে চাইলে যারা তাকে বাচিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রামমোহন মাল। প্রতাপাদিত্যের স্ত্রী শরৎকুমারী পুত্র উদয়াদিত্য ও কন্যা বিমলাকে রামচন্দ্রের জীবননাশের সংবাদ জানিয়ে দেন। বিমলা স্বামীকে তার প্রাণনাশের সংবাদ দেন। উদয়দিত্য, রাণী শরৎকুমারী ও রামমোহন মাল রামচন্দ্রের প্রাণরক্ষার জন্য প্রচেষ্টা চালান। প্রতাপাদিত্য রামচন্দ্র যাতে পালিয়ে না যেতে পারেন তার জন্য সমস্ত পথ বন্ধ করে দেন। উদয়াদিত্য সেদিন যশোরে নাচ দেখতে যাবার ভান করে রামচন্দ্রকে পালকির মশালধারী নিয়োগ করেন। রামমোহন মাল রামচন্দ্রকে ঘাড়ে করে রাজপ্রাসাদের দোতলা থেকে বিমলার সহায়তায় নিচে নামিয়ে আনেন। উয়াদিত্য ও তার বন্ধু সীতারাম রামচন্দ্র ও তার সাথীদের রাজবাড়ি হতে নৌকায় পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। ৬৪ দাঁড়ের নৌকায় আরোহণ করে রামচন্দ্র রাতের অন্ধকারে বাকলায় রওনা দেন। কিন্তু নদীতে বড় বড় গাছ ফেলে রাখা হয়েছে। রামমোহন মাল গাছের ওপর দিয়ে নৌকা টোনে যমুনা নদী অতিক্রম করে ভৈরব নদীতে পাড়ি দেন। নদীতে পড়ে রামচন্দ্রের সেনাপতি রঘুনন্দ ও নানা ফার্নান্ডেজ কামানের শব্দ করেন।

ভুলুয়ার লক্ষণ মাণিক্যের সাথে রামচন্দ্রের যে যুদ্ধ হয় সেখানেও রামমোহন মালের ভূমিকা ছিল স্মরনীয়। যুদ্ধ করতে করতে লক্ষ্মণ মানিক্য রামচন্দ্রের নৌকায় উঠে পড়েন এবং হঠাৎ পড়ে যান। রামমোহন মাল লক্ষণ মানিক্যকে শৃংখলাবদ্ধ করে ফেলেন। ভুলূয়ার বাহিনী পরাজয়বরণ করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়। রামচন্দ্র, মদন সিংহ, ফার্নান্ডেজ ও রামমোহন মাল লক্ষ্মন মানিক্যকে বন্দী করে বাকলায় নিয়ে আসেন।

সম্রাট আকবরের রাজত্বের ২৯ তম বছরে অর্থাৎ ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত যে ঘূর্ণিঝড়ে রাজা জগদানন্দ বসু নৌকা ডুবে মারা যান সেই ঝড়ে কন্দর্প নারায়ণের স্ত্রীকে রামমোহন মাল তার টিকির সাাথে বেঁধে মন্দিরে তুলে নিয়ে রক্ষা করেছিলেন। এভাবে তুলেছিলেন কারণ তিনি স্বেচ্ছায় প্রাণ বাচাতে মন্দিরে উঠতে চাননি।

এভাবেই রামমোহন মাল চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় পুরুষ।