রামমানিক মুদি

Barisalpedia থেকে

রামমানিক মুদি হলেন সেই বিখ্যাত ব্যক্তি যিনি ১৭৯৯ সালে চন্দ্রদ্বীপ পরগণার জমিদারি নিলামে উঠলে তা যে তিনজন ক্রয় করেছিলেন তাঁদের একজন। মূলত রামমানিক মাধবপাশা বাজারে চন্দ্রদ্বীপ রাজার খানাবাড়ীর মুদি ছিলেন। তিনি ১৭৯৯ খৃৃস্টাব্দে বাংলা ১২০৬ সালে চন্দ্রদ্বীপ পরগণার ॥১২॥ ক্রান্তি অংশ ক্রয় করেন।

খুব সম্ভব তিনি বেনামে রাজার পক্ষে জমিদারী ক্রয় করেছিলেন। তিনি সাহা জাতীয় কায়স্থ ছিলেন। জমিদারী ক্রয় করে তারা চৌধুরী উপাধি লাভ করেন। কিন্তু বরিশালে তারা মুদি বলেই আজো পরিচিত।


বংশতালিকা

রামমানিকের দুই পুত্র- রামকানাই ও বলরাম। রামকানাইয়ের পুত্র গুরুদাস, তদীয় পুত্র কালীকুমার, তদীয় পুত্র গোপাল ও গোবিন্দ। গোপালের পুত্র দ্বারকানাথ, রাধামাধব ও ব্রজনাথ। গোবিন্দের পুত্র প্যারীমোহন, তদীয় পুত্র শ্যামলাল রায়। আবার রামমানিকের পুত্র বলরামের পুত্র দীনবন্ধু, তদীয় পুত্র রাজকুমার, তদীয় পুত্র বিহারী লাল।

রাম মানিক ও তার ভ্রাতা রঘুনাথ, রাধা কৃষ্ণ ও শ্যাম নাথ রায় ও তাদের বংশধররা জমিদারী ভোগ করত। রামমানিকের কনিষ্ঠ ভ্রাতা শ্যামনাথ রায়ের পৌত্র রামচরণের অংশ নিলামে বিক্রি হলে একে ফজলুল হক ও চরামদ্দির মোহাম্মদ এসমাইল চৌধুরী /৫॥ কড়া ক্রয় করে।


রামমানিকের পরিবারের কীর্তি

মাধবপাশার রাজবাড়ির উত্তর-পূর্ব পাশে রাম মানিক সাহা চৌধুরীর বাড়ি। তার বাড়িতে কয়েকটি দোতলা দালান ও দেবমন্দির আছে। বাড়ির সম্মুখে সিংহদার ও দীঘি আছে। রামমানিকের কনিষ্ঠ ভ্রাতা শ্যামরায়ের স্ত্রী পার্বতী চৌধুরানী জনসাধারণের উপকারের জন্য মাধবপাশা হতে বরিশাল পর্যন্ত একটি রাস্তা নির্মাণ করেন। এ রাস্তার নাম ছিল পার্বতী চৌধুরানীর রাস্তা। এ রাস্তার ওপর দিয়ে বর্তমানে বানারীপাড়া-বরিশাল রাস্তা নির্মিত হয়েছে। পার্বতী রানী বৃন্দাবন নামে মন্দির নির্মাণ করেন, কালাচাঁদ নামে মূর্তি স্থাপন করেন। তিনি শেষজীবনে বৃন্দাবনে অতিবাহিত করে দেহ ত্যাগ করেন। মানিক সাহা কোতোয়ালি থানার সাহেবের হাট হতে নদী পর্যন্ত একটি খাল খনন করে। এ খালকে মানিকের ভারানী বলে।


অখ্যাতি

রামমানিক ও তার বংশধররা অনেক সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন, কিন্তু তারা কোনো দিন তাদের অখ্যাতি দূর করতে সমর্থ হয়নি। মি. বেভারিজ তাদের সম্পর্কে বলেছেন, “এখনও তাদের ঘৃণাভরে মুদি বংশ বলে এবং আমি এ কথা বলে দুঃখিত যে তাদের কয়েকজন ধনী হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের পূর্ব পুরুষের দুর্নাম দূর করার জন্য কিছুই করেনি। তারা প্রায় চন্দ্রদ্বীপ পরগণার অর্ধেকের মালিক ছিলেন। কিন্তু রাম মানিকের বংশধররা শিক্ষা বিস্তার ও জনকল্যাণের জন্য তেমন কোন স্বাক্ষর রেখে যেতে পারেননি। তাদের বাড়িতে অনেক সুরম্য অট্টালিকা আছে। ১৯৫০ খৃৃস্টাব্দে দাঙ্গার সময় শত শত হিন্দু পরিবার এ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল কিন্তু তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার তাদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হয় এবং একদল সাম্প্রদায়িক লোক মুদিবাড়ি আক্রমণ করে অনেককে হত্যা করে।”



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।