রাজবল্লভ

Barisalpedia থেকে

বাংলার ইতিহাসে বহুল আলোচিত ব্যক্তি রাজবল্লভ ফরিদপুর ও বরিশালের জমিদার ছিলেন।৩ তার কর্মক্ষেত্র ঢাকা ও মুর্শিদাবাদ হলেও তার অর্থনৈতিক প্রতিপত্তির প্রধান উৎস ছিল বরিশালের রাজস্ব। রাজবল্লভ ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার রাজনগরে ১৭০৭ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কৃষ্ণজীবন সেন। তার মাতা ছিলেন বশিালের উত্তর শাহাবাজপুর পরগণার জমিদার কন্যা। রাজবল্লভ বৈদ্য বংশীয়। প্রবাদ আছে তিনি প্রথম জীবনে মুর্শিদাবাদে মুহুরী ছিলেন। জনৈক নবাব কর্মচারীর সুনজরে পড়ে তিনি ঢাকার নৌবিভাগে কেরানির চাকরি লাভ করেন। রাজবল্লভের সাথে ঘসেটি বেগমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আগাবাকেরের হত্যার পর তিনি বুজুর্গ উমেদপুর ও সেলিমাবাদ পরগণার জমিদারী দখল করেন। তার দ্বিতীয় পুত্র কৃষ্ণদাস বরিশালের কৃষকদের উৎপীড়ন করে প্রচুর অর্থ সঞ্চয় করে। রাজবল্লভ তার জন্মভূমি বিলদাওনিয়া গ্রামে অনেক অট্ট্রালিকা ও মন্দির নির্মাণ করেন। তার নির্মিত গ্রাম রাজনগর নামে পরিচিত ছিল। ১৭৮৭ খ্রি. রাজনগর পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। এ জন্য পদ্মার আর এক নাম কীর্তিনাশা।

রাজবল্লভের তিন স্ত্রী ছিল। প্রথমা স্ত্রী শশীমুখীর গর্ভে রামদাশ, কৃষ্ণ দাশ, গঙ্গা দাশ, রতন দাশ, গোপাল দাশ, রাধা মোহন ও কেবলরাম জন্মগ্রহণ করেন। তার দুই কন্যা ছিল। কৃষ্ণবল্লভ বরিশালের বুজুর্গ উমেদপুর, সেলিমাবাদ ও অন্যান্য পরগণা থেকে আদায়কৃত রাজস্ব মুর্শিদাবাদে সিরাজউদ্দৌলার নিকট জমা না দিয়ে কলিকাতায় ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে আশ্রয় নেয়। সিরাজদ্দৌলা কোম্পানির গভর্নর ড্রেককে কৃষ্ণদাশকে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন। কোম্পানি এ নির্দেশ অমান্য করলে সিরাজউদ্দৌলা ১৭৫৭ খ্রিঃ কলিকাতা আক্রমণ করেন। রাজবল্লভ মীর জাফরের অন্যতম পরামর্শদাতা ছিলেন। পলাশী যুদ্ধে তিনি সিরাজউদ্দৌলার বিরোধিতা করেন। বস্তুত তিনি ছিলেন পলাশী প্রান্তরে সিরাজউদ্দৌলার ভাগ্য বিপর্যয়ের অন্যতম নায়ক। ১৭৬০ খ্রিঃ ৩০ অক্টোবর মীর কাশিম বাংলার নবাব হলে রাজবল্লভ পুনরায় ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। নবাব মীর কাশিম ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৭৬৩ খ্রিঃ রাজবল্লভ, কৃষ্ণ দাশ, জগৎশেঠ, মাহাতব চাঁদ, স্বরূপ চাঁদ ও রাম নারায়ণকে মুঙ্গের দুর্গের চূড়া থেকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করে হত্যা করেন। রাজবল্লভের মৃত্যুর পর তার পঞ্চম পুত্র গোপাল কৃষ্ণ নলছিটি বন্দরের নিকটে বিখ্যাত তারা মন্দির নির্মাণ করেন।৪ তিনি ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুলাই দেহ ত্যাগ করেন। তার পুত্র পীতম্বর সেন সুগন্ধা নদীর তীরে শাহজাদপুর পরগণার নল ও ছিটকি বন পরিষ্কার করে একটি বন্দর প্রতিষ্ঠা করেন। নল ও ছিটকি থেকে নাম হয় নলছিটি। ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ১২ তিনি এক পত্রে নলছিটি বন্দরের প্রতিষ্ঠাতা বলে দাবি করেন। তিনি শাহজাদপুর ও অন্যান্য পরগণার ভূমি পাট্টা নিয়ে এবং অনেক অর্থ ব্যয়ে নলছিটিতে একটি হাট নির্মাণ করেন। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পরে রাজবল্লভ বুজুর্গ উমেদপুর, শাহজাদার ও সেলিমাবাদ পরগণার একাংশের জমিদারীর পূর্ণ কর্তৃত্ব লাভ করেন। তিনি রাজস্ব আদায়ের জন্য কর্মচারী নিয়োগ করেন। কিন্তু আগাসাদেক ও বরিশালের কৃষকদের বিরোধিতার জন্য রাজবল্লভ রাজস্ব আদায় করতে ব্যর্থ হন। তাই তিনি গোয়া ও বা-েল হতে একদল পর্তুগীজ নিয়ে আসেন। পর্তুগীজরা রাজবল্লভের নিকট হতে ভূমি লাভ করে বাকেরগঞ্জের শিবপুর গ্রামে বসতি স্থাপন করে। পর্তুগীজ ধর্মযাজক বা পাদ্রীদের নামানুসারে শিবপুরের নাম হয় পাদ্রী শিবপুর।


তথ্য নির্দেশঃ

১। আগাবাকের, পৃষ্ঠা-৪২-৫০ ২। The District of Bakergainj, Page-138