"রহমতপুরের দেওয়ান/ চক্রবর্তী পরিবার"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
("রহমতপুরের দেওয়ান পরিবারের আদি পুরুষ রাম নারায়ণ চক্রবর..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
(রামভদ্রের কুখ্যাতি)
১৮ নং লাইন: ১৮ নং লাইন:
 
== রামভদ্রের কুখ্যাতি ==
 
== রামভদ্রের কুখ্যাতি ==
  
তার আদেশে কৃষকদের গরু ধরে এনে রহমতপুর খালের পশ্চিম পারে রাখা হতো বলে এ স্থানের নাম হয় গোশালা। গরুগুলো সুলভে বিক্রি হতো বলে রামভদ্র সম্বন্ধে একটি প্রবাদ আছে।৭
+
তার আদেশে কৃষকদের গরু ধরে এনে রহমতপুর খালের পশ্চিম পারে রাখা হতো বলে এ স্থানের নাম হয় গোশালা। গরুগুলো সুলভে বিক্রি হতো বলে রামভদ্র সম্বন্ধে একটি প্রবাদ আছে।
“তঙকাতে তিনটি গরু একটি তার ফাও
+
“তঙকাতে তিনটি গরু একটি তার ফাও/
কেন যে গরু রাম ভদ্রের কাছে যাও
+
কেন যে গরু রাম ভদ্রের কাছে যাও/
সরসরানী সরসরানী সরসরানী সর
+
সরসরানী সরসরানী সরসরানী সর/
 
রাজমন্ত্রী বেঁচে গরু শীঘ্র করে চল।”
 
রাজমন্ত্রী বেঁচে গরু শীঘ্র করে চল।”
 
  
 
== পরবর্তী দেওয়ানগণ ==
 
== পরবর্তী দেওয়ানগণ ==

০৫:০৯, ৯ জুন ২০১৮ তারিখের সংস্করণ

রহমতপুরের দেওয়ান পরিবারের আদি পুরুষ রাম নারায়ণ চক্রবর্তী ২৪ পরগণার কাঁচরাপাড়ার অধিবাসী। এই পরিবার চন্দ্রদ্বীপের রাজপরিবারের দেওয়ান হিসেবে বিখ্যাত ছিল। এই পরিবারের জমিদার চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী বরিশাল ফকিরবাড়ি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা বিখ্যাত সুফী শাহ করিম বক্সকে বরিশাল শহরে আটশত সাতান্ন একর নিষ্কর সম্পত্তি দান করেছিলেন।


রহমতপুরে বসতি

চন্দ্রদ্বীপের রাজা প্রতাপ নারায়ণ ও তার দেওয়ান সরাই আচার্য একবার গঙ্গা স্লানে যায় এবং সেখানে রাম নারায়ণ চক্রবর্তীর সাথে সাক্ষাৎ হয়। সরাই আচার্য তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। সরাই আচার্যের আমন্ত্রণে রামনারায়ণ চন্দ্রদ্বীপে চলে আসেন এবং রহমতপুরে বসতি স্থাপন করেন। একবার সরাই আচার্য গুরুতর অসুস্থ হলে রামনারায়ণ চক্রবর্তী তার পক্ষে নবাবের নিকট গমন করে জমিদারী রক্ষা করেন।

রহমতপুর চক্রবর্তীদের বংশ তালিকা

রাম নারায়ণ চক্রবর্তীর পুত্র রঘুদেব ও রামদেব। রামদেবের পুত্র রামভদ্র। রামভদ্রের পুত্র রামজীবন। রামজীবনের পুত্র চন্দ্রশেখর বা চন্দ্রকান্ত। চন্দ্রশেখরের পুত্র রাম দুলাল ও বাওয়ানী প্রসাদ। রাম দুলালের পুত্র বৈকুণ্ঠ ও দেবনাথ। বৈকুণ্ঠের পুত্র বরদাপ্রসন্ন ও সারদাপ্রসন্ন। বরদাপ্রসন্নের পুত্র সুরেন্দ্র, যোগেন্দ্র ও রাজেন্দ্র। সুরেন্দ্রের পুত্র কিরণ ও অরুণ।


রাজপরিবারের দেওয়ানি লাভ

সরাই আচার্যের মৃত্যুর পর রামনারায়ণ চক্রবর্তী চন্দ্রদ্বীপ রাজার দেওয়ান নিযুক্ত হন। ৩০ বছর দেওয়ানী করে রাম নারায়ণ প্রাণ ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র রঘুদেব ও রামদেব দেওয়ান নিযুক্ত হন। রামদেবের পুত্র রামভদ্র রানী দুর্গাবতীর সময় দেওয়ান ছিলেন। তিনি নিষ্ঠুরভাবে রাজস্ব আদায় করতেন।


রামভদ্রের কুখ্যাতি

তার আদেশে কৃষকদের গরু ধরে এনে রহমতপুর খালের পশ্চিম পারে রাখা হতো বলে এ স্থানের নাম হয় গোশালা। গরুগুলো সুলভে বিক্রি হতো বলে রামভদ্র সম্বন্ধে একটি প্রবাদ আছে। “তঙকাতে তিনটি গরু একটি তার ফাও/ কেন যে গরু রাম ভদ্রের কাছে যাও/ সরসরানী সরসরানী সরসরানী সর/ রাজমন্ত্রী বেঁচে গরু শীঘ্র করে চল।”

পরবর্তী দেওয়ানগণ

রামভদ্রের পর তার পুত্র রামজীবন দেওয়ান হন। রানী দুর্গাবতী সন্তুষ্ট হয়ে তাকে কয়েকটি তালুক প্রদান করেন। রামজীবন যক্ষ্মা রোগে মারা যান। তার পুত্র চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী বা চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী। প্রাপ্ত তালুকগুলোর মধ্যে ১৭২৯ নম্বর খারিজা তালুক চন্দ্রশেখর চক্রবর্তীর নামে বিখ্যাত। বিখ্যাত সুফী শাহ করিম বক্সকে জমিদার চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী বরিশাল শহরে আটশত সাতান্ন একর নিষ্কর সম্পত্তি দান করেন। এই সম্পত্তির বলে আঠারোশ সতেরো সালে শাহ করিম বক্স বরিশাল শহরের বর্তমান ফকিরবাড়ি এলাকায় তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি তৈরি করেন। বুজুর্গ উমেদপুর পরগণায় চন্দ্রশেখর বা চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তীর খারিজা তালুক ছিল। চন্দ্রশেখরের পুত্র রামদুলাল ও বাওয়ানী প্রসাদ। রামদুলালের পুত্র বৈকুণ্ঠ ও দেবনারায়ণ। বৈকুণ্ঠের পুত্র বরদা প্রসন্ন ও সারদা প্রসন্ন। বরদা প্রসন্ন চক্রবর্তীর পুত্র সুরেন্দ্র, যোগেন্দ্র ও রাজেন্দ্র চক্রবর্তী। সুরেন্দ্রের পুত্র কিরণ ও অরুণ।


ঐশ^র্য ও প্রতিপত্তি

চন্দ্রদ্বীপ রাজার দেওয়ানী কার্য করে এবং পরবর্তীকালে চক্রবর্তীরা প্রভুত ভূসম্পত্তি অর্জন করেন। তারা বরিশাল কালেক্টরেটের ১৭৫২, ১৭৫৩, ১৭৫৫, ২৬৯৮, ১৭২৯, ১৪৪৯ নম্বর তৌজির মালিক ছিলেন। রহমতপুরে তাদের দু’টি বাড়ি নতুন বাড়ি ও মাঝ বাড়ি। এ পরিবারের চন্দ্রশেখর, বাওয়ানী প্রসাদ, আনন্দমোহন, বরদা প্রসন্ন, সারদা চরণ, সুরেন্দ্রনাথ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। চক্রবর্তীদের বাড়িতে নবাবী ও কোম্পানি আমলের নির্মিত কয়েকটি দালান ও মন্দির ছিল। বর্তমানে নেই।


উপসংহার

১৯৮১ খৃৃস্টাব্দে নারিকেল গবেষণা কেন্দ্রের জন্য কয়েকটি দালান ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। প্রাচীন দালানগুলো সংরক্ষণ করা উচিত তছিল। বর্তমানে চক্রবর্তীদের বাড়ির কোন নিদর্শনই নেই। সমস্ত এলাকা নিয়ে নারিকেল বাগান। খালের তীরে কয়েকটি মন্দির দাঁড়িয়ে অতীতের স্মৃতি বহন করছে।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।