"রবীন্দ্রনাথ এবং বরিশাল"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
("কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে বরিশালের বাণিজ্যিক ও ব..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
(বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, বরিশাল শাখার সম্মেলন)
 
২২ নং লাইন: ২২ নং লাইন:
 
বরিশালের সাথে কবিগুরুর রক্তের সম্পর্ক থাকা সত্তে¡ও বরিশালবাসী তাকে সংবর্ধিত করতে ব্যর্থ হয়। বরিশালের সুসাহিত্যিক দেবকুমার রায় ছিলেন কবির একান্ত ভক্ত। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল বরিশালে কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সুযোগে দেবকুমার রায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ বরিশাল শাখার সম্মেলন আহবান করেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব ও অভিভাষণ প্রদান করবেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ সময় কবি আগরতলায় অবস্থান করছিলেন। ৮ এপ্রিল এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখেন, “ঘুরিয়া মরিতেছি, সম্প্রতি আগরতলায় আটকা পড়িয়া গেছি। বরিশাল যাইতে হবে....।”
 
বরিশালের সাথে কবিগুরুর রক্তের সম্পর্ক থাকা সত্তে¡ও বরিশালবাসী তাকে সংবর্ধিত করতে ব্যর্থ হয়। বরিশালের সুসাহিত্যিক দেবকুমার রায় ছিলেন কবির একান্ত ভক্ত। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল বরিশালে কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সুযোগে দেবকুমার রায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ বরিশাল শাখার সম্মেলন আহবান করেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব ও অভিভাষণ প্রদান করবেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ সময় কবি আগরতলায় অবস্থান করছিলেন। ৮ এপ্রিল এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখেন, “ঘুরিয়া মরিতেছি, সম্প্রতি আগরতলায় আটকা পড়িয়া গেছি। বরিশাল যাইতে হবে....।”
  
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল বরিশালে প্রাদেশিক সম্মেলন শুরু হবে। কিন্তুু সরকার নেতৃবৃন্দ ও জনতার ওপর পুলিশী নির্যাতন চালায়। সম্মেলন ভেঙ্গে পড়ে। করিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আগরতলা হতে রওনা হয়ে ২ বৈশাখ ১৩১৩ সনে, ১৫ এপ্রিল ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে রবিবার  দুপুরে জলপথে বরিশাল পৌছেন। বরিশালে তখন কংগ্রেসের  সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। এ সংবাদ পেয়ে রবীন্দ্রনাথ শহরে প্রবেশ না করে বরিশাল ভাটার খালের কাছে বজরাতে অবস্থান করতে থাকেন। সাহিত্য সম্মেলন কংগ্রেসের ওপর হামলার করণে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তিনি কোন ঝামেলায় না জড়িয়ে বোলপুরে ফিরে যাওয়ার সিন্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেদিন সন্ধ্যায় সাহিত্য সম্মেলনের উদ্যোক্তা দেব কুমার রায় চৌধুরী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বজরায় এসে কবির সাথে আলোচনা করেন। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার পরিবেশ না থাকায় তাঁরা ব্যথিত হন। সম্মেলন বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিন সকালে কবি বরিশাল ত্যাগ করেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল “ঞযব ইবহমধষবব” পত্রিকায় লিখেছে : ইধনঁ জধনরহফৎধহধঃয ঞধমড়ৎব ৎবধপযবফ যবৎব ষধংঃ হড়ড়হ ধহফ ষবভঃ ঃযরং সড়ৎহরহম. ঞযব ষরঃবৎধৎু পড়হভবৎবহপব যধং নববহ মরাবহ ঁঢ়”. কবি ১৬ এপ্রিল রওনা দিয়ে ১৭ এপ্রিল শান্তিনিকেতনে পৌঁছেন । এভাবে বরিশালবাসী কবিদর্শনে বঞ্চিত হলো।
+
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল বরিশালে প্রাদেশিক সম্মেলন শুরু হবে। কিন্তুু সরকার নেতৃবৃন্দ ও জনতার ওপর পুলিশী নির্যাতন চালায়। সম্মেলন ভেঙ্গে পড়ে। করিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আগরতলা হতে রওনা হয়ে ২ বৈশাখ ১৩১৩ সনে, ১৫ এপ্রিল ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে রবিবার  দুপুরে জলপথে বরিশাল পৌছেন। বরিশালে তখন কংগ্রেসের  সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। এ সংবাদ পেয়ে রবীন্দ্রনাথ শহরে প্রবেশ না করে বরিশাল ভাটার খালের কাছে বজরাতে অবস্থান করতে থাকেন। সাহিত্য সম্মেলন কংগ্রেসের ওপর হামলার করণে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তিনি কোন ঝামেলায় না জড়িয়ে বোলপুরে ফিরে যাওয়ার সিন্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেদিন সন্ধ্যায় সাহিত্য সম্মেলনের উদ্যোক্তা দেব কুমার রায় চৌধুরী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বজরায় এসে কবির সাথে আলোচনা করেন। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার পরিবেশ না থাকায় তাঁরা ব্যথিত হন। সম্মেলন বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিন সকালে কবি বরিশাল ত্যাগ করেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল “The Bengalee” পত্রিকায় লিখেছে : Babu Rabindranath Tagore reached here last noon and left this morning. The literary conference has been given up”. কবি ১৬ এপ্রিল রওনা দিয়ে ১৭ এপ্রিল শান্তিনিকেতনে পৌঁছেন । এভাবে বরিশালবাসী কবিদর্শনে বঞ্চিত হলো।
  
 
বরিশাল রবীন্দ্রনাথের জীবনে অনেক দিক থেকে অপয়া গলেও তিনি চন্দ্রদ্বীপ রাজা রামচন্দ্র রায়ের স্ত্রী বিভাবতী বা বিমলাকে নিয়ে বিখ্যাত উপন্যাস বৌ ঠাকুরানীর হাট’ রচনা করেন।  
 
বরিশাল রবীন্দ্রনাথের জীবনে অনেক দিক থেকে অপয়া গলেও তিনি চন্দ্রদ্বীপ রাজা রামচন্দ্র রায়ের স্ত্রী বিভাবতী বা বিমলাকে নিয়ে বিখ্যাত উপন্যাস বৌ ঠাকুরানীর হাট’ রচনা করেন।  

০৯:৪৪, ১১ জুলাই ২০২০ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে বরিশালের বাণিজ্যিক ও বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল।


বাণিজ্যিক সম্পর্ক

বরিশালে তার আখের মাড়াই কল ছিল। এ ব্যবসায় লাভজনক না হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ এক পত্রে লিখেছেন: “বরিশালের আখের কলের কাজ সম্পর্কে টাকা বা খবর না পাইয়া উদ্বিগ্ন হইয়া মোকাম পরিদর্শক নগেন্দ্রকে পাঠাইয়াছি। যে রিপোর্ট পাইতেছি তাহাতে উদ্বেগের কারণ বাড়িয়া উঠিতেছে।” বরিশালের দুষ্ট লোকেরা অর্থ আতœসাৎ করেছে এবং স্থানীয় কর্মচারী সঠিক হিসাব দেখায়নি। করিগুরু একদিকে কন্যা মীরাকে বরিশালে বিয়ে দিয়ে তিনি আঘাত পেয়েছেন, অন্যদিকে বরিশালের একদল সন্ত্রাসী তার আখ মাড়াই কলের ব্যবসা ধ্বংস করেছে। বরিশালের ইদিলপুর পরগণায় কলকাতার ঠাকুর ষ্টেটের জমিদারী ছিল। এ জমিদারিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অংশ ছিল।


বৈবাহিক সম্পর্ক

লাখুটিয়ার জমিদার রাখাল চন্দ্র রায়ের এক পুত্র দেবকুমার রায় এবং দুই কন্যা সুশীলা ও চারুশীলা। রবীন্দ্রনাথের বড় ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই পুত্র দ্বীপেন্দ্রনাথ ও অরুণেন্দ্রনাথ যথাক্রমে রাখাল রায়ের কন্যা সুশীলা ও চারুশীলাকে বিয়ে করেন।

বরিশালের ব্রাহ্ম সমাজের নেতা বরিশাল সদর হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা শ্রী বামুন দাশ গাঙ্গুলীর পুত্র নগেন্দ্র গাঙ্গুলীর সাথে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠা কন্যা ১৪ বছর বয়স্কা মীরা দেবীর বিয়ে হয়। কিন্তু এ বিয়ে সুখের হয়নি। জামাতা ছিলেন যৌতুকলোভী। বিয়ের পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কন্যা ও জামাতাসহ বরিশালে ১৩১৪ সনের ২৮ জ্যেষ্ঠ আগমন করেন। বরিশালে তিনি এক সপ্তাহ ছিলেন এবং স্থানীয় গুণীজনের সাথে বরিশালে সাহিত্য পরিষদ শাখা খোলার আলোচনা করেন। বিয়ের শর্তানুযায়ী ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জামাতাকে উচ্চশিক্ষার্থে আমেরিকায় প্রেরণ করেন।

নগেন্দ্রনাথ দেশে ফিরে এলে কবিগুরু তাকে চাকরি দেন এবং পরিবারকে ঋণমুক্ত করেন। এতদ্সত্তে¡ও বরিশালের কুলাঙ্গার নগেন্দ্রনাথ স্ত্রী মীরা ও সন্তানদের ফেলে বিদেশে পাড়ি দেয় এবং সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করে। ১৯২০ সালে নগেন্দ্রনাথের সাথে মীরার দাম্পত্য জীবনের অবসান হয়। কবিগুরু ভীষণ আঘাত পান এবং তাঁর পুত্রের নিকট এক পত্রে আক্ষেপ করে বলেছেন, “ওর (মীরার) জীবনের প্রথম দÐতো আমিই ওকে দিয়েছি। ভাল করে না ভেবে না বুঝে আমিই ওর বিয়ে দিয়েছি।” ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মীরা দেবীর মৃত্যু হয়। মীরা দেবী দু’সন্তানের জননী ছিলেন। তাদের একমাত্র মেয়ে ছিলেন নন্দিতা গাঙ্গুলী।


বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, বরিশাল শাখার সম্মেলন

বরিশালের সাথে কবিগুরুর রক্তের সম্পর্ক থাকা সত্তে¡ও বরিশালবাসী তাকে সংবর্ধিত করতে ব্যর্থ হয়। বরিশালের সুসাহিত্যিক দেবকুমার রায় ছিলেন কবির একান্ত ভক্ত। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল বরিশালে কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সুযোগে দেবকুমার রায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ বরিশাল শাখার সম্মেলন আহবান করেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব ও অভিভাষণ প্রদান করবেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ সময় কবি আগরতলায় অবস্থান করছিলেন। ৮ এপ্রিল এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখেন, “ঘুরিয়া মরিতেছি, সম্প্রতি আগরতলায় আটকা পড়িয়া গেছি। বরিশাল যাইতে হবে....।”

১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল বরিশালে প্রাদেশিক সম্মেলন শুরু হবে। কিন্তুু সরকার নেতৃবৃন্দ ও জনতার ওপর পুলিশী নির্যাতন চালায়। সম্মেলন ভেঙ্গে পড়ে। করিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আগরতলা হতে রওনা হয়ে ২ বৈশাখ ১৩১৩ সনে, ১৫ এপ্রিল ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে রবিবার দুপুরে জলপথে বরিশাল পৌছেন। বরিশালে তখন কংগ্রেসের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। এ সংবাদ পেয়ে রবীন্দ্রনাথ শহরে প্রবেশ না করে বরিশাল ভাটার খালের কাছে বজরাতে অবস্থান করতে থাকেন। সাহিত্য সম্মেলন কংগ্রেসের ওপর হামলার করণে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তিনি কোন ঝামেলায় না জড়িয়ে বোলপুরে ফিরে যাওয়ার সিন্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেদিন সন্ধ্যায় সাহিত্য সম্মেলনের উদ্যোক্তা দেব কুমার রায় চৌধুরী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বজরায় এসে কবির সাথে আলোচনা করেন। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার পরিবেশ না থাকায় তাঁরা ব্যথিত হন। সম্মেলন বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিন সকালে কবি বরিশাল ত্যাগ করেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল “The Bengalee” পত্রিকায় লিখেছে : Babu Rabindranath Tagore reached here last noon and left this morning. The literary conference has been given up”. কবি ১৬ এপ্রিল রওনা দিয়ে ১৭ এপ্রিল শান্তিনিকেতনে পৌঁছেন । এভাবে বরিশালবাসী কবিদর্শনে বঞ্চিত হলো।

বরিশাল রবীন্দ্রনাথের জীবনে অনেক দিক থেকে অপয়া গলেও তিনি চন্দ্রদ্বীপ রাজা রামচন্দ্র রায়ের স্ত্রী বিভাবতী বা বিমলাকে নিয়ে বিখ্যাত উপন্যাস বৌ ঠাকুরানীর হাট’ রচনা করেন।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (প্রথম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০