মোহাম্মদ কাসেম

Barisalpedia থেকে

মোহাম্মদ কাসেম একজন বিস্মৃত গুণী লেখক। ১৯১৬ সালে বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া ইউনিয়নের নয়াখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বিভিন্ন বিখ্যাত পত্রিকায় লিখেছেন ও সাংবাদিকতা করেছেন।


শিক্ষা ও কর্মজীবন

মোহাম্মদ কাসেম ভোলা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে উলা পাশ করেন এবং পাতারহাট মুসলিম হাইস্কুল থেকে এনস্ট্রান্স পাশ করেন। ব্রিটিশ শাসনামলে তিনি কলকাতা গমন করেন এবং সেখানে পার্ক-সারকাস হাইস্কুলে হেড মৌলভী হিসেবে শিক্ষকতা আরম্ভ করেন। ১৯৪৩ সালে কলকাতায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় যোগদান করেন। সেখানে তিনি ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সাংবাদিকতা করেন। এরপর তিনি দেশবিভাগ সংক্রান্ত কারণে ঢাকায় চলে আসেন এবং ১৯৪৯ সালে নতুন দিন নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন সামরিক সরকার কাগজটি বন্ধ করে দেয়। তখন তিনি তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। স্বাধীনতার পর শেখ ফজলুল হক মণি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দৈনিক বাংলার বাণী কাগজে প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পরে তিনি ওই চাকুরী ছেড়ে দেন। এরপর তিনি বাংলা একাডেমি ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ এবং মৌলিক লেখার কাজে মনোনিবেশ করেন।


সাহিত্যকর্ম

মোহাম্মদ কাসেমের প্রথম উপন্যাস শতাব্দীর অভিশাপ প্রকাশিত হয় ব্রিটিশ আমলে। এজন্য ১৯৫২ সালে পূর্ব-পাকিস্তান সরকার তাকে পুরস্কৃত করে। তিনি বিখ্যাত আরবি লেখক ইবনে খালদুনের গ্রন্থ আলমুকাদ্দিমা বাংলায় অনুবাদ করেন। এছাড়াও তার অনেক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: শতাব্দীর অভিশাপ, ফিনিসিয়া থেকে ফিলিপাইন, বিষমক্রান্তি, রূপকথার সোনার গাঁ, ইতিহাসের অজানা গল্প, বাংলাদেশ: জাতি ও সংস্কৃতি, সবুজ বনে দাবানল ইত্যাদি।


পারিবারিক জীবন

তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ২০০১ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আনামও ইতোমধ্যে পরলোক গমন করেছেন। তার মেজছেলে ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল আনাম অবসর জীবন যাপন করছেন। তিনি বাংলাদেশ লায়ন্সের প্রাক্তন গভর্নর ও ঢাকাস্থ মেহেন্দিগঞ্জ সমিতির প্রাক্তন সভাপতি। তার কনিষ্ঠ পুত্র ডঃ মাহাবুব আলম কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মোহাম্মদ কাসেমের ৫ মেয়েই উচ্চশিক্ষিত। বড় মেয়ে শিরিন জাহান গৃহিণী, মেজমেয়ে বিলকিস খান অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্কার, ৩য় মেয়ে লায়লা ইয়াফির বস্ত্রদপ্তরে উপপরিচালক পদে আছেন, ৪র্থ মেয়ে লায়লা ইয়াসমিন একজন সিনিয়র শিক্ষক এবং ৫ম মেয়ে জেসমিন কাসেম একজন গৃহিণী।


মৃত্যু

মোহাম্মদ কাসেম ১৯৯৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৮১ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে মেহেন্দিগঞ্জের নয়াখালী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রেখে গেছেন।



তথ্যসূত্র: লেখকের বিভিন্ন গ্রন্থের লেখক পরিচিতি ও সন্তানদের সাক্ষাৎকার। গ্রন্থনা: মাহমুদ মিটুল