মোজাম্মেল হক, মোহাম্মদ

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৩:১২, ১৪ জুন ২০১৬ পর্যন্ত সংস্করণে (সাংগঠনিক কর্মকান্ড)

এক সময়ে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদের চিফ হুইপ কবি মোজাম্মেল হক বিশেষ করে ‘জাতীয় মঙ্গল’-এর কবি হিসেবে খ্যাত। তাঁর পিতার নাম মুন্সী আবদুল করিম। জন্ম: ৬ সেপ্টেম্বর ১৮৮৩ সাল। মৃত্যু: ১ আগষ্ট ১৯৭৬ সাল। গ্রাম: বাপ্তা, থানা: ভোলা সদর, জেলা: ভোলা।


পরিচিতি

‘জাতীয় মঙ্গল’-এর কবি মোজাম্মেল হক ১৯১২ সালে কোলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট। সাহিত্য সৃষ্টির চেয়ে সাহিত্যিক সৃষ্টির দিকে তিনি ছিলেন বেশি যতœবান, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির তিনি ছিলেন মূল সংগঠক। তাঁর হাতে বিশ্বখ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। বিচরককে ‘মাই লর্ড’ বলার শেরেকি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তিনি আইন পেশা ত্যাগ করেন। ১৯০৯ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘জাতীয় মঙ্গল’ প্রকাশিত হলে তা সুধীমহলে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। শান্তিপুর নিবাসী মোজাম্মেল হক নামে আরেকজন খ্যাতনামা কবি থাকায় তিনি তাঁর আলোড়ন সৃষ্টিকারী কাব্যগ্রন্থের নাম সহযোগে ‘জাতীয় মঙ্গল’-এর কবি মোজাম্মেল হক নামে পরিচিতি লাভ করেন। মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর প্যান ইসলামিজমের চেতনায় উজ্জীবিত কবি মোজাম্মেল হক একের পর এক রচনা লিখতে থাকনে। সমাজ মঙ্গল, মানব মঙ্গল, উত্থান সংগীত ও কোরানের কাব্যানুবাদ প্রভৃতি তাঁর রচিত গ্রন্থ। তিনি সমকালীন অবহেলিত ঘুমন্ত মুসলিম জাতিকে জাগিয়ে তোলার জন্য গেয়ে উঠেন-

“আর কবে তুমি উঠিবে ভাই?

সকাল উঠেছে, সকলি জেগেছে

জাগিতে কি তব বাসনা নাই?

আর কবে তুমি উঠিবে ভাই?”


সাংগঠনিক কর্মকান্ড

নিজ কাব্য রচনায় ব্যস্ত না থেকে তিনি আরও কবি-সাহিত্যিকদের তৈরীতে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় মনোযোগ দেন। ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের’ আদলে তিনি গড়ে তোলেন ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি’ এবং ১৯২১ সাল থেকে প্রকাশ করতে থাকেন সমিতির ত্রৈমাসিক মুখপত্র ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি পত্রিকা’। প্রথমদিকে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর সম্পাদনা করলেও তাঁর অবর্তমানে মোজাম্মেল হক একটানা পাঁচ বছর এ সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এ সময়েই করাচী থেকে কবি নজরুল প্রেরিত ‘ক্ষমা’ নামে কবিতাটি এ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ পায়। ১৯২৬ সালে বাঙালী পল্টন ভেঙ্গে দিলে কবি নজরুল এই সমিতি এবং পত্রিকা অফিসেই এসে ওঠেন। এ পত্রিকার মাধ্যমেই আমাদের জাতীয় সাহিত্যের অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান লেখকগণ জেগে ওঠেন।

১৯২১ সালে কবি মোজাম্মেল হক প্রতিষ্ঠা করেন ‘দি ওরিয়েন্টাল প্রিন্টার্স এন্ড পাবলিশার্স’ নামের প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান। কাজী নজরুল ইসলামসহ বিশিষ্ট লেখকদের ৩২টি মূল্যবান বই এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি প্রকাশ করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি কৃষক প্রজা পার্টির মনোনয়নে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যপদ লাভ করেন এবং চীফ হুইপের দায়িত্ব পালনসহ ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। তিনি আইন পরিষদে ইংরেজীর পরিবর্তে বাংলা ভাষায় বক্তব্য দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৪৭ সালে সিলেট রেফারেন্ডামে অংশ গ্রহণ করেন। সমাজ সেবার মানসে ১৯১৮ সালে কলিকাতায় তিনি খাদেমুল ইসলাম নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং বরিশাল মুসলিম ছাত্র সমিতিও তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত।

মৃত্যু

১ আগষ্ট ১৯৭৬ তারিখে এই কবি ও সমাজসেবক মৃত্যু বরণ করেন।


তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।