মেহেরুন্নেছা

Barisalpedia থেকে

মেহেরুন্নেছা। মতান্তরে মেহেরুন্নিসা খানম। ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধের এক ধনাঢ্য দানশীল বিদ্যোৎসাহী নারী। জন্মস্থান বর্তমান রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রাম। জন্ম: ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগ। মেহেরুন্নেছার দাদা এনায়েতুল্লাহ ও শেরে বাংলার মা সৈয়দুন্নেছার নানা শরফউল্লাহ আপন ভাই ছিলেন। ফলত মেহেরুন্নেছা শেরেবাংলার খালা সম্পর্কের ছিলেন।

জন্ম ও পরিচয়

মেহেরুন্নেছার পিতা আব্দুল আজিজ মনসুর মিয়া। পিতামহ: এনায়েত উল্লাহ। প্রপিতামহ: নাজিম উল্লাহ। প্রপিতামহের পিতা: শেখ শাহাবুদ্দিন। স্বামী: গফুর মিয়া। স্বামী গফুর মিয়া ছিলেন মেহেরুন্নেছার দাদা এনায়েত উল্লাহর ভাই দ্রাজাতুল্লাহর (দারাজাতুল্লাহ) পুত্র। ফলত গফুর মিয়া ছিলেন তার চাচাত চাচা সম্পর্কের। স্বামীর মৃত্যুতে মেহেরুন্নেছা স্বামীর সম্পত্তি ও পিতার সম্পত্তির যোগফল রূপে বিশাল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তির মালিক হন।


খ্যাতি ও কীর্তি

মেহেরেুন্নেসার জনহিতৈষণা ও প্রতিপত্তির কথা রোহিনীকুমার সেন তাঁর বাকলা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন- “বর্তমান সময়ে বিবি মেহেরুন্নেছা খাতুনের নাম বিশেষ বহু লোকের আশীর্বাদের পাত্র হইয়াছেন। ইহার যত্নে ও অর্থব্যয়ে সাতুরিয়ায় পোস্টাফিস, স্কুল ও দাতব্য চিকিৎসালয় প্রভৃতি স্থাপিত হইয়াছে” (দে’জ পাবলিশিং প্রকাশিত বৃহত্তর বাকরগঞ্জের ইতিহাস ১৬৮)। পরিমাণে ইহা মাত্র দুটি বাক্য হলেও ইহা একটি বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থের উদ্ধৃতি যা প্রমাণ করে যে মেহেরুন্নেছা হলেন রাজাপুরের সেই বিখ্যাত মহীয়সী নারী যিনি ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে রাজাপুরে প্রথম স্কুল, পোস্ট অফিস এবং দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেছিলেন। এছাড়াও বরিশাল শহরের সদর হাসপাতাল, শহরের বি.এম স্কুলের পশ্চিম পার্শ্বের প্রথম মুসলিম গোরস্থান, পরবর্তী সময়ে স্থানান্তরিত মুসলিম গোরস্থানের আদি অংশ এবং বগুড়া রোডস্থ এপিফানী চার্চের জন্য তিনি জমি দান করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে এবিষয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। ভিন্নমতাবলম্বীরা বলছেন যে, বরিশাল শহরে এই দানগুলো যে মেহেরুন্নেছা করেছেন তিনি সাতুরিয়া মিয়া পরিবারের মেহেরুন্নেছা নন। তিনি ছিলেন ঢাকার নবাব পরিবারের েএক কন্যা মেহেরুন্নেছা যার বিয়ে হয়েছিল একজন স্কুল ইনস্পেক্টরের সাথে। সেই স্কুল ইনস্পেক্টর স্বামীর সাথে তিনি বরিশালে বাস করেছেন এবং পৈতৃকসেূত্রে প্রাপ্ত জমি থেকে বরিশালে সদর হাসপাতাল, মুসলিম গোস্তান ও বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন পার্কে জমিদান করেছিলেন।

জনাব পল্টু উল্লেখ করেছেন যে রাজাপুরের মেহেরুন্নেছার উদ্যোগে সাতুরিয়ায় সাহেবের রাস্তা নামে একটি রাস্তা নির্মিত হয়েছিল (৫৮)। অবশ্য জনাব পল্টু বিষয়টির কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করেন নি। তবে পুরো ঘটনাটি রাজাপুরবাসীকে এই দুর্লভ গৌরব উপহার দেয় যে রাজাপুরের প্রথম স্কুল, পোস্ট অফিস এবং দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপিত হয়েছে একজন নারী কর্তৃক। এই মহীয়সী নারী সাতুরিয়ার মিঞা বংশের প্রতিপত্তি ও তালুক বৃদ্ধিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তার সময়ে সাড়ে সাত হাজার বিঘার তালুক পূর্বতন তালুকদারির সাথে যোগ হয় বলে রেজাউল কবীর পল্টুর বক্তব্য থেকে অনুমিত হয় (৫৬)। এই মহীয়সী নারীর প্রতিপত্তির কথা আরো স্পষ্ট হয় এই ঘটনার মধ্য দিয়ে যে তিনি তার মেয়ে শামসুন্নেসাকে বিয়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণ বঙ্গের সবচেয়ে বিখ্যাত মুসলিম জমিদার পরিবার অর্থাৎ শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারের সন্তান সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ চৌধুরী ওরফে নওশীন মিয়ার সাথে। সাতুরিয়ার মিঞা বংশের এই মহীয়সী নারীর স্মৃতিতে পরবর্তীতে শেরে বাংলার সহযোগিতায় ও জলিল মিঞা, আজাহার মিয়া ও আক্তার মিয়ার উদ্যোগে ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সাতুরিয়া মেহেরুন্নেছা মেমোরিয়াল (এম. এম.) উচ্চ বিদ্যালয় যা সাধারণভাবে সাতুরিয়া হাইস্কুল নামে পরিচিত।


তথ্যসূত্র: মুহম্মদ মুহসিন। চরিতাভিধান: রাজাপুরের গুণী ও বিশিষ্টজন। নালন্দালোক, ঢাকা। ২০১০।