"মেজর এম এ জলিল"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
("মেজর এম এ জলিল ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি উজিরপুর থানা সদরে..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
(শিক্ষাজীবন ও প্রারম্ভিক কর্মজীবন)
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ২টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
মেজর এম এ জলিল ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি উজিরপুর থানা সদরে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলী মিয়া, মাতা রাবেয়া খাতুন। জন্মের তিন মাস পূর্বে পিতার মৃত্যু হয়। ১৯৬০ সালে উজিরপুর ডব্লিউ.বি. ইনস্টিটিউশন থেকে মেট্রিক পাস করে ১৯৬১ সালে ইয়ং ক্যাডেটে ভর্তি হয়ে রাওয়ালপিন্ডির মারীতে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬৫ সালে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭০ সালে ট্যাংক ডিভিশনে দায়িত্ব পালন করে মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ মাকে দেখার জন্য এক মাসের ছুটিতে আসেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন এবং বরিশাল অঞ্চলের ডিফেন্স চিফ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে তাকে নবম সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত করে। খুলনা বরিশাল সীমান্তে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বীরত্বের পরিচয় দেন। তাঁর নেতৃত্বে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী শত্রুমুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর বরিশালে তাকে সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়। ২১ ডিসেম্বর তিনি হেমায়েতউদ্দিন মাঠে জনসভায় ভাষণ দেন। মেজর মঞ্জুরের চক্রান্তের শিকার হয়ে ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি যশোরে গ্রেফতার হন। ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই মুক্তি লাভ করেন। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে বরিশালে ৫টি আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ১৯৭৫ সালের ২৩ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের সাথে গ্রেফতার হন, বিচারে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। ১৯৮০ সালে ২৬ মার্চ মুক্তি লাভ করেন। ১৯৮২ সালের আগস্ট মাসে তিনি টাঙ্গাইলের সায়মা আখতারকে বিয়ে করেন। তাদের দুই কন্যা সারাহ ও ফারাহ। সারাহ ব্যারিস্টার, আইন পেশায় নিয়োজিত। ১৯৮৪ সালের ৩ নভেম্বর জাসদ ত্যাগ করে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন দল গঠন করেন। ১৯৮৮ সালে ১৫ নভেম্বর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ২২ নভেম্বর তাকে মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
+
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় নাম ৯ম সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল। ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি উজিরপুর থানা সদরে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলী চৌধুরী, মাতা রাবেয়া খাতুন। মেজর এম এ জলিলের মৃত্যু তারিখ ১৯৮৮ সালে ১৫ নভেম্বর।
মেজর জলিল একজন শক্তিশালী  লেখক ছিলেন। তাঁর লেখা গ্রন্থসমূহ: সীমাহীন সমর, মার্কসবাদ, সূর্যোদয়, কৈফিয়ত ও কিছু কথা, দাবী আন্দোলন দায়িত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবন দর্শন, অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা, অ ঝবধৎপয ঋড়ৎ ওহফবহঃরঃু.
+
 
 +
[[চিত্র:মেজর_জলিল.jpg]]
 +
 
 +
== শিক্ষাজীবন ও প্রারম্ভিক কর্মজীবন ==
 +
 
 +
জন্মের তিন মাস পূর্বে এম এ জলিলের পিতার মৃত্যু হয়। ১৯৬০ সালে উজিরপুর ডব্লিউ.বি. ইনস্টিটিউশন থেকে মেট্রিক পাস করে ১৯৬১ সালে ইয়ং ক্যাডেটে ভর্তি হয়ে রাওয়ালপিন্ডির মারীতে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬৫ সালে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭০ সালে ট্যাংক ডিভিশনে দায়িত্ব পালন করে মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
 +
 
 +
== মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা ==
 +
 
 +
১৯৭১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ মাকে দেখার জন্য এক মাসের ছুটিতে আসেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন এবং বরিশাল অঞ্চলের ডিফেন্স চিফ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে তাকে নবম সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত করে।  ৭ এপ্রিল ’৭১ সালে খুলনা বেতার কেন্দ্র মুক্ত করতে এক ঝটিকা অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ২৫ শে এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল মুক্ত অঞ্চল ছিল।২৬ শে এপ্রিল পাক বাহিনী বরিশাল ও ২৭ শে এপ্রিল পটুয়াখালী দখল করে নেয়। এরপর অস্ত্র সংগ্রহের জন্য তিনিসহ বরিশালের অধিকাংশ সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা কর্মী মুক্তিযোদ্ধাগণ চলে যান ভারতে। প্রথমে ভারতের হাসনাবাদে পরে টাকিতে তিনি গড়ে তোলেন ৯নং সেক্টর হেড কোয়াটার। বৃহত্তর বরিশাল, পটুয়াখালি, খুলনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও যশোরের কিছু অংশ নিয়ে ঘোষিত হল নবম সেক্টর। নবম সেক্টরকে পাঁচটি সাব-সেক্টরে বিভক্ত করা হল। এগুলো ছিল- সাতক্ষীরা, খুলনা, সুন্দরবন, বরিশাল ও পটুয়াখালী। তার সেক্টরের অধীনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি গড়ে তোলেন এগারটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রবাসী সরকার ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় মেজর জলিলের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠল ৮০ হাজার সদস্য নিয়ে বিরাট মুক্তিবাহিনী। ৯নং সেক্টর হেড কোয়াটার টাকিতে বসেই তিনি বেশীর ভাগ গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করতেন।
 +
 
 +
১৯৭১ সালের ৭ই জুলাই তার উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু স্কোয়াড নামে স্বাধীন সরকারের প্রথম নৌবাহিনী গঠিত হয়। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাগণ সাতক্ষীরা, খুলনা ও বরিশালের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান বাহিনীর সাথে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধে জয়লাভ করেন। ৩২ বছরের যুবক সেক্টর কমান্ডার মেজর এম. এ. জলিলের বীরত্বপূর্ণ সফলতা বিবিসি ও সংবাদপত্রে প্রশংসিত হয়। ৭ই ডিসেম্বর তার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরা মুক্ত করে ৮ই ডিসেম্বর বরিশাল ও পটুয়াখালী মুক্ত হয়। ১৭ই ডিসেম্বর মিত্র বাহিনী নিয়ে বিজয় বেশে তিনি খুলনা শহরে প্রবেশ করেন। পাকবাহিনীর অধিনায়ক ব্রিগ্রেডিয়ার হায়াত খান ৮ হাজার সৈন্য নিয়ে খুলনা সার্কিট হাউজে মেজর এম. এ. জলিল ও মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক লেঃ জেনারেল বলবীর সিং এর নিকট আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর বরিশালে তাকে সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়। ২১ ডিসেম্বর তিনি হেমায়েতউদ্দিন মাঠে জনসভায় ভাষণ দেন।  
 +
 
 +
== রাজনৈতিক জীবন ==
 +
 
 +
এরপর ভাগ্যের পরিহাসে চক্রান্তের শিকার হয়ে ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি যশোরে মুক্তিবাহিনীর লোকের হাতে গ্রেফতার হন। ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই মুক্তি লাভ করেন। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে বরিশালে ৫টি আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ১৯৭৫ সালের ২৩ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের সাথে গ্রেফতার হন, বিচারে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। ১৯৮০ সালে ২৬ মার্চ মুক্তি লাভ করেন। ১৯৮২ সালের আগস্ট মাসে তিনি টাঙ্গাইলের সায়মা আখতারকে বিয়ে করেন। তাদের দুই কন্যা সারাহ ও ফারাহ। সারাহ ব্যারিস্টার, আইন পেশায় নিয়োজিত। ১৯৮৪ সালের ৩ নভেম্বর জাসদ ত্যাগ করে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন দল গঠন করেন।  
 +
 
 +
== মৃত্যু ==
 +
 
 +
১৯৮৮ সালে ১৫ নভেম্বর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ২২ নভেম্বর তাকে মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
 +
 
 +
== গ্রন্থাবলী ==
 +
 
 +
মেজর জলিল একজন শক্তিশালী  লেখক ছিলেন। তাঁর লেখা গ্রন্থসমূহ: সীমাহীন সমর, মার্কসবাদ, সূর্যোদয়, কৈফিয়ত ও কিছু কথা, দাবী আন্দোলন দায়িত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবন দর্শন, অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা, A Search for Identity.
 
সকল সেক্টর কমান্ডারগণকে বীরউত্তম পদক দেয়া হয়েছে, একমাত্র ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিলই  বঞ্চিত জন।  
 
সকল সেক্টর কমান্ডারগণকে বীরউত্তম পদক দেয়া হয়েছে, একমাত্র ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিলই  বঞ্চিত জন।  
  
 
----
 
----
 
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।
 
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।

০১:৫৪, ২৩ মার্চ ২০২০ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় নাম ৯ম সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল। ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি উজিরপুর থানা সদরে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলী চৌধুরী, মাতা রাবেয়া খাতুন। মেজর এম এ জলিলের মৃত্যু তারিখ ১৯৮৮ সালে ১৫ নভেম্বর।

মেজর জলিল.jpg

শিক্ষাজীবন ও প্রারম্ভিক কর্মজীবন

জন্মের তিন মাস পূর্বে এম এ জলিলের পিতার মৃত্যু হয়। ১৯৬০ সালে উজিরপুর ডব্লিউ.বি. ইনস্টিটিউশন থেকে মেট্রিক পাস করে ১৯৬১ সালে ইয়ং ক্যাডেটে ভর্তি হয়ে রাওয়ালপিন্ডির মারীতে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬৫ সালে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭০ সালে ট্যাংক ডিভিশনে দায়িত্ব পালন করে মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ মাকে দেখার জন্য এক মাসের ছুটিতে আসেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন এবং বরিশাল অঞ্চলের ডিফেন্স চিফ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে তাকে নবম সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত করে। ৭ এপ্রিল ’৭১ সালে খুলনা বেতার কেন্দ্র মুক্ত করতে এক ঝটিকা অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ২৫ শে এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল মুক্ত অঞ্চল ছিল।২৬ শে এপ্রিল পাক বাহিনী বরিশাল ও ২৭ শে এপ্রিল পটুয়াখালী দখল করে নেয়। এরপর অস্ত্র সংগ্রহের জন্য তিনিসহ বরিশালের অধিকাংশ সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা কর্মী মুক্তিযোদ্ধাগণ চলে যান ভারতে। প্রথমে ভারতের হাসনাবাদে পরে টাকিতে তিনি গড়ে তোলেন ৯নং সেক্টর হেড কোয়াটার। বৃহত্তর বরিশাল, পটুয়াখালি, খুলনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও যশোরের কিছু অংশ নিয়ে ঘোষিত হল নবম সেক্টর। নবম সেক্টরকে পাঁচটি সাব-সেক্টরে বিভক্ত করা হল। এগুলো ছিল- সাতক্ষীরা, খুলনা, সুন্দরবন, বরিশাল ও পটুয়াখালী। তার সেক্টরের অধীনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি গড়ে তোলেন এগারটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রবাসী সরকার ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় মেজর জলিলের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠল ৮০ হাজার সদস্য নিয়ে বিরাট মুক্তিবাহিনী। ৯নং সেক্টর হেড কোয়াটার টাকিতে বসেই তিনি বেশীর ভাগ গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করতেন।

১৯৭১ সালের ৭ই জুলাই তার উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু স্কোয়াড নামে স্বাধীন সরকারের প্রথম নৌবাহিনী গঠিত হয়। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাগণ সাতক্ষীরা, খুলনা ও বরিশালের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান বাহিনীর সাথে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধে জয়লাভ করেন। ৩২ বছরের যুবক সেক্টর কমান্ডার মেজর এম. এ. জলিলের বীরত্বপূর্ণ সফলতা বিবিসি ও সংবাদপত্রে প্রশংসিত হয়। ৭ই ডিসেম্বর তার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরা মুক্ত করে ৮ই ডিসেম্বর বরিশাল ও পটুয়াখালী মুক্ত হয়। ১৭ই ডিসেম্বর মিত্র বাহিনী নিয়ে বিজয় বেশে তিনি খুলনা শহরে প্রবেশ করেন। পাকবাহিনীর অধিনায়ক ব্রিগ্রেডিয়ার হায়াত খান ৮ হাজার সৈন্য নিয়ে খুলনা সার্কিট হাউজে মেজর এম. এ. জলিল ও মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক লেঃ জেনারেল বলবীর সিং এর নিকট আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর বরিশালে তাকে সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়। ২১ ডিসেম্বর তিনি হেমায়েতউদ্দিন মাঠে জনসভায় ভাষণ দেন।

রাজনৈতিক জীবন

এরপর ভাগ্যের পরিহাসে চক্রান্তের শিকার হয়ে ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি যশোরে মুক্তিবাহিনীর লোকের হাতে গ্রেফতার হন। ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই মুক্তি লাভ করেন। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে বরিশালে ৫টি আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ১৯৭৫ সালের ২৩ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের সাথে গ্রেফতার হন, বিচারে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। ১৯৮০ সালে ২৬ মার্চ মুক্তি লাভ করেন। ১৯৮২ সালের আগস্ট মাসে তিনি টাঙ্গাইলের সায়মা আখতারকে বিয়ে করেন। তাদের দুই কন্যা সারাহ ও ফারাহ। সারাহ ব্যারিস্টার, আইন পেশায় নিয়োজিত। ১৯৮৪ সালের ৩ নভেম্বর জাসদ ত্যাগ করে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন দল গঠন করেন।

মৃত্যু

১৯৮৮ সালে ১৫ নভেম্বর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ২২ নভেম্বর তাকে মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গ্রন্থাবলী

মেজর জলিল একজন শক্তিশালী লেখক ছিলেন। তাঁর লেখা গ্রন্থসমূহ: সীমাহীন সমর, মার্কসবাদ, সূর্যোদয়, কৈফিয়ত ও কিছু কথা, দাবী আন্দোলন দায়িত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবন দর্শন, অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা, A Search for Identity. সকল সেক্টর কমান্ডারগণকে বীরউত্তম পদক দেয়া হয়েছে, একমাত্র ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিলই বঞ্চিত জন।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।