মুক্তিযুদ্ধে বরগুনা

Barisalpedia থেকে

২৩ নভেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সুবেদার জামানের নেতৃত্বে বেতাগী যায়। তারা বদনীখালী বন্দর লুট করে এবং আগুন দিয়ে বাজার পুড়ে ফেলে। লুটের পর লঞ্চে পাকবাহিনী বরগুনায় ফিরছিল। বেতাগী মীর্জাগঞ্জ হতে কমান্ডার আলতাফ হায়দার ও মোতালেব তাদের দল নিয়ে পাক বাহিনীর লঞ্চ আক্রমণ করে। পাক বাহিনীর লঞ্চ হতে পাল্টা আক্রমণ চালায়। নদীর পশ্চিম তীর হতে বুকাবুনিয়া ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা এলএমজির ফায়ার করছে। জামান ছিলেন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। তিনি অতি দ্রুত লঞ্চ থেকে তীরে উঠে মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ চালান। এলএমজির সামনে মুক্তিবাহিনী টিকতে পারেনি। তারা পিছু হটে যান। এক বাক্স কার্তুজসহ মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝি ধরা পড়ে। পাকবাহিনী আহত হয়। তারা বরগুনা পৌঁছে দেখলো সেখানে থাকা নিরাপদ নয়। তাই রাতের অন্ধকারে পাকসেনারা সদলবলে বরগুনা ত্যাগ করে। ২৪ নভেম্বর বরগুনা মুক্ত হয়। সি আই পুলিশ অনোয়ার, এসআই শওকাত তাদের অনুগত পুলিশ, শান্তি কমিটির মোতালেব ও রাজকারেরা মুক্তিযোদ্ধাদের মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নেয়। ২৪ তারিখ ভোরে বুকাবুনিয়ার মুক্তিবাহিনী বামনা থানা আক্রমণ করে। সারাদিন সংঘর্ষ চলে। জহির শাহ আলমগীর, জুলফু, মজিদ, মোবারক মল্লিক, ছত্তার প্রমুখ বামনা থানা আক্রমণে অংশ নেয়। হাজার হাজার জনতা জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিচ্ছে। বিকেলে দেশীয় পুলিশ ও রাজাকারেরা আত্মসমর্পণ করে। বামনা থানায় ২৪ জন রাজাকার নিহত হয়। ২৪ নভেম্বর জহির শাহ, মোতালেব, জুলফু প্রমুখ বেতাগী আক্রমণ করে থানা দখল করে। ২৫ নভেম্বর জহির শাহ, কমান্ডার কাসেম, জুলফু প্রমুখ পাথরঘাটা থানা আক্রমণ করে এবং কয়েক ঘন্টা যুদ্ধের পর থানার পুলিশ ও রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। পাথরঘাটা সংঘর্ষের সময় একদল শান্তি কমিটি নৌকায় পালাচ্ছিল। মুক্তিবাহিনী তাদের ধরে গুলি করে হত্যা করে। বরগুনা থানার মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন সেনাবাহিনীর মোহাম্মদ জুলফু। বরগুনা থানা পতনের পূর্বে সিআই পুলিশ আনোয়ার হোসেন অনুগত পুলিশ নিয়ে আমতলী থানায় আশ্রয় নেয়। ১২ ডিসেম্বর রাতে গলাচিপার আবদুর রব তার বাহিনী নিয়ে এ কে স্কুল হতে আমতলী থানা আক্রমণ করে। তার সাথে ছিল আমতলী থানা আওয়ামী লীগের সম্পাদক আফাজউদ্দিন বিশ্বাস, নুরুল ইসলাম তালুকদার পাশা, মইন তালুকদার, নিজামউদ্দিন আহমদ তালুকদার, কুতুবউদ্দিন তালুকদার প্রমুখ। সারা রাত সংঘর্ষের পর আমতলী থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আসমত আলী আকনের মাধ্যমে থানার পুলিশ ও রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। সিআই পুলিশ আনোয়ার হোসেন ও দারোগা রইস ভুইয়াকে হত্যা করা হয়। ২৭ নভেম্বর সকালে বেতাগীর আবদুস ছত্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, বরগুনা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি নুরুল ইসলাম সিকদার, মুহম্মদ জহির প্রমুখ মুক্তিবাহিনী নিয়ে বরগুনা মহকুমা শহর দখল করে। ২৭ নভেম্বর বরগুনা মহকুমা স্বাধীনতা লাভ করে। বরগুনা মহকুমা দখলের পর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়। ৪ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে বরগুনায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫

          ২। মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল। গতিধারা, ঢাকা। ২০১৬