মীর মাশায়েখ শাহ

Barisalpedia থেকে

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাচীন বরিশাল অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে যে সকল ধর্মপ্রচারক এবং আওলিয়াবৃন্দ নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন, হযরত মীর মাশায়েখ শাহ (রঃ) ছিলেন তাদের অন্যতম। স্থানীয়ভাবে তিনি পীর মীর মোশায়েক নামে পরিচিত।

এই অঞ্চলে তার আগমণকাল সঠিকভাবে জানা যায় না। বলা হয়ে থাকে যে, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে সূদূর আরব থেকে বারোজন ইসলাম প্রচারক এই দেশে আগমণ করেন হযরত মীর মাশায়েখ এবং তার পুত্র হযরত মাহমুদ শাহ ছিলেন তাদের অন্যতম। বাংলায় পৌছানোর পর চট্টগ্রাম থেকে নদীপথে তিনি ঝালকাঠির উদচরায় উপস্থিত হয়ে বসতি স্থাপন করেন এবং ইসলাম প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। হযরত মীর মাশায়েখ শাহ (রঃ) সম্পর্কে বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা এখানে প্রচলিত রয়েছে। এই মহাপুরুষের মাজার সংলগ্ন স্থানে একটি কালো পাথর পরিদৃষ্ট হয়। বলা হয়ে থাকে কোনো এক সময়ে হযরত মীর মাশায়েখ তার বাম হাতের কনুই দিয়ে এই পাথরটিতে চাপ দেয়ায়, পাথরটি মোমের মতো গলে যায়। ঐ অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হিসেবে আজো সেই কালো পাথরটির গায়ে তার কনুইয়ের ছাপ দৃশ্যমান। হযরত মীর মাশায়েখ এবং তার পুত্র হযরত মাহমুদ শাহ এই এলাকায় ইসলাম প্রচারের সাথে সাথে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছিলেন বলে জানা যায়। বর্তমান সময়ে তার বহু অনুরাগী নবগ্রামের উদচরা গ্রামের এই মাজার পরিদর্শন করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে।

সিরাজ উদ্দীন আহমেদের প্রদত্ত তথ্যমতে ষোল শতকের শেষভাগে হজরত শাহ আহম্মদ ও তার পুত্র মীর মোশায়েক তথা মীর মাশায়েখ বাগদাদ হতে সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম আসেন। সেখান থেকে পিতা-পুত্র বাকলায় পৌঁছেন। তারা নৌকায় সুগন্ধা নদী অতিক্রম করেছিলেন। শাহ্ আহম্মদ ধ্যানে ছিলেন। হঠাৎ তার তসবিহ সুগন্ধা নদীতে পড়ে যায়। তখন তিনি খোদাকে স্মরণ করলেন। শব্দ হলো, ‘তুমি এখানে বসবাস করবে’। সুগন্ধা নদী শুকিয়ে গেল এবং নৌকা আটকে পড়লো। তসবিহ উদ্ধার হলো। স্থানীয় সওদাগর শাহ আহম্মদের সাথে দেখা করেন এবং তার গ্রামে বাস করতে অনুরোধ করেন। শাহ আহম্মদ ঝালকাঠির উদ্চাড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন এবং সওদাগরের কন্যাকে বিয়ে করেন। তিনি দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে উদ্চাড়া গ্রামে বাস করতেন।

মীর মোশায়েক তেরআনা গ্রামে বাস করতেন। পিতা-পুত্র উভয়ে বিখ্যাত সুফী-সাধক ছিলেন। ইসলাম প্রচারে মীর মোশায়েক ও তার পিতার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মোগল স¤্রাট তাদের বাগপুরে লাখেরাজ সম্পত্তি দিতে চাইলেন। কিন্তু শাহ্ আহম্মদ বিনা খাজনায় ভূমিদান গ্রহণে অস্বীকার করেন। স¤্রাট গ্রামটির রাজস্ব মাত্র তেরআনা ধার্য করেন। তাই গ্রামের নাম তেরআনা।

মীর মোশায়েকের মাজার তেরআনা গ্রামে অবস্থিত। তার মাজারে তিন খন্ড পাথর আছে। একটি পাথরে পায়ের ও কনুর ছাপ আছে। অন্য পাথর দুটি শিলনোড়ার (পাটাপুতা) আকৃতির। মীর মোশায়েকের আমলের একটি প্রাচীন পুকুর আছে।

মীর মোশায়েক ভবিষদ্বাণী করেছিলেন যে, এ বংশের চতুর্দশ পুরুষ পীর হবেন। বর্তমানে চতুর্দশ পুরুষ চলছে। কিন্তু কোন পীরের আবির্ভাব হয়নি। তবে তারা বারো পুরুষ পর্যন্ত পীরালি ধারায় ছিলেন। মীর মোশায়েকের বংশধর বর্তমানে খন্দকার নামে পরিচিত।



তথ্যসূত্র: ১. সাইফুল আহসান বুলবুল। বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন। গতিধারা, ঢাকা। ২০১২। ২. সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০