মিহির সেনগুপ্ত

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:৪৬, ১২ মে ২০২৩ পর্যন্ত সংস্করণে

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

মিহির সেনগুপ্ত বিভাগোত্তর বাংলার দক্ষিণবঙ্গের এক কীর্তিমান লেখক। বৃহত্তর বরিশাল তথা চন্দ্রদ্বীপের জীবন ও সমাজকে তুলে ধরে এবং চান্দ্রদ্বীপি ভাষার তেজকে কাজকে লাগিয়ে যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন কথাসাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যে অমরত্ব লাভ করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মিহির সেনগুপ্ত।

মিহির সেন.jpg



জন্ম ও পিতৃপরিচয়

বৃহত্তর বরিশালের অর্থে দক্ষিণবঙ্গের জীবন ও সমাজের অকৃত্রিম দরদী এই লেখকের জন্ম হয়েছিল এই দক্ষিণবঙ্গেই বর্তমান ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলাধীন কেওড়া গ্রামে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ তারিখে। এতদঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের দাপ্তরিকভাবে প্রতিষ্ঠিত জন্মতারিখের মতো এ তারিখটিও স্কুলে ভর্তি বা ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজনে তৈরিকৃত একটি জন্মতারিখ। মিহির সেনগুপ্তের জন্ম মূলত আরো দুয়েক বছর পূর্বের কোনো তারিখে হয়েছিল বলে অনুমিত হয়। কেওড়ায় তাঁদের পূর্বপুরুষ ছিলেন সম্পন্ন ভূস্বামী। উত্তরাধিকারসূত্রেই বাবা সুধীর কুমার সেনগুপ্তের জমিদারি ছিল। মায়ের নাম লাবণ্য সেনগুপ্ত। বাবার প্রথম স্ত্রী গত হলে দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন এই লাবণ্য সেনগুপ্ত। দুই মায়ের উদরজাত তাঁরা ছিলেন মোট তের ভাইবোন। আট ভাই: সুকুমার সেনগুপ্ত, দেবকুমার সেনগুপ্ত, পারিজাত সেনগুপ্ত, দিলীপ সেনগুপ্ত, অভিজিৎ সেন, মিহির সেনগুপ্ত, সমীর সেনগুপ্ত ও অশোক সেনগুপ্ত। তাঁদের মধ্যে দুজনই বাংলা সাহিত্যের দুই মহীয়ান লেখক- অভিজিৎ সেন ও মিহির সেনগুপ্ত। পাঁচ বোন: অপর্ণা রায়, কৃষ্ণা ভট্টাচার্য, মিলি সেনগুপ্ত, রিনা সেনগুপ্ত ও সমাপ্তি ঘোষ। ভাইদের মধ্যে এখন তিনজন মাত্র জীবিত আছেন: পারিজাত সেনগুপ্ত, অভিজিৎ সেন ও সমীর সেনগুপ্ত।


শিক্ষাজীবন

মিহির সেনগুপ্ত ১৯৬১ সালে পাশের কীর্তিপাশা গ্রামের প্রসন্নকুমার উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে সরকারি বৃত্তিসহ ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী জীবনে তাঁর সহধর্মিনী হয়ে আসা সন্ধ্যা রায়সেনগুপ্তও একই বছরে একই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন। এরপর মিহির সেনগুপ্ত বিএম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসিতে ভর্তি হন। এইচএসসি পার্ট-২ সম্পন্ন না করেই তাঁকে জীবনের স্থায়ী নিবাসের লক্ষ্যে পাড়ি জমাতে হয় পশ্চিমবঙ্গে ইতোমধ্যে যেখানে তাঁর ভাইবোনদের অনেকেই স্থায়ী হয়েছিলেন। তবে সেই প্রবাস এক্তিয়ার করা মোটেই তাঁর জীবনের কোনো সুখকর অভিজ্ঞতার অংশ ছিল না। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বিষাদবৃক্ষ’ এ সময়কার বেদনাবিধুর জীবন-অধ্যায়ের এক অসামান্য দলিল।

কোলকাতায় তাঁকে ১৯৬৪ সালে আবার ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করতে হয় প্রাইভেট পরীক্ষার মাধ্যমে কারণ পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমবঙ্গে তাঁর অভিবাসন যথাপ্রক্রিয়ায় না হওয়ার কারণে পূর্বপাকিস্তানের শিক্ষাসনদ তিনি ব্যবহার করতে পারছিলেন না। এবারও পশ্চিমবঙ্গে তিনি ম্যাট্রিকুলেশনে প্রথম বিভাগেই উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৫ সালে প্রি-ইউনিভার্সিটি শ্রেণিতে সারা পশ্চিমবঙ্গে তিনি নবম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৬ সালে সরকারি বারাসাত কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালেই ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় চাকুরি লাভ করায় নৈশকালীন কোর্সে অনার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করতে কোলকাতা সিটি নাইট কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে ইংরেজিতে বিএ অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।


কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবন

চাকুরিতে পরবর্তীতে তাঁর পদায়ন হয় তৎকালীন দক্ষিণ বিহার তথা বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ধানবাদ জেলায়। ধানবাদ জেলায় তিনি ১৯৮২ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে কাটিয়েছেন। ধানবাদের তোপচাঁচিতে তিনি অনেক দিন চাকুরিসূত্রে বসবাস করেছেন। তাঁর প্রথম দিকের গ্রন্থ ‘টার পাহাড়ের পদাবলী’, ‘মধ্যদিনের গান’, ’ঝিঙাফুলের কলি’ ইত্যাদি তাঁর ঝাড়খণ্ডের জীবনকালেই রচিত হয়েছিল।

মিহির সেনগুপ্ত ১৯৭২ সালের ৬ মার্চ তারিখে তাঁর একদা স্কুল-সহপাঠী সন্ধ্যা রায়সেনগুপ্তের সাথে পরিণয়বদ্ধ হন। সন্ধ্যা রায়সেনগুপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে বরিশাল মহিলা কলেজে ১৯৬৮ সালের আগস্ট মাসে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং এ কারণে তাঁদের পরিবারের ওপর থেকে বয়ে যাওয়া ঝড়ঝাপটার পরে উদ্ভূত ট্রমা থেকে উপশম ও পরিত্রাণের আশায় তিনি স্বাধীনতার পরপর কিছুদিনের জন্য ভারত গমন করেন। সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে মিহির সেনগুপ্তের সাথে প্রথমে তাঁর আইন মোতাবেক রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়। পরে বাংলাদেশে ফিরে মার্চের ৬ তারিখ ধর্মীয় বিধিবিধান মোতাবেক পূর্ণাঙ্গ বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়ের পরে তাঁরা প্রথমে হুগলির ভদ্রেশ্বরে তাঁদের সদ্য নির্মিত বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। ভদ্রেশ্বর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে পোলবা গার্লস হাইস্কুলে সন্ধ্যা রায়সেনগুপ্ত সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ১৯৭৩ সালে। কর্মজীবনের শেষদিকে তিনি ভদ্রেশ্বর ধর্মতলা গার্লস হাইস্কুলের হেডমিস্ট্রেস ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তাঁদের প্রথম সন্তান কস্তুরী দাশগুপ্তের জন্ম হয়। কস্তুরী দাশগুপ্তের ডাকনাম তানিয়া। দ্বিতীয় এবং শেষ সন্তান বৈদেহী সেনগুপ্তের জন্ম হয় ১৯৭৮ সালে। বৈদেহী সেনগুপ্তের ডাকনাম তিতির। দুই সন্তান নিয়ে সন্ধ্যা রায়সেনগুপ্ত ১৯৭৯ সালে স্কুল থেকে বিনা বেতনে ছুটি নিয়ে মিহির সেনগুপ্তের কর্মস্থল ধানবাদে গমন করেন এবং সেখানে দুই বছর কাটিয়ে ১৯৮২ সালে আবার কোলকাতায় ফিরে আসেন।


সাহিত্যিক জীবন

মিহির সেনগুপ্তের লেখালেখি তাঁর ধানবাদের কর্মস্থল থেকে শুরু হলেও তা প্রকাশের আয়োজন অনেক দেরিতে কোলকাতার জীবনেই শুরু হয়েছে। এই শুরুর সাথে দক্ষিণবঙ্গের পণ্ডিতকুলশিরোমণি তপন রায়চৌধুরীর একটি নাটকীয় ঘটনা জড়িয়ে আছে। ১৯৯২ সালে ‘দেশ’ পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় তপন রায়চৌধুরীর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘রোমন্থন’- এর সিংহভাগ প্রকাশিত হয়। ছেলেবেলার জীবনভূমি কীর্তিপাশাকে সে গ্রন্থে নায়কের ভূমিকায় আবিষ্কার করে উল্লসিত মিহির সেনগুপ্ত লেখক তপন রায়চৌধুরীকে ৭৪ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এক পত্র লেখেন। ১৯৯৪ সালে সেই পত্র ‘নাইয়া’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সে পত্র তপন রায়চৌধুরীকে এতখানি আমোদিত করে যে তিনি রোমন্থণের পরবর্তী সংস্করণে ঐ পূর্ণাঙ্গ পত্রখানিও জুড়ে দেন। শুধু তপন রায়চৌধুরী নয়, সে পত্রে আমোদিত হয়েছিল গোটা বাঙালি পাঠক, যখন ১৯৯৬ সালে সেই পত্র ‘ভাটিপুত্রের পত্র বাখোয়াজি’ নামে এক স্বতন্ত্র গ্রন্থ রূপে আবির্ভূত হয়। সত্যিকার অর্থে লেখক মিহির সেনগুপ্তের ব্যাপক পাঠকগ্রাহিতা ‘ভাটিপুত্রের পত্র বাখোয়াজি’ নামক এই পুস্তকের হাত ধরেই। ‘টাঁর পাহাড়ের পদাবলি, ‘মধ্যদিনের গান, ’ঝিঙাফুলের কলি’ ইত্যাদি গ্রন্থ তিনি অনেক আগে লিখে থাকলেও এগুলোসহ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ সবই ১৯৯৬ সালের পরেই প্রকাশিত হতে শুরু করে।


গ্রন্থপরিচয়

মিহির সেনগুপ্তের গ্রন্থসমূহের একটি মোটামুটি তালিকা নিম্নরূপ।

১। ভাটিপুত্রের পত্র বাখোয়াজি; প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ১৯৯৬; প্রকাশক: নয়া উদ্যোগ, কোলকাতা। এটি প্রথমে প্রকাশিত হয়েছিল ‘নাইয়া’ পত্রিকায় ১৪০০ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৯৯৪ খৃস্টাব্দে।

২। সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম; এটিরও প্রথম প্রকাশ ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে; প্রকাশক: নয়া উদ্যোগ, কোলকাতা । এটি সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছে সুপ্রকাশ প্রকাশনী কর্তৃক ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে।

৩। বিদুর; প্রথম প্রকাশ ১৯৯৬ সালে নয়া উদ্যোগ, কোলকাতা কর্তৃক।

৪। বিষাদবৃক্ষ মিহির সেনগুপ্তের সবচেয়ে পাঠকনন্দিত গ্রন্থ। ২০০৩ সালে কোলকাতার প্রকাশনী সুবর্ণরেখা এটি প্রথম প্রকাশ করে। এরপর আনন্দ পাবলিশার্সসহ একাধিক প্রকাশনী থেকে এটি মুদ্রিত হয়। হেমলতা কর্তৃক অনূদিত এর একটি হিন্দি অনুবাদ পেঙ্গুইন থেকেও পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়।

৫। চান্দ্রদ্বীপি শোলোক শাস্তর পলকি কথা; প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ২০০৬। এটি তখন উজানি খালের সোঁতা গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত রূপে আনন্দ পাবলিশার্স, কোলকাতা কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তবে এর পূর্বে ‘কারুকথা এই সময়’ পত্রিকায় এটি প্রকাশিত হয়েছিল নভেম্বর ২০০৩ - জানুয়ারি ২০০৪ সংখ্যায়।

৬। ভাটিপুত্রের অপবর্গ দর্শন; এটিও উজানি খালের সোঁতা গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত রূপে আনন্দ পাবলিশার্স কর্তৃক প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। এর পূর্বে অবভাস পত্রিকায় ডিসেম্বর ২০০৪ সংখ্যায় এটি প্রকাশিত হয়েছিল।

৭। টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি প্রথমে কম্পাস পত্রিকায় ১৯৯৭-২০০২ সময়কালে প্রকাশিত হয়। এরপর ২০০৮ সালে গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয় গাঙচিল, কোলকাতা কর্তৃক। ২০২১ সালের জুলাই মাসে সুপ্রকাশ, কোলকাতা থেকে এটি পুনঃপ্রকাশিত হয়।

৮। গোধূলি সন্ধ্যার রাখাল  ; প্রথম প্রকাশ ২০০৭; প্রকাশক: জে এন চক্রবর্তী অ্যান্ড কোং, কোলকাতা। এটি আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয়তে এপ্রিল-মে, ২০০৫ সংখ্যায় ‘নামহারা’ নামে প্রকাশিত গল্পের পরিবর্ধিত রূপ।

৯। নিষ্পাদপ অরণ্যে; ২০০৮; প্রকাশক: দে’জ পাবলিশার্স, কোলকাতা।

১০। ধানসিদ্ধির পরনকথা ; ২০০৮; প্রকাশক: দে’জ পাবলিশার্স, কোলকাতা।

১১। নীল সায়রের শালুক; ২০০৮; প্রকাশক: জে এন চক্রবর্তী অ্যান্ড কোং, কোলকাতা।

১২। হেমন্ত শেষের পাখিরা; ২০০৯; জে এন চক্রবর্তী অ্যান্ড কোং, কোলকাতা। এই গ্রন্থটিই বাংলাদেশের কাগজ প্রকাশনী থেকে ‘শরণার্থী ও মুক্তিযুদ্ধ’ নামে ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়।

১৩। মধ্যদিনের গান; ২০১১; প্রকাশক: নান্দনিক, ঢাকা, বাংলাদেশ।

১৪। দশটি গল্প গ্রন্থটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত গল্পের সংকলন রূপে পরশপাথর প্রকাশন, কোলকাতা কর্তৃক প্রকাশিত।

১৫। তুষিত স্বর্গের সন্ধান; নভেম্বর, ২০১১; প্রকাশক: জে এন চক্রবর্তী অ্যান্ড কোং, কোলকাতা।

১৬। চলার পথের চলনদার; জুলাই, ২০১২; প্রকাশক: মধ্যমা, ঢাকা, বাংলাদেশ।

১৭। সুবর্ণ উত্তরণ; ২০১৪; প্রকাশক: বোধি, ঢাকা, বাংলাদেশ।

১৮। যুদ্ধান্তে; ২০১৫; প্রকাশক: সাহিত্য সংসদ, কোলকাতা।

১৯। সর্বশেষ জীবনানন্দের সেই নারী; ২০১৬; প্রকাশক: স্বস্তিক প্রকাশন, কোলকাতা।

২০। স্বপ্ন সুগন্ধা; ২০১৬; প্রকাশক: জে এন চক্রবর্তী অ্যান্ড কোং, কোলকাতা।

২১। ভাটিপুত্রের সাধুসঙ্গ; ২০১৬; প্রকাশক: অক্ষর পাবলিকেশনস, কোলকাতা।

২২। অন্তহীন ফিরে দেখা; ২০১৬; প্রকাশক: জে এন চক্রবর্তী অ্যান্ড কোং, কোলকাতা।

২৩। চান্দ্রদ্বীপি কাহিনি আলেখ্য; ডিসেম্বর, ২০১৬; আনন্দ পাবলিশার্স, কোলকাতা কর্তৃক ভাটিপুত্রের বরিশালি গদ্যসংগ্রহ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত। আলেখ্যগুলো বিভিন্ন সময়ে ‘আনন্দবাজার’ রবিবাসরীয়, ‘আজকাল’ রবিবাসরীয়, বাংলাদেশের ‘কালি ও কলম’ ইত্যাদি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত।

২৪। অশ্বমেধ দত্তের আত্মকথা; ২০১৭; প্রকাশক: অক্ষর পাবলিকেশনস, কোলকাতা।

২৫। জালালি; ২০১৭; প্রকাশক: অক্ষর পাবলিকেশনস, কোলকাতা। এটি অনুষ্টুপ, ২০১৬ সালের শারদীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।

২৬। কালচক্রযান; জানুয়ারি, ২০১৮; প্রকাশক: লিরিক্যাল, কোলকাতা।

২৭। ঝিঙাফুলের কলি; ২০১৮; প্রকাশক: অক্ষর পাবলিকেশনস, কোলকাতা।

২৮। কাহ্ন বাসুদেব; ২০১৯; প্রকাশক: অক্ষর পাবলিকেশনস, কোলকাতা।

২৯। মহামাতৃকার জনপদ; জানুয়ারি, ২০২০; প্রকাশক: সাহিত্য সংসদ, কোলকাতা।

৩০। চক্ষুষ্মতী গান্ধারী; জানুয়ারি, ২০২০; প্রকাশক: সুপ্রকাশ, কোলকাতা।

৩১। কালসন্ধ্যা; জানুয়ারি, ২০২২; প্রকাশক: পরবাস, কোলকাতা।

৩২। এপার বড়ো মাঘমাস ওপার বড়ো কুয়া; ফেব্রæয়ারি, ২০২২; প্রকাশক: সুপ্রকাশ, কোলকাতা।

৩৩। বলেশ্বরী পেরিয়ে; প্রকাশের সন: ?; জে এন চক্রবর্তী অ্যান্ড কোং, কোলকাতা।

এছাড়াও একুশ বিঘার বসত নামে তাঁর একটি গ্রন্থ আছে। সম্ভবত ভাটিপুত্রের সাধুসঙ্গ গ্রন্থটিই ভিন্ন প্রকাশনী থেকে ওই নামে প্রকাশিত। তালিকার এ তথ্যসমূহের জন্য অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী এবং সন্ধ্যা রায়সেনগুপ্তের নিকট ঋণ স্বীকার করছি।

মিহির সেনগুপ্তের বেশিরভাগ গ্রন্থ স্মৃতি আলেখ্য ধারার। ‘চক্ষুষ্মতী গান্ধারী’ ও ‘কাহ্ন বাসুদেব’ সদৃশ দুয়েকটি গ্রন্থ ছাড়া তাঁর সকল গ্রন্থই এ কথার সত্যতা বহন করে। বলা যায় স্মৃতি আলেখ্যকে বাংলাসাহিত্যে একটি সফল জঁর হিসেবে তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই জঁর গণমানুষের উপভোগের সাহিত্য আঙ্গিক। এখানে গল্পের সাথে জীবনের প্রতারণা নেই, কপটতা নেই। তাই জীবনের এই অকপট গল্প দক্ষিণবাংলার মাটিপুত্রদের হাজার বছরের বাংলাসাহিত্যে সবচেয়ে ভালোবাসার গল্প। এই ভালোবাসার প্রমাণ পাই যখন শুনি ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’ বা ‘বিষাদবৃক্ষ’ নৌকায় জেলেরা জাল ফেলে অপেক্ষায় বসে থাকা সময়ে রাতে হারিকেনের আলোতে বসে গোল হয়ে একজনে পড়ে এবং অন্যেরা শোনে। বাংলা সাহিত্যে আধুনিক ধারার কোনো কথাসাহিত্য এভাবে জনপ্রিয় হয়েছে বলে আমরা আর শুনিনি। ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’ গ্রন্থের সুবাদে ২০০২ সালে শ্রুতি আকাদেমী প্রথমে তাঁকে সম্মাননা প্রদান করে। ২০০৫ সালে ‘বিষাদবৃক্ষ’ গ্রন্থের জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গের সুবিখ্যাত ‘আনন্দ’ পুরস্কার লাভ করেন। আনন্দ বা শ্রæতি আকাদেমী পুরস্কারের চেয়ে অনেক বড় স্বীকৃতি হলো একালের দুই জগদ্বিখ্যাত পণ্ডিত তপন রায়চৌধুরী ও রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত কর্তৃক তাঁর ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’ ও ‘বিষাদবৃক্ষ’ গ্রন্থের ভূয়সী প্রশংসা।


মৃত্যু ও বংশধর

বরিশালের মাটির এই গর্বিত সন্তান কঠিন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কোলকাতায় নবজীবন প্রাইভেট হসপিটালে ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি এই ধরাধাম থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। স্ত্রী সন্ধ্যা রায়সেনগুপ্ত বর্তমানে তাঁর বড় মেয়ে কস্তুরী দাশগুপ্তের সাথে কোলকাতায় বাস করছেন। কস্তুরী দাশগুপ্ত নিজে চাকুনি করেন না। তাঁর স্বামী আনন্দবাজারে চাকুরিরত। কনিষ্ঠা কন্যা বৈদেহী সেনগুপ্ত তিতির কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এরপরে আজিম প্রেমজি ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্টডক্টোরাল গবেষণা সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি ডাচ প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করছেন।



তথ্যসূত্র: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনানন্দ দাশ রিসার্চ সেন্টার কর্তৃক আয়োজিত ‘মিহির সেনগুপ্তের সাহিত্যকর্মে দক্ষিণ বাংলার জীবন ও সমাজ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিতরণকৃত পরিচিতি পুস্তিকা।