মাহের উদ্দীন ফকির (রঃ), হযরত

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৪:১৫, ৯ জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত সংস্করণে ("ঝালকাঠিস্থ নবগ্রামের মোকাররমপুর নিবাসী মাহের উদ্দীন ফক..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

ঝালকাঠিস্থ নবগ্রামের মোকাররমপুর নিবাসী মাহের উদ্দীন ফকির এক সুফী সাধক ব্যক্তিত্ব। তিনি অন্তত শত বছর আগের এক পুরুষ। তাঁর নামে রয়েছে মোকাররমপুর দরবার, মসজিদ, মাজার, মাদ্রাসা ও ঈদগাহ।

জন্ম ও পরিচয়

তাঁর জন্ম স্থানের ঠিকানা ও পিতার নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর জন্ম ও পরিচয় নিয়ে আছে এক কিংবদন্তী। মোকাররমপুর গ্রামের এক মহিলা। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। দীর্ঘদিন যাবত আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছিলেন, একটি পুত্র সন্তানের জন্য। মোকাররমপুর গ্রাম, নবগ্রাম, গগণ, তেরআনা, পঞ্চগ্রাম এ গ্রামগুলো সন্ধ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। এক সময় ঐ নদীর নাম সন্ধ্যা নদী ছিল। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যা নদীর তীরে আড়াই কি তিন বছর বয়সের এক শিশু কোথা থেকে এলো কেহ বুঝে উঠতে পারছিল না। নিঃসন্তান এ মহিলা শিশুটিকে নিয়ে বাড়িতে চলে এলেন এবং লালন পালন করতে লাগলেন এবং বিভিন্ন স্থানে খোঁজ দিতে লাগলেন। কিন্তু পাত্তা পাওয়া গেল না। দীর্ঘ দিনেও শিশুটির আসল ঠিকানা কোথায়, কেন এ সন্ধ্যা নদীর তীরে, কি জন্য আগমন, কিছুই পাওয়া গেল না। মহিলা নিজ সন্তানের মতই শিশুটিকে লালন পালন করতে লাগলেন। শিশুটির নাম আদর করে মানিক নাম রাখা হল। পরবর্তীতে মানিক নামটিকেই পরিবর্তিত করে মোহর রাখা হল এবং এই মোহর নামটিই মাহের উদ্দীন হিসেবে পরিচিত হয়।


লেখাপড়া ও ধর্মপ্রচার

মাহেরকে স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি করা হল প্রথমে। স্কুলে পড়ার সময় মাহের উদ্দীনের চালচলন আদব আখলাক দেখে সকলই অবাক হয়ে গেল। ৬/৭ বছর বয়সেই মাহেরের মধ্যে নানারূপ অলৌকিক ঘটনা দেখা যেত। নিবারণ চন্দ্র নামে হিন্দু এক শিক্ষক মাহেরর বিভিন্ন আচার-আচরণ দেখে সকলের কাছে বলতে লাগলেন- এই ছেলে ভবিষ্যতে একজন মহাপুরুষ হবে। নামী দামী এবং সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি হবে। জানা গেছে, নিবারণ চন্দ্র মাষ্টার বৃদ্ধ বয়সে মাহের উদ্দীনের হাতে কলেমা পড়ে মুসলমান হয়েছিলেন। স্কুল মাদ্রাসার কোন সার্টিফিকেট ছিল না মাহের উদ্দীনের। মাহের উদ্দীন ফকির ধীরে ধীরে ধর্মপ্রচারে মনোনিবেশ করলেন। বিভিন্ন অঞ্চলে এলাকায় তার নাম ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। জৌনপুরের হযরত হাফেজ আহমদ (রঃ) সাহেব একবার ঐ এলাকায় এলে তিনি মাহের উদ্দীনকে দেখে খুশী হলেন এবং বললেন, এ একদিন পীর হবে। তিনি মাহের উদ্দীনকে বয়াত করলেন এবং সফর করে লোক হেদায়েত করবার উপদেশ দিলেন। পরবর্তীতে তিনি জৌনপুরের খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছিলেন।

কীর্তি

হযরত মাহের উদ্দীন ফকীরের ব্যবহার্য তসবীহ, খরম এবং কিছু স্মৃতি তার দরবারে একটি ঘরে হেফাজতে রাখা হয়েছে। ফকীর সাহেবের পুত্র মুফিজুর রহমান ফকীর সাহেবও একজন আল্লাহ ওয়ালা লোক একজন দরবেশ টাইপের মানুষ ছিলেন। তার কবরটিও হযরত মাহের উদ্দীন ফকীরের কবরের পাশাপাশি। তার নির্মিত মসজিদটির ঐতিহ্যগত দিক রয়েছে দেখলেই বুঝা যায়। মাহের উদ্দীন ফকীরের পানশী নৌকাটি এখনও তাঁর স্মৃতি ধারণ করে ঘাটে বাঁধা আছে। তাঁর নাতী মোকাররমপুর দরবারের গদ্দীনশীন জনাব নূর মোহাম্মদ ফকীর। বলা হয় মাহের উদ্দীন ফকীরের ৪০ হাজারেরও বেশি মুরীদ ও ভক্ত আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। বিভিন্ন অঞ্চলে ফকীর সাহেবের বিশিষ্ট কয়েকজন খলীফা ছিলেন। তন্মধ্যে ঝালকাঠির ইছানীলের মরহুম মোখলেসুর রহমান খলীফা, নলছিটির ভবানীপুরের মরহুম লালুমদ্দিন ফকীর, বাখেরগঞ্জের সেকান্দার আলী মৃধা, বাউফলের ছবদার আলী খাঁর নাম উল্লেখ্য। মরহুম মাহের উদ্দীন সাহেবের মরহুম পুত্র মুফিজুর রহমান থেকে শুরু করেই তার স্মৃতি বিজড়িত এবং বংশীয় পরিচয় ধরে রাখা হয়েছে। মোকারমপুর দরবারে প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে ওয়াজ মাহফিল ও ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।



তথ্যসূত্র: আবদুর রশীদ। এই সেই ঝালকাঠি। আল ইসলাম পাবলিকেশনস, ঝালকাঠি। ২০০১।