মহানামব্রত ব্রহ্মচারী

Barisalpedia থেকে

বিখ্যাত সাধুপুরুষ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী (২৫.১২.১৯০৪-১৮.১০.১৯৯৯) নিম্ন নবদ্বীপ নামে পরিচিত পন্ডিতপ্রধান খলিসাকোটায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। খলিসাকোটা বর্তমান বানারীপাড়ার চাখার ইউনিয়নের একটি গ্রাম। মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর পিতা সংস্কৃতজ্ঞ কালিদাস দাশগুপ্ত; মাতা কামিনীসুন্দরী।

মহানামব্রত নিজের চেষ্টায় সংস্কৃত শিখেছিলেন এবং গীতা-ভাগবত পড়ে নিজে নিজেই অর্থ বুঝতেন। মহানামব্রত-র পূর্বাশ্রমের নাম বঙ্কিম, মহানামব্রত তাঁর গুরু শ্রীপাদ মহেন্দ্রজির দেওয়া নাম। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই নামযজ্ঞে সংবাদ পেলেই সেখানে ছুটে যেতেন। ফরিদপুরে শ্রীঅঙ্গনে প্রভু জগদ্বন্ধুর প্রতি আকর্ষণে তিনি সেখানেই থাকতে আরম্ভ করেন। ম্যাট্রিক পাশ না-করা পর্যন্ত তাঁর সাধু হওয়া হবে না, নির্দেশ পেয়ে তিনি ঘরে ফিরে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ডিস্ট্রিক্ট স্কলারশিপ-সহ ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর সন্ন্যাসজীবনের সাধনায় গৃহত্যাগ করে দীর্ঘদিন পর জন্মভূমিতে ফিরে মায়ের সঙ্গে দেখা করে ফরিদপুরের শ্রীঅঙ্গনে চলে আসেন। এখানে তিনি সাধুর বেশ এবং মহানামব্রত নাম লাভ করেন। এখান থেকেই গুরু তাঁকে ত্যাগীর বেশ পরিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে পাঠান। কৃতিত্বের সঙ্গে বি.এ. পাশ করে কলকাতার মানিকতলা মেন রোডের মহাউদ্ধারণ মঠে থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায়শাস্ত্রে এম.এ. পড়তে আরম্ভ করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে স্বর্ণপদক-সহ এম.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে গুরুর নির্দেশে দর্শনশাস্ত্রে এম. এ. পরীক্ষা দিয়ে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। এর আগেই ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর রচিত ‘ব্রহ্মচর্য তত্ত্বজ্যোতি’ গ্রন্থখানি প্রকাশিত হয়। ২৮ বছরের প্রায় অজ্ঞাতনামা যুবক তিনি গুরু মহেন্দ্রজির চিহ্নিত পুরুষরূপে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে শিকাগো বিশ্বধর্ম সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। এই সম্মেলনে তিনি অহিংসা, মহাত্মা গান্ধী ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব, প্রভু জগদ্বন্ধু প্রভৃতি বিষয় নিয়ে যে বক্তৃতা দেন তা বিশেষ প্রশংসা লাভ করে। তৃতীয় বিশ্বধর্ম সম্মেলনে তিনি ছিলেন মহানাম সম্প্রদায়ের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ওয়ার্ল্ড ফেলোশিপ অফ ফেথ্স’-এর আন্তর্জাতিক সম্পাদক হন। ওই বছরই শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল শ্রীজীবের দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে বৈষ্ণব বেদান্ত। আমেরিকার বহু শহরে তিনি চিত্তাকর্ষক ভাষণ দেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশে ফিরে এসে ধর্মবিষয়ে অসংখ্য ভাষণ দিয়েছেন, বহু ধর্মগ্রন্থ লিখেছেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর ফরিদপুরের শ্রীঅঙ্গনকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে দুর্গত, আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের নৈতিকতা অক্ষুন্ন রাখতে সাহায্য করেছেন। তাঁর প্রদত্ত ভাগবতী পরিক্রমার ভাষণাদি ও রচিত গ্রন্থের বিক্রয়লব্ধ অর্থ দ্বারা তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের বহু স্থানে মঠ মন্দির প্রতিষ্ঠা ও তার পরিচালনা করেছেন। কলকাতর নিকটবর্তী রঘুনাথপুর আশ্রমে (মহানাম অঙ্গন) তাঁর দেহাবসান ঘটে।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান