মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতা

Barisalpedia থেকে

বরিশালের খ্যাতনামা জননেতা।জন্ম ১৮৫৮। মৃত্যু ৩ মে ১৯১৯। জন্মস্থান বানারিপাড়া, বরিশাল।

মনেরাঞ্জন গুহঠাকুরতা ১৯০৪ খৃস্টাব্দে গিরিডিতে অভ্র ব্যাবসা শুরু করে ক্রমে ব্যবসায়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। ওই সময় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু হলে কলকাতায় আসেন এবং আন্দোলনে যোগ দেন। সুবক্তা ছিলেন। ১৯০৬ খৃস্টাব্দে ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনির উপর ‘ফুলারী’ নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে তিনি নিজপুত্র চিত্তরঞ্জনকে ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি-সহ শোভাযাত্রায় যোগ দিতে পাঠান (১৪.৪.১৯০৬) এবং পুলিশের লাঠির আঘাতে গুরুতররূপে আহত পুত্রকে সভার সম্মুখে রেখে এক মর্মস্পর্শী বক্তৃতা দেন। মাতৃভূমির পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য বাংলার যুবশক্তির কাছে তাঁর দাবি We want a warrior class and not a race of shop-keepers in Bengal’ (২৭.৭.১৯০৭)। তিনিই প্রথম নিখিল ভারত কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা দেন। গিরিডিতে নিজ অর্থে একটি জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। অগ্নিযুগের প্রাক্কালে এক পয়সা মূল্যে ‘নবশক্তি’ নামে একটি দৈনিক বাংলা পত্রিকা প্রকাশ করেন। বিপিন পালের সঙ্গে নিজে যুগ্ম-সম্পাদক হন। সরকারি আদেশে পত্রিকা ও প্রেস বাজেয়াপ্ত হয়। ফলে তিনি ৫০হাজার টাকা লোকসান দেন। গিরিডি ও কোডারমায় অভ্রখনির জন্য ডিনামাইটের পারমিট থেকে বিপ্লব কর্মে তিনি বারীন ঘোষকে ডিনামাইট দিয়েছিলেন। এ ছাড়া বিপ্লবী দলকেও প্রচুর অর্থ দিতেন। স্বদেশি ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৯০৮ খৃস্টাব্দে থেকে ২ বছরের বেশি রেঙ্গুনের কাছে ইনসেইন জেলে আটক ছিলেন। এই সময় সরকারি কারসাজিতে খনিগুলো তাঁর হস্তচ্যুত হয়। নিঃসম্বল হয়েও গৌরব বোধ করতেন। কাব্য ও সাহিত্য রচনায় হাত ছিল। ‘বিজয়া’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। রচিত গ্রন্থাবলি: ‘আশা প্রদীপ’, ‘কুম্ভমেলা’, ‘নির্বাসন কাহিনী’, ‘স্ত্রী’, ‘মনোরমার জীবন চিত্র’ প্রভৃতি।

তপংকর চক্রবর্তীর গ্রন্থ ‘বরিশালের সংবাদ ও সাময়িকপত্র’ গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি সাপ্তাহিক ‘সহযোগী’ পত্রিকারও সম্পাদক ছিলেন। ব্রহ্মবাদী পত্রিকার ১৩৩৯ ফালগুন সংখ্যার এক বর্ননামতে তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল ‘মনোরমা’।


তথ্যসূত্র: বাঙালি চরিতাভিধান (প্রথম খন্ড)। কোলকাতা: সাহিত্য সংসদ। ২০১৩।