ভোলা ট্রেজারি ট্রাজেডি ১৯৭১

Barisalpedia থেকে

ভোলার মেধাবী কৃতী সন্তান ফ্লাইয়িং লেফটেন্যান্ট মোঃ মাকসুদুর রহমান ২০ এপ্রিল ভোলায় মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং পদাধিকারবলে মুক্তিবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পেয়ে তিনি বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্প পরিদর্শন করে দেখেন তাদের অস্ত্র নেই। খাবার নেই- ভাতা পাচ্ছে না। বাংলাবাজার ট্রেনিং ক্যাম্পে বসে কয়েকজন প্রশিক্ষকদের সাথে আলাপ করে তাদের নিয়ে একটি জিপে ট্রেজারিতে প্রবেশ করে। তার সাথে ছিলেন সুবেদার আবদুল বারী, আনসার কমান্ডার আফছার উদ্দিনসহ ৭ জন। বিমানবাহিনীর অফিসার মাকসুদুর সংগ্রাম কমিটির সাথে কোনো আলোচনা না করে ট্রেজারীতে টাকা আনতে যান। এ খবর হাবিলদার আবদুল মন্নান জানতে পেরে ছাত্র-যুবকদের সংবাদ দেয় যে ট্রেজারী লুট হচ্ছে। হাবিলদার আবদুল মান্নান, হাবিলদার গাজী জয়নাল আবেদীন, সিপাহী আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মান্নান তাদের ৩০৩ লাইফেল দিয়ে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। মাকসুদুর রহমানের দল পাল্টা গুলি ছোড়ে। তবে তারা ফাঁকা গুলি করে। তারা আত্মসমর্পণ করলে সীমার আবদুল মান্নান ও তার দল মাকসুদুর রহমান ও তার দলের মুক্তিযোদ্ধাদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে। উদীয়মান বৈমানিকসহ কয়েকজনের করুণ মৃভ্যু হলো। যে ঘটনা আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা হতে পারতো সেখানে হাবিলদার মান্নান রক্তের হোলি খেললেন। আমার জানা মতে, মান্নানরা পাকবাহিনীকে সন্তুষ্ট করার জন্য ট্রেজারী লুট প্রতিরোধ করার নামে ৪ জনকে হত্যা করেছে। ভোলা ট্রেজারী লুট হয়নি- মাত্র তারা ঢুকেছে সে মুহুর্তে গুজব ছড়িয়ে নির্মম হত্যাকা- ঘটিয়েছে। এডিসি আজিজুল ইসলাম তেমন কোনো সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারেননি। ২৯ এপ্রিল সিওদের বেতনের টাকা নেয়ার জন্য আসতে বলা হয়েছিল। তারা কিন্তু টাকা নিয়ে যায়। সম্পূর্ণ ভুল বুঝাবুঝির ফলে ট্রেজারি ট্রাজেডি হয়েছে। এ ঘটনার কয়েকদিন পর এডিসি আজিজুল ইসলাম বরিশাল ফিরে এলে সেনাবহিনী ৫ মে তাকে হত্যা করে। ২৯ এপ্রিল বেলা ১১টায় ট্রেজারি ট্রাজেডিতে নিহতরা হলেন:১. ফ্লাইয়িং অফিসার মাকসুদুর রহমান, ২. সুবেদার আবদুল বারী, ৩. আনসার কমান্ডার আফসার উদ্দিন। বাংলাদেশে কয়েকটি ট্রেজারি লুট হয়েছে এবং লুটের টাকা মুজিবনগর সরকারের নিকট জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু অব্যবস্থার কারণে পিরোজপুর ও ভোলা ট্রেজারি লুটের ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বেদনাদায়ক ঘটনা।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।