ভেগাই হালদার

Barisalpedia থেকে

ভেগাই হালদার(১৮৫৩-১৯৩৩) ছিলেন নিরক্ষর হয়েও এক কৃতবিদ্য, দেশপ্রেমিক ও সাধক পুরুষ। আগৈলঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা।


জন্ম ও শৈশব

বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলাস্থিত ঐতিহ্যবাহী মানসী ফুল্লশ্রী বর্তমান সুজনকাঠি গ্রামে নমঃশূদ্র পরিবারে ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে, বাংলা ১২৬০ সালের ২১ আষাঢ় মহাত্মা ভেগাই হালদার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সাধু জগন্নাথ হালদার, মাতা শ্যামতারা দেবী। পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল রামনাথ, কিন্তু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে জনৈক বৃদ্ধা ভেগা নামে সম্বোধন করায় ভেগাই নামেই সুপরিচিত হয়ে উঠেন।


দাম্পত্য জীবন ও পরিবার

কিশোর বয়সেই গোয়াইল গ্রামের স্বর্গীয় নদীরাম জয়ধরের কন্যা তারামণি' র সাথে শুভ পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। পারিবারিক জীবনে ভেগাই হালদারের দুই পুত্র ও এক কন্যা ছিল। পুত্রদ্বয়ের নাম ছিল অশ্বিনীকুমার ও শ্রীদাম। কন্যা সরযুবালা।


কর্মজীবন ও সাধনা

মানসী ফুল্লশ্রী গ্রামে এক হরিসভায় মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্তের সাহচর্যে আসেন ভেগাই হালদার। ভেগাই হালদার তাঁর কথায় আকৃষ্ট হন। অন্যদিকে আরেক মানবহিতৈষী কৈলাসচন্দ্র সেন মহোদয়ের সান্নিধ্যে এসেও ভেগাই হালদারের জীবনে পরিবর্তন সূচিত হয়। নিরুদ্দেশ পিতার সন্ধানে ভেগাই বিভিন্ন তীর্থ ভ্রমণ শেষে ওড়াকান্দিতে শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

শিক্ষাপ্রদীপ কৈলাশচন্দ্র সেনের নিকট শিক্ষামন্ত্রে দীক্ষা, সত্য, প্রেম, পবিত্রতার বাণী প্রচারক ধর্মপ্রাণ অশ্বিনীকুমার দত্তের সংস্পর্শে ভগবদ্ভক্তির উন্মেষ এবং শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের নিকট মহানামমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে নবজন্ম লাভ করলেন ভেগাই হালদার।

দেশের সেবায় সাধু ভেগাই হালদার নিবেদিত হলেন। ১৯০৫ সালে বরিশালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত হন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ভগিনী নিবেদিতার সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সেবাব্রতে অংশগ্রহণ করেন। কৃষকবন্ধু ভেগাই হালদারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কৃষকদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে আগৈলঝাড়ায় রায়ত কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন খান বাহাদুর হাশেম আলী খান। পরিচালনা ছিলেন বাণীকণ্ঠ সেন, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান ছিলেন। এই সভায় যোগদান করেছিলেন ভারতবিখ্যাত পণ্ডিত ও কংগ্রেস নেতা মদনমোহন মালব্য এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগিনেয়ী প্রখ্যাত সমাজসেবিকা সরলা দেবী। আনন্দবাজার, অমৃতবাজার প্রভৃতি পত্রিকায় ভেগাই হালদারে নাম গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়।

১৯১৮ সালে বরিশালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা করেন। পরবর্তীকালে দেশবন্ধুর কলকাতার বাসায় ভেগাই হালদার কিছুদিন কাটিয়েছিলেন। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সাথেও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর আনুকুল্যেই ১৯১৯ সালে আগৈলঝাড়া এম. ই. স্কুল ( মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়)স্থাপন করেছিলেন। ১৯২৬ সালে এটি হাই ইংলিশ স্কুল ( উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়) হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে শূদ্র সম্প্রদায়ের লোকদের এই স্কুলের অনুমোদন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাতিল করে। পরবর্তীতে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয় স্থায়ী মঞ্জুরী লাভ করে, যা ভেগাই হালদার দেখে যেতে পারেননি।


মৃত্যু

১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ ১৩৪০ বঙ্গাব্দের ২১ আষাঢ় আগৈলঝাড়া বাজারে অবস্থিত গৃহেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন মহাত্মা ভেগাই হালদার।



তথ্যসূত্র : " আলোর দিশারী মহাত্মা ভেগাই হালদার " - বিনোদবিহারী জয়ধর।