ভীমরুলির যুদ্ধ, ঝালকাঠি, ১৯৭১

Barisalpedia থেকে

১৯৭১ সালের ৩ জুন সিরাজ সিকদার ভীমরুলি স্কুলে এক সভায় পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন পার্টি বিলুপ্ত করে পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি গঠন করেন। এ সভায় হুমায়ুন কবীর, সেলিম শাহ নেওয়াজ, বিপ্লব, মজিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সিরাজ সিকদার ঝালকাঠি শহরের পালবাড়ীতে শক্ত ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন সেলিম শাহনেয়াজ। ঝালকাঠি পতনের পর সিরাজ সিকদার তার বাহিনীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। ক্যাম্পগুলোর মধ্য ছিল শতদশকাঠি, ভীমরুলি, আতা, মাদ্রা, কীর্তিপাশা। এ সময় সিরাজ সিকদারের ছদ্মনাম ছিল সালাম। তার দলের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন হুমায়ুন কবীর, ফিরোজ কবীর, রেজায়ে ছত্তার ফারুক, মজিবুল হক মেহেদী, বিপ্লব, আসাদ, মজিদ, আনোয়ার, নীলু। পাক বাহিনী কীর্তিপাশা আক্রমণ করলে সিরাজ সিকদারের দল আটঘর-কুড়িয়ানা চলে যায়। পাক পাহিনী মে মাসে মাঝে মাঝে পেয়ারা বাগানে যেত। সিরাজ সিকদার একদনি খবর পেলেন পাকসেনারা স্পীড বোট ও গানবোট নিয়ে পেয়ারা বাগানের দিকে আসছে। সিরাজ সিকদারের বাহিনী পাকসেনাদের আক্রমণ করে। ঘটনাস্থলে ৭ জন পাকসেনা নিহন হয়। মুক্তিযোদ্ধারা একজন পাকসেনা ধরে ফেলে। তাকে বাঁশে বিদ্ধ করে বাউকাঠি হাটে ঘুরিয়ে দেখানো হয়। ঝালকাঠি ও স্বরূপকঠি থানার মধ্যবর্তী আটঘর কুড়িয়ানায় পেয়ারা বাগান অবস্থিত। ১৯৭১ সালে হাজার হাজার হিন্দু নির্যাতিত হয়ে পেয়ারা বাগানে আশ্রয় নেয়। পেয়ারা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। এখানে সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টির ঘাঁটি ছিল। ২৬ এপ্রিল বরিশাল শহর থেকে ক্যাপ্টেন বেগের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা কুড়িয়ানায় অবস্থান নেয়। শর্শিনার পীরের আহবানে ঝালকাঠি থেকে দুটি লঞ্চ ভর্তি পাকসেনা কুড়িয়ানা নদী দিয়ে শর্শিনায় যাচ্ছিল। এ সংবাদ পেয়ে নৌ কমান্ডো মাহফুজ আলম বেগ, শচীন কর্মকার, তোফাজ্জল হক চৌধুরী, জিএম কবীর, চুন্নু, সেন্টু, টিপু প্রমুখ লঞ্চ আক্রমণে অংশ নেন। সিরাজ সিকদার ও বেগ লঞ্চ আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্রের নিকট টিকতে পারেনি। এ অভিযানে সর্বহারা পার্টির মুজিবুল হক মেহেদীসহ কয়েকজন ধরা পড়ে এবং তাদের ঝালকাঠি থানায় আনা হয়। থানায় প্রবেশের সময় তারা জয় বাংলা ধ্বনি দিতে দিতে যান। পাকবাহিনী তাদের হত্যা করে। আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগানে পটুয়াখালরি ম্যাজিস্ট্রেট সিআর দত্তের শালিকা আশ্রয় নিয়েছিল। তাকে ধরার জন্য স্পীডবোটে আর্মি আটঘর কুড়িয়ানায় আসে। সর্বহারারা স্পীডবোট আক্রমণ করে দখল নেয় এবং সৈন্যদের হত্যা করে। পাকবাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে একদল সৈন্য ও রাজাকার দালাল নিয়ে পেয়ারা বাগান আক্রমণ করে। পাক বাহিনী ও শত শত রাজাকার পেয়ারা বাগান কেটে ধ্বংস করে এবং হিন্দুদের হত্যা করে। মুক্তিবাহিনীকে খুঁজে বের করার জন্য পেয়ারা বাগান ধ্বংস করে। এ সময় হিন্দু নরনারীরা জঙ্গলে পালিয়ে থাকে। পেয়ারা বাগানে পাকবাহিনী ও দালালেরা ১০ হাজার হিন্দু নারী-পুরুষকে হত্যা করে।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫