"ব্রেগো"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
("ব্রেগো একজন ইংরেজ সার্জেন্ট যিনি কোম্পানি শাসনামলে বরিশ..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
(বাকেরগঞ্জে ব্রেগোর মিশন)
 
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
 
== বাকেরগঞ্জে ব্রেগোর মিশন ==
 
== বাকেরগঞ্জে ব্রেগোর মিশন ==
  
পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজ বণিকরা বাকেরগঞ্জের বন্দরগুলো দখল করে নেয়। ইংরেজ বণিকরা দেশীয় বণিকদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। তারা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার জন্য ছাড়পত্র বা দস্তক ব্যবহার কত। অথচ দেশীয় বণিকদের শুল্ক দিতে হতো। কোম্পানি ও তাদের কর্মচারীদের অত্যাচারে বাকেরগঞ্জ, সুতালরী ও বারৈকরণ বন্দর পূর্ব গৌরব হারিয়ে ফেলে এবং দেশীয় বণিকরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের বিরুদ্ধে বাংলার নবাব মীর কাশিম প্রতিবাদ জানান এবং এ নিয়ে তার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধও হয়। বাকেরগঞ্জ বন্দরে ইংরেজ বণিক ও তাদের গোমস্তাদের অত্যাচার এত তীব্র ছিল যে, ১৭৬২ খ্রিঃ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার গভর্নর ভেন্সিটারট এ অত্যাচার বন্ধ করার জন্য সার্জেন্ট ব্রেগোকে প্রেরণ করেন।
+
পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজ বণিকরা বাকেরগঞ্জের বন্দরগুলো দখল করে নেয়। ইংরেজ বণিকরা দেশীয় বণিকদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। তারা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার জন্য ছাড়পত্র বা দস্তক ব্যবহার করত। অথচ দেশীয় বণিকদের শুল্ক দিতে হতো। কোম্পানি ও তাদের কর্মচারীদের অত্যাচারে বাকেরগঞ্জ, সুতালরী ও বারৈকরণ বন্দর পূর্ব গৌরব হারিয়ে ফেলে এবং দেশীয় বণিকরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের বিরুদ্ধে বাংলার নবাব মীর কাশিম প্রতিবাদ জানান এবং এ নিয়ে তার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধও হয়। বাকেরগঞ্জ বন্দরে ইংরেজ বণিক ও তাদের গোমস্তাদের অত্যাচার এত তীব্র ছিল যে, ১৭৬২ খ্রিঃ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার গভর্নর ভেন্সিটারট এ অত্যাচার বন্ধ করার জন্য সার্জেন্ট ব্রেগোকে প্রেরণ করেন।
  
 
== গভর্নর ভেন্সিটারটের নিকট মিঃ ব্রেগোর পত্র ==
 
== গভর্নর ভেন্সিটারটের নিকট মিঃ ব্রেগোর পত্র ==

০৮:০৫, ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

ব্রেগো একজন ইংরেজ সার্জেন্ট যিনি কোম্পানি শাসনামলে বরিশালে কর্মরত ছিলেন।


বাকেরগঞ্জে ব্রেগোর মিশন

পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজ বণিকরা বাকেরগঞ্জের বন্দরগুলো দখল করে নেয়। ইংরেজ বণিকরা দেশীয় বণিকদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। তারা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার জন্য ছাড়পত্র বা দস্তক ব্যবহার করত। অথচ দেশীয় বণিকদের শুল্ক দিতে হতো। কোম্পানি ও তাদের কর্মচারীদের অত্যাচারে বাকেরগঞ্জ, সুতালরী ও বারৈকরণ বন্দর পূর্ব গৌরব হারিয়ে ফেলে এবং দেশীয় বণিকরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের বিরুদ্ধে বাংলার নবাব মীর কাশিম প্রতিবাদ জানান এবং এ নিয়ে তার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধও হয়। বাকেরগঞ্জ বন্দরে ইংরেজ বণিক ও তাদের গোমস্তাদের অত্যাচার এত তীব্র ছিল যে, ১৭৬২ খ্রিঃ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার গভর্নর ভেন্সিটারট এ অত্যাচার বন্ধ করার জন্য সার্জেন্ট ব্রেগোকে প্রেরণ করেন।

গভর্নর ভেন্সিটারটের নিকট মিঃ ব্রেগোর পত্র

মিঃ ব্রেগো ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে তারিখে বাকেরগঞ্জে কোম্পানির বণিকদের অত্যাচোরের চিত্র তুলে ধরে গভর্নর ভেন্সিটারটের নিকট জানিয়ে এক পত্র লেখেন। পত্রের কিছু অংশ নিম্নরূপ।

”এ স্থানের (বাকেরগঞ্জ) পরিস্থিতির জন্য আমি (ব্রেগো) আপনাকে (ভেন্সিটারট) লিখতে বাধ্য হচ্ছি এবং ভবিষ্যতে কি ব্যবস্থ গ্রহণ করব সে জন্য আপনার উপদেশ চাচ্ছি।

আমার ওপর নির্দেশ ছিল যে, যদি কোন ইউরোপীয় বণিক বা তাদের কর্মচারী অত্যাচার করে তাহলে কোন রকম আপত্তি না শুনে তাদের যেন কলিকাতায় পাঠানো হয়। কঠোর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আমি ভদ্রলোকদের কয়েকজন গোমস্তাকে (যখনই কোন সাধারণ ঘটনা দেখা দেয়) শান্তভাবে কাজ করার জন্য ন¤্রভাবে অনুরোধ জানাই। বার বার নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও কোন কাজ হচ্চে না। অধিকন্তু তারা তাদের মনিবদের নিকট লিখিত অভিযোগ করছে যে, আমি তাদেরকে দায়িত্ব পালনে বাধা দিচ্ছি এবঙ তাদের সাথে অন্যায় আচরণ করছি। ফলে কয়েকজন মনিব আমাকে আপত্তিকর পত্র দিয়ে ভীতি প্রদর্শন করেছে এবং বলছে যে, আমি যদি তাদের কর্মচারীদের বাধা দিই তা হলে তারা এমন প্রতিশোধ নেবে যাতে পরে আমাকে অনুশোচনা করতে হবে। তারা এ কথা বলে শেষ করেনি। তাদের গোমস্তারা এখানে প্রচার করছে যে, আমি যদি তাদের কাজে বাধা দিই তাহলে তারা একই রকম আচরণ করবে। তাদের এ আচরণের অনেক সত্য প্রমাণ আমার নিকট আচে।

আমি তাদের কোথায় বাধা দিয়েছি তা আপনাকে জানাচ্ছি। অতীতে এ স্থান (বাকেরগঞ্জ) একটি বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। কিন্তু বর্তমানে নি¤েœর কার্যাবলীর জন্য বানিঝ্য ধ্বংস হতে যাচ্ছে। যখন একজন বণিক তার গোমস্তাকে এখানে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পাঠায়, তখন সে নিজকে এমন শক্তিশালী মনে করে যে, স্থানীয় জনগণ তার পণ্য ক্রয় করতে বা তাদের পণ্য তার নিকট বিক্রি করতে বাধ্য। কেউ অস্বীকার করলে (যখন তার ক্ষমতা থাকে না) তাকে বেত্রাঘাত করা হয়। অথবা তখনই তাকে বন্দী করা হয়। তারা বাধ্য থাকলেও এখানে শেষ হয় না। দ্বিতীয়বার শক্তি প্রয়োগ করে সকল প্রকার বাণিজ্য নিজেরা দখল করে নেয়। তারা যে সকল পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে তা অন্য কোন ব্যবসায়ী ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। যদি দেশীয় বণিকরা তা করে তবে তাদের ওপর একই রকম শাস্তি প্রদান করা হয়। তারা যদি কোন দ্রব্য ক্রয় করে তবে অন্য বণিকদের তুলনায় কম মূল্য দেবার চেষ্টা করে এবং অনেক সময় দ্রব্যের কোন মূল্য দেয় না। এ সময় আমি হস্তক্ষেপ করলে তারা অভিযোগ করে। আমি এ রকম অনেক অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করতে পারি যা প্রত্যেকদিন বাঙালী গোমস্তরা করে থাকে। এ কারণে এ স্থান জনশূন্য হয়ে পড়ছে। প্রত্যেক দিন অনেকে এ বন্দর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। এ সেই বন্দর যেখানে একদিন প্রচুর পণ্য পাওয়া যেত; বর্তমানে সেখানে ব্যবহার্য তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তাদের পিয়নেরা গরিবদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করে। জমিদারেরা যদি বাধা দেয় তবে তাদের প্রতি একই রকম ব্যবহার করার ভয় দেখানো হয়। পূর্বে জনতার দরবারে বিচার পাওয়া যেত। বর্তমানে প্রত্যেক গোমস্তা বিচারক হয়েছে এবং প্রত্যেক বিচারালয়ে পরিণত হয়েছে। তারা জমিদারদের জরিমানা করে টাকা আদায় করে এ বলে যে, তাদের পিয়নের সাথে ঝগড়া হয়েছে বা তাদের টাকা পয়সা নিজেরা আত্মসাত করে বলে যে, তাদের ডাকাতি হয়েছে। আমার বিশ্বাস কোন গোমস্তার ক্ষমতা এত বেশি হয়নি যে, তারা সরকারের সাথে যা খুশি তাই করবে। গোমস্তাদের এ সকল ব্যবহারের কথা জানিয়ে আপনাকে এ অনুরোধ করছি, যদি আমি আপনার আদেশ কার্যকর করি তবে আমি নির্দোষ থাকব। শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি।”


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।