বোরহানউদ্দিন থানা দখল যুদ্ধ

Barisalpedia থেকে

দেউলা যুদ্ধের পর পাকবাহিনী বোরহানউদ্দিন থানায় অবস্থান করত না। ১৮ অক্টোবর ভোরে ১শ’ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কমান্ডার সুবেদার সিদ্দিকুর রহমান বোরহানউদ্দিন থানা ঘিরে ফেলেন। থানার ওসি সাদা পতাকা উড়িয়ে দেয়। আলোচনার জন্য মোতাহার উদ্দিন মাস্টার এমপিএ, রেজায়ে করিম চৌধুরী এমপিএ, সিও আজিজুল ইসলাম প্রমুখ থানার সাথে আলোচনা করে থানার লোকজনকে আত্মসমর্পণ করান। ৭০টি রাইফেল ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। এর পরে পাকবাহিনী বোরহাউদ্দিন থানা পুনর্দখলের জন্য যুদ্ধ করে ২৯ অক্টোবর। ১৮ অক্টোবরের পর থেকে বোরহানউদ্দিন থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে ছিল। ভোলার মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সকল দল বোরহানউদ্দিনে অবস্থান করছিল। চরফ্যাশনের আবুল কাশেমের দল ছিল বোরহাউদ্দিন হাইস্কুল মাঠে। হাবিলদার মজিবুর রহমানের দল ছিল বোরহানউদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। হাইকমান্ড সিদ্দিকুর রহমানের ৫শ’ যোদ্ধা বোরহানউদ্দিন থানার আশপাসে অবস্থান করছিলেন। ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দলের নিকট আধুনিক অস্ত্রও ছিল। ভোলার সার্কেল অফিসার ডেভ মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতা করতেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের ধারণা ছিল পাকবাহিনী স্থলপথে ভোলা থেকে আসতে পারে। কিন্তু নদীপথে যে আসতে পারে তা তারা ভাবেননি। ২৯ অক্টোবর ভোরে পাক আর্মিরা লঞ্চ ও গানবোটে বোরহানউদ্দিন পৌঁছে। মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ জানতেন না। পাকবাহিনী থানার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ছুড়লে পাকবাহিনী বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করে। মুক্তিযোদ্ধা তানসেন ও জলিল পাকবাহিনীর গাড়িতে গুলি করে। পাকবাহিনী গুলি করলে তাদের শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। পাকবাহিনী বোরহানউদ্দিন বাজারে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। তারা বোরহানগঞ্জও পুড়ে দেয়। তারা ২৯ অক্টোবর বোরহানউদ্দিন থানা সদর ও আশপাশে ৭১ জনকে হত্যা করে। তারা বোরহানউদ্দিনের পোস্টমাস্টার সৈয়দ আহমদকে গুলি করে হত্যা করে। পাকসেনারা দুপুরের পরে চলে যায়। একদল থেকে যায় এবং তারা সিও ডেভের অফিসে ক্যাম্প করে।

বোরহানউদ্দিন থানার যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী পরাজিত হয়ে দূরে অবস্থন নেয়। বাজার পুড়ে ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন: ১. কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান ২. বড়ভাই আকবর আলী ৩. জুলফিকার আলী ৪. শামসুল হক ৫. ইব্রাহিম মিয়া ৬. আবুল কাশেম ৭. মোহাম্মদ সিদ্দিক ৮. আছমত ৯. জিয়াউল হক ১০. চুন্নু প্রমুখ।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খÐ)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।