বেল, নিকোলাস বিটসন
নিকোলাস ডড বিটসন বেল (Nicholas Dodd Beatson Bell) বাকেরগঞ্জের এক জনদরদী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলার গভর্নর কাউন্সিলের মেম্বার হয়েছিলেন এবং আসামের চিফ কমিশনার হয়েছিলেন। সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর বিখ্যাত ‘পাদটীকা’ গল্পে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি মজা করে তাঁর সংক্ষেপিত নাম এন. ডি. বিটসন বেল- এর বাংলা পূর্ণরূপ বলতেন ‘নন্দদুলাল বাজায় ঘণ্টা’।
পরিচ্ছেদসমূহ
শিক্ষা
১৮৬৭ সালের ১৯ জুন তিনি স্কটল্যান্ডের আবেরদুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম এন্ড্রু বিনটসন বেল। তাঁর লেখাপড়া এডিনবার্গ একাডেমিতে এবং পরবর্তী সময়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বেলিওল কলেজে উইলিয়াম মার্কবির তত্ত্বাবধানে।
সিভিল সার্ভিস
কর্মজীবনে তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। ১৯০১ সালে নিকোলাস ডড বিটসন বেল বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯০১ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত যত জন বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে জনদরদী ও সমাজহিতৈষী ছিলেন। সিরাজউদ্দীন আহমেদ তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে তিনি ১০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু একই বইয়ের পর পৃষ্ঠায় বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের যে তালিকা তিনি সন্নিবেশ করেছেন সেখানে দেখিয়েছেন যে তাঁর কার্যকাল ছিল শুধু ১৯০১ সাল অর্থাৎ ১ বছর মাত্র। বোঝা যাচ্ছে এর কোনো একটি তথ্য ভুল রয়েছে। সম্ভবত সারণিতে কার্যকাল ১৯০১ সাল দেখানোর বিষয়টি ভুল রয়েছে। হয়তো এটি ১৯০১ থেকে ১৯১১ হবে।
বাকেরগঞ্জে তাঁর জন হিতৈষণার দুয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৮৯৮ সালে নলছিটি থানায় প্লেগ রোগ দেখা দেয়। এই সময় বিটসন বেল বাকেরগঞ্জে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিম্নতর কোনো পদে হয়তো দায়িত্বরত ছিলেন। নলছিটিতে কোনো এক পরিবারের কয়েকজন লোক প্লেগে প্রাণ হারায়। প্লেগে মারা যাওয়ার কারণে তাদেরকে সৎকার করতে কেউ আসছিলো না। এ কথা শুনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মি. বিটসন বেল মৃতদেহগুলো সৎকার করার ব্যবস্থা করেন। বেল ইসলামিয়া হোষ্টেল, ব্রজমোহন কলেজ ও রাজচন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়। বরিশালের জনগণের জন্য তিনি অনেক কল্যাণকর কাজ করেন। খেলাধুলার জন্য তিনি বরিশাল শহরের দক্ষিণ প্রান্তে একটি মাঠ নিমার্ণ করেন যা বেলস পার্ক নামে আজও জনগণের কাছে খ্যাত। তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি ছিল দশসালা জরিপ। ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন-জুলাই মাসে বাংলার ছোট লাট ন্ড্রু হেন্ডার লিথা ফ্রেজার বরিশালে আগমন করেন এবং তিনি জরিপ কাজ পরিদর্শন করে বেল সাহেবের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
১৯১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর তিনি বাংলার গভর্নর কাউন্সিলের সদস্য হন। ১৯১৮ সালে তিনি আসামের চিফ কমিশনার পদে আসীন হন। ১৯২১ সালে তিনি আসামের প্রথম গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯১৯ সালের নববর্ষের সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি ‘নাইট কমান্ডার অব দি অর্ডার অব দি ইন্ডিয়ান এম্পায়ার’ সম্মাননায় ভূষিত হন এবং ১৯২১ সালের নববর্ষের সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি ‘নাইট কমান্ডার অব দি অর্ডার অব দি স্টার অব ইন্ডিয়া’ সম্মাননায় ভূষিত হন।
পাদ্রী জীবন
হঠাৎ প্রশাসনের এই সব বিশাল পদ ছেড়ে মি. বিটসন বেল ধর্মকর্মে নেমে পড়েন। একটি গ্রামের গির্জায় তিনি মিশনারি কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯২১ সালে কোলকাতায় এক গির্জায় তাঁকে ‘ডিকন’ পদে বরণ করা হয়। ১৯২২ সালে তিনি প্রিস্ট পদে বৃত হন। এরপর তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যান। সেখানে হুইটবি শহরে কিউরেটের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মৃত্যু
১৯৩৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাকেরগঞ্জের এই আপন লোকটি ইংল্যান্ডের এসেক্স শহরে মৃত্যু বরণ করেন।
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০। ২। উইকিপিডিয়া।