বি এম (ব্রজমোহন) কলেজ

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১১:১৪, ২৫ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত সংস্করণে

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

১৮৫৩ সালে বরিশাল জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অঞ্চলে আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে নবজাগরণ শুরু হয় তারই ধারাবাহিকতায় বরিশালের তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাবু রমেশচন্দ্র দত্তের অনুরোধে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুন অশ্বিনী কুমার দত্ত তাঁর বাবা ব্রজমোহন দত্তের নামে সত্য, প্রেম, পবিত্রতার মহান আদর্শে ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বি এম স্কুল ক্যাম্পাসে ব্রজমোহন কলেজ স্থাপন করেন।

বি এম কলেজ.jpg


প্রতিষ্ঠাকালীন সংকট

ব্রজমোহন কলেজ ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে অশ্বিনী ভবনে শুরু হয়। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে বিএম কলেজ ও বিএম স্কুল বর্তমান বিএম স্কুল ভবনে স্থানান্তরিত হয়। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনে অশ্বিনী কুমার দত্তের আহŸানে ব্রজমোহন বিদ্যালয় ও ব্রজমোহন কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকগণ ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছাত্ররা রিজলী সার্কুলার ভঙ্গ করে স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেয় তখন কলেজের বিরুদ্ধে কতিপয় অভিযোগ উত্থাপন করা হয় এবং মঞ্জুরি কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চলে। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে ডা. পি কে রায় বিএম কলেজ পরির্দশন করেন এবং জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে কতকগুলো অভিযোগ দেখান। কয়েক মাস পরে মিঃ জেমস ও অধ্যাপক কানিংহাম বিএম কলেজ পরির্দশন করে সুখ্যাতি রিপোর্ট দেন। পূর্ববঙ্গ সরকার কলকাতা বিশ্¦বিদ্যালয় ও শিক্ষা সচিবের নিকট বিদ্যালয় ও কলেজ সর্ম্পকে কতকগুলো অভিযোগ আনয়ন করে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলার স্যার আশুতোষ মুখার্জী, বিচারপতি গুরুদাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সত্যেন্দ্র প্রসন্ন সিংহকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ সময় গুজব হলো যে কলেজ উঠে যাবে। ছাত্রদের অনেকে অন্য কলেজে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। তখন অধ্যক্ষ রজনীকান্ত গুহ ছাত্র ও অভিভাবকদের জানালেন, প্রয়োজন হলে ১০ টাকা বেতনে শিক্ষকতা করবেন তবুও কলেজকে টিকিয়ে রাখবেন।


ফাদার ই এল স্ট্রং- এর উদ্যোগে প্রাথমিক সংকট উত্তরণ

১৪ মাস পর অশ্বিনী কুমার দত্ত মুক্তিলাভ করে বরিশাল আসেন। তিনি ফিরে এসে দেখলেন কলেজের ছাত্ররা বিএ পাস করে চাকরি পায় না, বৃত্তি পায় না এবং ছাত্রসংখ্যা কমে গেছে। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে আইএ পরীক্ষায় দেবপ্রসাদ ঘোষ প্রথম হয়েও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হন। ১৯১০-১১ খ্রিষ্টাব্দে কলেজের ছাত্র সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬৩ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি পূরণে ব্যর্থ ও আর্থিক কারণে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসের রসায়ন শাস্ত্র ও অধ্যাপনা তুলে দিতে বাধ্য হয়। এমনকি বিএ ক্লাস তুলে দেবার আলোচনা করা হয়। এ সময় বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনের ফাদার ই এল স্ট্রং কলেজটি রক্ষার জন্য পূর্ববঙ্গ সরকার ও অশ্বিনী কুমার দত্তের সাথে আলাপ-আলোচনা চালান। তদানীন্তন চীফ সেক্রেটারী মিঃ এইচ লিমেসুরিয়ার বরিশালে আগমন করে অশ্বিনী কুমারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সরকার প্রস্তাব করল, ব্রজমোহন কলেজকে মাসিক ২২ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হবে। কলেজ ভবন নির্মাণের ব্যয় সরকার বহন করবে। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষ রজনীকান্ত গুহ, অধ্যাপক সতীশ চন্দ্র্র চট্টোপাধ্যায়, বিএম স্কুলের শিক্ষক জ্ঞানচন্দ্র চক্রবর্তী, শ্রীশচন্দ্র দাশ ও রামচন্দ্র গুপ্ত- এই ৫ জনকে কার্যচ্যুত করতে হবে। অশ্বিনী কুমার অনিচ্ছা সত্তে¡ও এ প্রস্তাবে রাজি হতে বাধ্য হন।


কলেজের দায়িত্বভার কাউন্সিল অব ট্রাস্টির ওপর অর্পণ

ফাদার ই এল স্ট্রং এর মধ্যস্থতায় সংকট উত্তরণের পরবর্তী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অশ্বিনী কুমার দত্ত একটি কমিটির নিকট কলেজের দায়িত্বভার তুলে দেন। পূর্বে স্কুল ও কলেজের স্বত্বাধিকারী ছিলেন অশ্বিনী কুমার দত্ত ও তার ভ্রাতা স্বর্গীয় কামিনী কুমার দত্ত। কামিনী কুমারের স্ত্রী সুশীলাবালা পুত্র সুকুমার, সুশীল ও সরল কুমারের গার্ডিয়ান ছিলেন। কলেজ গভর্নিংবডির সদস্য ছিলেন অশ্বিনী কুমার দত্ত, অধ্যক্ষ শ্রী অমৃত লাল মুখার্জী, ফাদার এডম্যান্ড লিওনড স্ট্রং, ড. তারিণী কুমার দত্ত, গণেশ চন্দ্র দাশগুপ্ত, অধ্যাপক কালিপ্রসন্ন ঘোষ, কিশোরী লাল সেন, চন্দ্র ওমাহন চ্যাটার্জী, জেমস রায়। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ মার্চ কলেজের এই স্বত্বাধিকারীরা দলিল করে কলেজের কাউন্সিল অব ট্রাষ্টির হাতে বিএম কলেজের ভার অর্পণ করেন। এ সময় জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন এ ডবিøউ বোথান। শর্ত ছিল তিনি কলেজের গভর্নিংবডির সদস্য থাকতে পারবেন না। ১৯১২ সালে গঠিত বিএম কলেজের কাউন্সিল অব ট্রাস্টির সদস্যবৃন্দ হলেন: ১. রেভারেন্ড ই এল স্ট্রং এমও, প্রেসিডেন্ট; ২. জেমস ই বার; ৩. খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ বিএল; ৪. অশ্বিনীকুমার দত্ত, এমএ বিএস; ৫. তারিনীকুমার গুপ্ত, এলএসএস; ৬. চন্দ্রমোহন চ্যাটার্জি, বিএল; ৭. সতীশ চন্দ্র দাশগুপ্ত, এলএমএফ; ৮. গনেশচন্দ্র দাশগুপ্ত, এমএপিএফ; ৯. কিশোরী লাল সেন, বিএ, সাব জজ; ১০. নৃত্যলাল মুখার্জি, অধ্যক্ষ; ও ১১. কালীপ্রসন্ন ঘোষ, বিএ, সচিব। এভাবে সমঝোতার পরে সরকার স্বদেশবান্ধব সমিতি, দারিদ্র বান্ধব সমিতি প্রভৃতি রক্ষা করতে সম্মত হয়।


বি এম কলেজের প্রাথমিক অগ্রযাত্রা

১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে সরকার কলেজের ভবন নির্মাণের জন্য এক লক্ষ টাকা ও মাসিক ১২০০০ টাকা অনুদান মঞ্জুর করে। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের জুন হতে বিএম কলেজ সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজে পরিণত হয়। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ হতে কলেজ উন্নতির পথে চলতে থাকে। ১৯১৭ সালে ৫০ বিঘা জমির উপরে কলেজটি তার বর্তমান ক্যাম্পসে স্থানান্তরিত হয়। ১৯১৮ সালে সরকারি অর্থে ব্রজমোহন কলেজ ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়। উদ্বোধন করেন জে আর বøাকউড এলএলবি আইসিএফ। ডিজাইন করেন এইচ অব্রিএন সি এন্ড এমএমই। ঠিকাদার ছিল বিএন বসু, কলকাতা। উল্লেখ্য, পরে এই ভবনের পুনঃনির্মাণ হয় ১৯৯১ সালে।

কলেজের সভাপতি ফাদার স্ট্রং ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির পদ হতে ইস্তফা দেন। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে কলেজে ইংরেজী ও দর্শনে, ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত ও গণিতে, ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে রসায়ন শাস্ত্র ও পরে অর্থনীতিতে অনার্স খোল হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় বিএম কলেজ রেকর্ড সৃষ্টি করে বাংলার অক্সফোর্ড বলে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে কলেজের কৃতী ছাত্র দেবপ্রসাদ ঘোষের ভগ্নি শীমতী শান্তিসুধা ঘোষ গণিত শাস্ত্রে অনার্স পরীক্ষয় প্রথম স্থান অধিকার করেন ও ইশান স্কলারশীপ লাভ করেন । কলেজের ছাত্র সংখ্যা দ্রæত বৃদ্ধি পায়। ফরিদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও খুলনা জেলার অধিকাংশ ছাত্র বিএম কলেজে পড়াশোনা করত। ১৯২১-২২ খ্রিষ্টাব্দে কলেজের ছাত্র সংখ্যা ছিল ৬৪৫ জন, ১৯২৫-২৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৩৪২ এবং ১৯৩০-৩১ খ্রিষ্টাব্দে ছিল ১০৩৬ জন। চল্লিশের দশকে কলেজের ছাত্র সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই হাজার। ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ছিল বি এম কলেজের স্বর্ণযুগ। অধ্যক্ষ ব্রজেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায়, রজনীকান্ত গুহ, বাবু সতীশচন্দ্রসহ সে সময়ের এ কলেজের শিক্ষকগণের পাÐিত্য এবং পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ঈর্ষণীয় ফলাফল এ শিক্ষকগণের জন্য প্রচুর সুনাম বয়ে আনে। এই অধ্যাপকদের প্রজ্ঞা ও শিক্ষা পদ্ধতির উন্নত মান লক্ষ্য করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ ১৯২২ সালে ইংরেজি ও দর্শনে; ১৯২৫ সালে সংস্কৃত ও গণিতে; ১৯২৮ সালে রসায়নে; ১৯৪০ সালে অর্থনীতিতে; এবং ১৯৪৫ সালে ইতিহাসে অনার্স কোর্স চালু করে। তখন এ কলেজে শিক্ষার মান এতটা উন্নত ছিল যে, অনেকে একে বাংলার অক্সফোর্ড বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলার ছোট লাট স্যার উডবর্ন সরকারি শিক্ষা বিবরণীতে লিখেছিলেন, 'This mofussil College promises some day to challenge the supremacy of the Metropolitan (Presidency) College'. বিংশ শতকের প্রথম বা দ্বিতীয় দশকে কোনো এক সময় বি এম কলেজের সাফল্যের দিকে তাকিয়ে বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিটসন বেল লিখেছিলেন, " Barisal may be said to be the Oxford of East Bengal."

বিভাগোত্তর সংকট

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্র কমে যায়। এ স্বল্পসংখ্যক ছাত্রের বেতনে অনার্স শ্রেণীর জন্য নতুন শিক্ষক নিযুক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, কলেজটি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বি-বার্ষিক অনার্স কোর্সের পরিবর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রি-বার্ষিক অনার্স কোর্সের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় পাঠ্যক্রম পরিচালনাতেও সমস্যা দেখা দেয়। ফলে একমাত্র গণিত ছাড়া বাকি বিষয়গুলো অনার্স কোর্স ১৯৫০ সালে তুলে দিতে হয়। ১৯৫২ সালে গণিতের অনার্স কোর্সও বিলুপ্ত করা হয়।

পুনরায় জেগে ওঠা

১৯৬৪ সালে ব্রজমোহন কলেজে পুনরায় অর্থনীতিতে অনার্স কোর্স খোলা হয়। ১৯৬৫ সালের ১ জুলাই কলেজটি প্রাদেশিকীকরণ অর্থাৎ সরকারিকরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১৮ আগস্ট বিএম কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ঘোষণা করা হয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে (১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষে) সরকারি ব্রজমোহন কলেজে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা এই সাতটি বিষয়ে অনার্স এবং বাংলা, অর্থনীতি, ইতিহাস ও রসায়ন এই চারটি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স খোলা হয়। ১৯৭৫ সালে ইতিহাসে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। ১৯৮৯ সালে ইংরেজি ও মৃত্তিকাবিজ্ঞানে মাস্ট্রার্স ১ম পর্ব এবং ১৯০০ সালে ইংরেজি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, গণিত, মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান-এই সাতটি বিষয়ে অনার্স আর গণিতের মাস্টার্স ১ম পর্ব এবং ১৯৯০ সালে ইংরেজি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, গণিত, মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান-এই সাতটি বিষয়ে অনার্স আর গণিতের মাস্টার্স ১ম পর্ব পাঠ্যক্রম চালু করা হয। ১৯৮৯ সালের ১৪ জুন ব্রজমোহন কলেজের শতবর্ষ পূর্ণ হয় এবং ১৯৯২ সালের ২৫, ২৬ ও ২৭ অক্টোবর কলেজের শতবর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে সমাজকল্যাণে এবং ১৯৯৪ সালে ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান প্রাণিবিজ্ঞান ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানে মাস্টার্স পাঠ্যক্রম চালু করা হয়। ১৯৯৫ সালে সমাজকল্যাণে এবং দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষে ইসলামি শিক্ষায় মাস্টার্স কোর্সে খোলা হয়।

শিক্ষার্থীদের কৃতিত্ব

অনার্স কোর্স চালু করার পর প্রায় প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী কোলকাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষয় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করতে থাকে। ১৯২৮ সালে ব্রজমোহন কলেজের অন্যতম কৃতী ছাত্র দেবপ্রসাদ ঘোষের ভগ্নি শ্রীমতী শান্তি সুধা ঘোষ (১৯০৭-১৯৯১) গণিত অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণেিত প্রথম স্থান অধিকার করে ‘ঈশান বৃত্তি’ লাভ করেন এবং ১৯৭৫ সালে রসায়ন অনার্স পরীক্ষায় দিলীপ কুমার চক্রবর্তী প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে ‘কালীনারায়ণ বৃত্তি’ লাভ করেন। সরকারি ব্রজমোহন কলেজে বর্তমানে ২০টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। তার মধ্যে ১৮টিতে অনার্স এবং ১৯টিতে মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। ১৯৯৯ সালে ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী বিলুপ্ত করা হয়। ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন বিভাগে ১ম বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে ৭২৫টি আসন বৃদ্ধি করে ৪০২৫টিতে উন্নীত করা হয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলন, খেলাফত ও অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, বাংলাদেশের মুকিক্তযুদ্ধসহ এ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অগণিত ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং আইনজ্ঞ এ কলেজের ছাত্র ছিলেন। বিএম কলেজ শুধু বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠই নয়, কলেজটি এ অঞ্চলের মানুষের অহংকার।

ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দের তালিকা

বেসরকারি আমল (১৪ জুন, ১৯৮৯-৩০ জনু, ১৯৬৫)

১. জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী (১৮৮৯-১৮৯০); ২. ব্রজেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯০৩); ৩. রনজীকান্ত গুহ (১৯০৩-১৯১১); ৪. নৃত্যলাল মুখার্জী (১৯১১-১৯২১); ৫. কালী প্রসন্ন গোষ (১৯২১-১৯২৩ ভারপ্রাপ্ত); ৬. অতুলকৃষ্ণ ঘোষ (১৯২৩-১৯২৪); ৭. সতীশচন্দ্র চ্যাটার্জী (১৯২৪-১৯৩৮); ৮. শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ (১৯৩৮-১৯৪১); ৯. চিন্তাহরণ রায় (২৭.০৫.১৯৪১-১০.০৯.১৯৪২ ভারপ্রাপ্ত); ১০. সুরেশ চন্দ্র সেনগুপ্ত (১০.০৯.১৯৪২-২৬.১০.১৯৪৯); ১১. নীলরতন মুখার্জী (২৭.১০.১৯৪৯-১৬.০২.১৯৫২); ১২. ই এফ ম্যাক ইনার্নি (১৭.০২.১৯৫২-২৬.০৭.১৯৫৫); ১৩. সাজ্জাদ আলী (২৭.০৭.১৯৫৫-২৩.০৮.১৯৫৬ ভারপ্রাপ্ত); ১৪. ডি এন চ্যাটার্জী (২৪.০৮.১৯৫৬-১০.০৮.১৯৫৮ ভারপ্রাপ্ত); ১৫. ইয়াকুব আলী (১১.০৮.১৯৫৮-২০.০৪.১৯৫৯); ১৬. ডি এন চ্যাটার্জী (২১.০৪.১৯৫৯-২১.০৫.১৯৫৯ ভারপ্রাপ্ত); ১৭. এ কে এম কবির চৌধুরী (২১.০৫.১৯৫৯-০৩.০১.১৯৬২); ১৮. কাজী গোলাম কাদির (০৩.০১.১৯৬২-২২.০২.১৯৬২ ভারপ্রাপ্ত); ১৯. মেসবাহুল বার চৌধুরী (২৩.০২.১৯৬২-৩০.০৬.১৯৬৫)।

সরকারি আমল (১ জুলাই ১৯৬৫ থেকে --)

১. মেসবাহুল বার চৌধুরী (০১.০৭.১৯৬৫-৩১.০১.১৯৬৬ ভারপ্রাপ্ত); ২. ড. হারুন-অর-রশিদ (০১.০২.১৯৬৬-০৭.০৯.১৯৬৮); ৩. মোঃ আবু সুফিয়ান (০৮.০৯.১৯৬৮-০৬.০৪.১৯৭০); ৪. মোঃ আবদুল মতিন (০৭.০৪.১৯৭০-১৩.০৬.১৯৭২); ৫. এ কে এম ইমদাদুল হক মজুমদার (১৪.০৬.১৯৭২-০৭.০৯.১৯৭৬); ৬. মোঃ মোসলেম মিয়া (০৭.০৯.১৯৭৬-১১-০৯.১৯৭৬ ভারপ্রাপ্ত); ৬. প্রফেসর আনোয়ার-উল-ইসলাম (১১.০৯.১৯৭৬-০৫-০৮-১৯৮০); ৭. নাসির উদ্দিন মিয়া (০৬.০৮.১৯৮০-২৮-০৯-১৯৮০ ভারপ্রাপ্ত); ৮. ড. হারুন-অর-রশিদ (২৯.০৯.১৯৮০-২৯-১০-১৯৮০); ৯. নাসির উদ্দীন মিয়া (৩০.১০.১৯৮০-৩১.১২.১৯৮০ ভারপ্রাপ্ত); ১০. কাজী আইউব আলী (০১.০১.১৯৮১-২৪.০১.১৯৮২ ভারপ্রাপ্ত); ১১. প্রফেসর মোঃ ইউনুস মিয়া (২৫.০১.১৯৮২-০৩.১১.১৯৮৩); ১২. প্রফেসর মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম খান (০৪.১১.১৯৮৩-১১.১২.১৯৮৩ ভারপ্রাপ্ত); ১৩. প্রফেসর মুহাম্মদ শামসুর রহমান (১২.১২.১৯৮৩-০৮.০৬.১৯৮৫); ১৪. প্রফেসর মুহাম্মদ মকবুল উদ্দিন আহমেদ (১০.০১.১৯৮৬-২৪.০১.১৯৮৬ ভারপ্রাপ্ত); ১৫. প্রফেসর মোঃ শামসুদ্দিন আহমেদ (২৫.০১.১৯৮৬-২৯.১১.১৯৮৮); ১৬. প্রফেসর চিত্তরঞ্জন গুহ রায় (২৯.১১.১৯৮৮-০৭.১২.১৯৮৮ ভারপ্রাপ্ত); ১৭. প্রফেসর মোঃ হানিফ (০৮.১২.১৯৮৮-৩০.১২.১৯৯২); ১৮. প্রফেসর মোহাম্মদ ইছহাক উদ্দিন মিয়া (৩০.১২.১৯৯২-০২.০১.১৯৯৩ ভারপ্রাপ্ত); ১৯. প্রফেসর মুহাম্মদ মকবুল উদ্দিন আহমেদ (০২.০১.১৯৯৩-২১.১১.১৯৯৫); ২০. প্রফেসর মোঃ শাহজাহান খান (২১.১১.১৯৯৫-১৩.০৬.১৯৯৬); ২১. প্রফেসর সাইদুল ইসলাম (১৩.০৬.১৯৯৬-১৬.০৬.১৯৯৭ ভারপ্রাপ্ত); ২২. প্রফেসর সাইদুল ইসলাম (১৬.০৮.১৯৯৭-২৫.০৪.১৯৯৯); ২৩. প্রফেসর শচীন্দ্রনাথ মজুমদার (২৫.০৪.১৯৯৯-২৩.০৫.১৯৯৯ ভারপ্রাপ্ত); ২৪. প্রফেসর শচীন্দ্রনাথ মজুমদার (২৫.০৪.১৯৯৯-২৩.০৫.১৯৯৯ ভারপ্রাপ্ত); ২৫. প্রফেসর এ কে এম সৈয়দ আবদুর রাজ্জাক (২৩.০৫.১৯৯৯-১৩.০১.২০০১); ২৬. হেমায়েত হোসেইন খান (১৩.০১.২০০১-১৯.০৩.২০০১ ভারপ্রাপ্ত); ২৭. মোঃ ইউসুফ আলী খান (৩০.০৪.২০০১-০৭.০৫.২০০১ ভারপ্রাপ্ত); ২৮. এ বি এম শাহজাহান কাজী (০৭.০৫.২০০১-২৩.০৮.২০০১ ভারপ্রাপ্ত); ২৯. প্রফেসর মোঃ নুরুল আনোয়ার (২৩.০৮.২০০১-৩০.১২.২০০৩); ৩০. প্রফেসর মোহাম্মদ নুরুল হক (৩০.১২.২০০৩-১৯.০১.২০০৫); ৩১. মোঃ ইউসুফ আলী খান (১৯.০১.২০০৫-২২.০৬.২০০৫); ৩২. প্রফেসর মাকসুদা বেগম (২২.০৬.২০০৫-০৬.০৯.২০০৫ ভারপ্রাপ্ত); ৩৩. প্রফেসর মোঃ নাজিম উদ্দিন (০৬.০৯.২০০৫-০৪.০১.২০০৭); ৩৪. প্রফেসর মোঃ মোস্তফা কামালউদ্দিন (০৫.০১.২০০৭-২৯.০৭.২০০৭); ৩৫. প্রফেসর মোঃ গোলাম মোস্তফা (২৯.০৭.২০০৭-৩১.০৭.২০০৭ ভারপ্রাপ্ত); ৩৬. প্রফেসর ড. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (৩১.০৭.২০০৭-০৪.০২.২০০৯); ৩৭. প্রফেরস ড. মোঃ আবদুস ছাত্তার মজুমদার (০৪.০২.২০০৯-০৮.০২.২০০৯ ভারপ্রাপ্ত); ৩৮. প্রফেসর ড. ননী গোপাল দাস (০৮.০২.২০০৯-২০১২); ৩৯. প্রফেসর মহম্মদ ফজলুল হক (২০১৩- আমাদের গৌরব এই বিদ্যাপীঠটিকে জ্ঞান সাধনায় তার পূর্ব ঐতিহ্যে ফিরিয়ে নেয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫। ২।সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।