বারুখাঁ মসজিদ

Barisalpedia থেকে

বারুখাঁ মসজিদটি বরিশালের অদূরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ।

মসজিদ স্থাপনের ইতিহাস

কোন শিলালেখ না থাকায় মসজিদ প্রতিষ্ঠার সঠিক সময়কাল জানা যায়নি। স্থানীয় প্রচলিত জনশ্রুতির সূত্রধরে কেবল মসজিদটির নির্মাতার পরিচয় জানা যায়। বারুখাঁ নামক জনৈক এক ব্যক্তি কতৃক ১৭ শতকের দিকে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। বারুখা স্থানীয় কোন শাসক পর্যায়ের, অমাত্য বর্গের কোন প্রতিনিধি এমনকি এলাকার বিত্তশালী কেউ ছিলেন না। ছিলেন অতিসাধারণ একজন। ব্রাত্যজনের মধ্যে এদেশে এমন জনকল্যাণের দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল। মসজিদ প্রতিষ্ঠার সময়কাল সম্পর্কে তেমন কোন জানা না গেলেও মসজিদ নির্মান সম্পর্কে চমৎকার একটি জনশ্রুতি বংশপরম্পরায় এলাকার সবার মুখেই ফিরছে। বারুখাঁ ছিলেন অত্যন্ত দীন- দরিদ্র ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি । তিনি এক গভীর রাতে স্বপ্ন দেখেন কোন এক সাধকপ্রবর ব্যক্তি তাকে (বারুখাঁকে) স্বপ্নে নির্দেশ করেন একটি স্থানে সোনার মোহর ভরতি একটি কলস রাখা আছে। তাকে সেই মোহর ভরতি কলস থেকে নিজের জন্য কিছু মোহর রেখে বাকিটা জনকল্যাণে ব্যয় করার জন্য পরামর্শ দেন। দরবেশ এর স্বপ্নে প্রদর্শিত স্থানে যথারীতি একটু মাটি খুঁড়েই পেয়ে যান মোহর ভরা কলসি। কিন্তু দৈবধন প্রাপ্তির আনন্দে এবং দ্রুত ভাগ্য পরিবর্তনে বারুখাঁ বেমালুম ভুলেযান দরবেশসাহেবের উপদেশ। কোন একরাতে স্বপ্নে দরবেশ বারুখাঁকে বেশ বিষন্ন মনে বললেন, কই তুমিতো আমার নির্দেশ প্রতিপালন করলেনা! আমিতো তোমাকে মোহরগুলোর একটি অংশ জনকল্যাণে ব্যয় করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এইদিন রাতেই আকস্মিকভাবে মারা যায় বারুখাঁর একমাত্র পুত্র। প্রাণাধিক প্রিয় পুত্রের মৃত্যুতে চরমভাবে ভেংগে পড়লেন বারুখাঁ। পুত্রের মৃত্যুকে তিনি স্বপ্নাদিষ্ট দরবেশ এর অভিশাপ বলেই মেনে নিলেন। তাই স্থির সিদ্ধান্ত নিলেন, পুত্রই যখন আর এই ধরাধামে বেঁচে নেই তখন সোনার মোহর টাকা-কড়ি সবই তার কাছে অর্থহীন। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন অবশিষ্ট মোহরগুলোকে তিনি জনকল্যাণমুখী কাজেই ব্যয়করবেন।সমূদয় অর্থ তিনি এই এলাকায় জনহিতকর কাজে ব্যয় করেন। প্রথমে তিনি নির্মান করলেন ইট নির্মিত চমৎকার এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।

উপসংহার

বারুখা মসজিদ নির্মাণ ছাড়াও আরো কতিপয় জনহিতকর কাজ করেন। তিনি সুবিশাল একটি দীঘি খনন করে এলাকার সুপেয় পানিয় জলের অভাব দূর করেন। বাকি অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে তিনি প্রাচীন কাউরিয়া খালের উপরে ইটের তৈরী চমৎকার একটা সেতু নির্মান করে মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘব করেন। বারুখাঁ কালের বিবর্তনে সেই কবেই হারিয়ে গেছে। তার কীর্তিরাজি কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাড়িয়ে আছে। আজও বারুখার পোল, বারুখার দীঘি আর মসজিদ মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।



তথ্যউৎস: মোঃ গোলাম ফেরদৌস, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।