বাবুগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ

Barisalpedia থেকে

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাবুগঞ্জ থানা বিশেষ আবদান রেখেছে। বাকেরগঞ্জ জেলার মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের জন্ম হয়েছিল বাবুগঞ্জের ধুমচর। বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্ম বাবুগঞ্জের রহিমগঞ্জ। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আতাহার উদ্দিন সিকদার (দারোগা)’র বাড়ি বাবুগঞ্জের ক্ষুদ্রকাঠি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল ওহাব খানের বাড়ি দরিয়াবাদ, চাঁদপাশা। সংগঠক আবুল কাশেমের বাড়ি রাজগুরু, বাবুগঞ্জ। আবদুল মজিদ খানের বাড়ি ক্ষুদ্রকাঠি, বাবুগঞ্জ। বিমান বাহিনীর রত্তন আলী শরীফের বাড়ি রাকুদিয়া। সামরিক বাহিনীর নূর হোসেনের বাড়ি কেদারপুর। সুলতান মাস্টারের বাড়ি মাধবপাশা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে এঁরা উত্তর বরিশালে বীরত্বের পরিচয় দেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের পর ১০ মার্চ বাবুগঞ্জ হাইস্কুলে আওয়ামী লীগ সংগ্রাম কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত বাবুগঞ্জ থানা আওয়ামী নীগের সভাপতি আতাহার উদ্দিন সিকদার, আবুল কাশেম, আবদুল ওহাব খান, আবদুল মজিদ খান, রত্তন শরীফ, নূর হোসেন, সুলতান মাস্টার পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত অনুসারে বাবুগঞ্জ স্কুল মাঠে মুক্তিফৌজের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। আবুল কাশেমের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ চলে। প্রথমে ৩০ জন দিয়ে শুরু, পরে ১০০ জনে উন্নীত হয়। প্রাক্তন সামরিক ব্যক্তিরা প্রশিক্ষল দেন। পুলিশ, আনসার, আর্মি সকলে একত্রিত হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন আতাহার দারোগা, আবদুল মোল্লা, সুলতান আহমেদ মিয়া, নাজেম জমাদ্দার, আয়নাল খাঁ, আবদুর মালেক সর্দার, মন্নান খান, হাবিলদার সুলতান আহমেদ, আমির হোসেন মাস্টার, নায়েক আতাহার হোসেন। এ ছাড়া ছিলেন ছাত্র, যুবক, কৃষক। অক্টোবর মাসের ৩ তারিখে ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর বাবুগঞ্জ থানা আক্রমণ করেন। কিন্তু আবদুল ওহাব খান ও আবুল কাশেম ঠিক সময় আসার পূর্বে ক্যাপ্টেন শাহজাহান তার দল নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। পাক সেনাদের আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ সংঘর্ষে তিনজন আহত হন এবং উজিরপুর থানার ভবানীপুরের আলতাফ বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। আলতাফ গুলিবিদ্ধ হয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। তাদের ভবানীপুরে দাফন করা হয়। বরিশাল- রহমতপুর রাস্তার ৭ মাইলের পুলটি আবদুল ওহাব খানের দলের কালু প্যাদা মাইন দিয়ে ধ্বংস করে দেন। পাক বাহিনী এ পুল অতিক্রম করার সময় ওহাব খানের দল তাদের আক্রমণ করেন। জিপ নিয়ে পাক সেনারা ৭ মাইলে ভাঙ্গাপুলের নিচে পড়ে যায়। অফিসারসহ কয়েকজন নিহত এবং কয়েকজন রাজাকার বন্দি হয়। ১৫ ও ১৬ অক্টোবর পাকসেনারা ১৬ পাঞ্জাব ব্রিগেডের অধিনায়ক লে. কর্নেল নাদের পারভেজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি চাঁদপাশা চারদিক দিয়ে আক্রমণ করে। জনগণ পূর্বেই বেশিরভাগ অন্য গ্রামে আশ্রয় নেয়। পাকসেনারা সিরাজউদ্দীন আহমেদের বাড়ি লুট করে। আবদুল ওহাব খান অক্টোবর মাসে মুজিবনগর চলে যাওয়ার পর মজিদ খাঁ ও রত্তন শরীফ পর্যায়ক্রমে বাবুগঞ্জ থানা কমান্ডার ছিলেন। বাবুগঞ্জ থানায় দোতলা স্কুলে পাকসেনারা অবস্থান নিয়েছিল। তাই তাদের পরাজিত করা কঠিন ছিল। বার বার আক্রমণ করেও তাদের আত্মসমর্পণ করা যায়নি। ১৯ ডিসেম্বর তারা আত্মসমর্পণ করে।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খ-)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।