"বাকেরগঞ্জ"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
("উজিরপুরের বারপাইকা এক সময়ের শিক্ষাদীক্ষায় সমৃদ্ধ স্থ..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
উজিরপুরের বারপাইকা এক সময়ের শিক্ষাদীক্ষায় সমৃদ্ধ স্থান ছিল। এই গ্রাম বিষয়ে দুজন পন্ডিতের বর্ণনা দিয়েছেন রোহিণীকুমার সেন তাঁর বাকলা গ্রন্থে। নিম্নে তা উদ্ধৃত হলো।
+
বাকেরগঞ্জ নামটি একসময় চন্দ্রদ্বীপ, বাকলা বা বরিশালের সমার্থক ছিল। বুজুর্গ উমেদপুরের জমিদার ঢাকার আগাবাকের খান ১৭৪১ খৃৃস্টাব্দে নিজ নামে গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করে নাম দেন বাকেরগঞ্জ। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে ১৭৯৭ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ নামে জেলা প্রতিষ্ঠিত করলে বাকলা ও চন্দ্রদ্বীপ নাম দুটি প্রায় হারিয়ে যায়। ১৮০১ খৃৃস্টাব্দে জেলা সদর বাকেরগঞ্জ থেকে বরিশালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তারপরও জেলার নামটি বাকেরগঞ্জ ছিল ১৭৯৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত । ১৯৯৩ সালের ১ মার্চ বরিশাল বিভাগ সৃষ্টির ফলে বাকেরগঞ্জ নামটি বাদ দেয়া হয় এবং জেলা সদর বরিশালের নামে বিভাগের নামকরণ করা হয়। বর্তমানে বাকেরগঞ্জ নামটি বাকেরগঞ্জ উপজেলা নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে।  
 
+
শ্রোত্রীবংশীয় পণ্ডিতমণ্ডলী বারপাইকার অতি প্রাচীন অধিবাসী নহেন। এই বংশের প্রসিদ্ধ দার্শনিক পণ্ডিত মহাত্মা শুকদেব তর্কালঙ্কার বারপাইকায় আগমন করেন। তাঁহার পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হইয়া তদানীন্তন ধর্মপ্রাণ ভূম্যাধিকারী চৌধুরিগণ তাঁহাকে বারপাইকায় বাসস্থানসহ ব্রহ্মোত্তর অর্পণ করেন। শুকদেবের সন্তানসন্ততিগণ বাকেরগঞ্জের বহু সম্ভ্রান্ত বংশের কুলগুরু। গুঠিয়া, রূনসী, নাগপাড়া প্রভৃতি গ্রামে এই বংশের বংশধরগণ এখনও বাস করিতেছেন।
+
 
+
শুকদেব তর্র্কালঙ্কারের ভ্রাতা আনন্দিরাম সম্বন্ধে একটি অলৌকিক ঘটনা প্রচলিত আছে। আনন্দিরাম যৌবনে বুদ্ধিমান্দ্যপ্রযুক্ত আত্মীয়গণ কর্তৃক সর্বদা অবজ্ঞাত হইতেন। একদা তাহার সহধর্মিণী অন্নব্যঞ্জন প্রস্তুত করিয়া তাহার সহিত মুষ্টিপরিমিত ছাই ভোজন-পাত্রের এক পার্শ্বে রাখিয়া দিলেন। বলা বাহুল্য যে, পত্নী পতির যথেষ্ট অবজ্ঞা প্রদর্শন করিতে ত্রæটি করিতেন না। সেই দিন আনন্দিরাম নিতান্ত বিষণ্ন হৃদয়ে অনাহারে গৃহ ত্যাগ করিলেন।  কতিপয় বৎসর পর্যন্ত তাহার আর কোন খোঁজখবর পাওয়া গেল না। পরিশেষে তাঁহদের বাটির বিশ্বস্ত পুরাতন ভৃত্য ‘যশা’ আনন্দিরামের অন্বেষাণার্থে নানা দেশ ভ্রমন পূর্বক নবদ্বীপে আসিয়া তাঁহার অনুসন্ধান পাইল। সায়ংকালে যশা আনন্দিরামের গৃহে উপস্থিত হইয়া দেখিল একটি সুন্দরী রমণী আসিয়া তাঁহার সন্ধ্যার আলোকে জ্বালিয়া দিল। যশা যুগপৎ আশ্চর্যান্বিত ও দুঃখিত হইয়া দ্বারদেশে বসিয়া রহিল। ক্ষণকাল পরে সন্ধ্যা বন্দনাদি সমাপন করিয়া আনন্দিরাম গৃহে ফিরিলেন। যশা তাঁহাকে দেখিয়া কোনরূপ হর্ষ প্রকাশ করিল না, বরং যথেষ্ট কটূক্তি করিয়া তাঁহাকে ভৎসনা করিতে লাগিল; শেষে সকল ঘটনা বিশদভাবে বর্ণণা করিল। ক্ষণকাল পরে তাঁহার প্রতি স্বপ্নাদেশ হইল  - ‘বৎস, তমি গৃহে ফিরিয়া যাও, তোমার জ্ঞানের স্ফূরণ হইয়াছে তোমাদের ঠাকুর ঘরের মাটির নীচে একখানি তালপাতা গ্রন্থ আছে, তাহা দ্বারাই তোমার সৌভাগ্য উদয় হইবে এবং তোমার বংশের উপর আমার অনুগ্রহ থাকিবে।’ এই কথা বলিয়া দেবী অন্তর্হিতা হইলেন। আনন্দিরাম হৃষ্টন্তঃকরণে বাড়ি ফিরিলেন। কালক্রমে এই বংশে  ন্যায়শাস্ত্রে অদ্বিতীয় খ্যাতিসম্পন্ন পন্ডিত তারিণীচরণ শিরোমণি জন্মগ্রহণ করেন। নবদ্বীপ ও অন্যান্য পন্ডিত-প্রধান স্থানে তাঁহার প্রগাঢ় পান্ডিত্য ও বিচার নৈপুণ্যদর্শনে পন্ডিতমন্ডলী তাঁহাকে ভূয়সী প্রশংসা করিতেন। আজও পন্ডিতসমাজে তাঁহার নাম প্রসিদ্ধ আছে। বর্তমান সময়ে তাঁহার পুত্র শশিভূষণ ভট্টচার্য এম.এ সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষার সুপন্ডিত এবং একজন কৃতী পুরুষ। ইনি বহরমপুর কলেজের সংস্কৃতের অধ্যাপক।
+
  
 
----
 
----
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।
+
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (প্রথম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।

১০:৪৬, ৩ আগস্ট ২০২০ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

বাকেরগঞ্জ নামটি একসময় চন্দ্রদ্বীপ, বাকলা বা বরিশালের সমার্থক ছিল। বুজুর্গ উমেদপুরের জমিদার ঢাকার আগাবাকের খান ১৭৪১ খৃৃস্টাব্দে নিজ নামে গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করে নাম দেন বাকেরগঞ্জ। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে ১৭৯৭ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ নামে জেলা প্রতিষ্ঠিত করলে বাকলা ও চন্দ্রদ্বীপ নাম দুটি প্রায় হারিয়ে যায়। ১৮০১ খৃৃস্টাব্দে জেলা সদর বাকেরগঞ্জ থেকে বরিশালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তারপরও জেলার নামটি বাকেরগঞ্জ ছিল ১৭৯৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত । ১৯৯৩ সালের ১ মার্চ বরিশাল বিভাগ সৃষ্টির ফলে বাকেরগঞ্জ নামটি বাদ দেয়া হয় এবং জেলা সদর বরিশালের নামে বিভাগের নামকরণ করা হয়। বর্তমানে বাকেরগঞ্জ নামটি বাকেরগঞ্জ উপজেলা নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (প্রথম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।