বাকেরগঞ্জে সিভিল জজ নিয়োগ

Barisalpedia থেকে

বাকেরগঞ্জে সিভিল জজ নিয়োগ-১৭৮১ ঢাকার ইংরেজ চীফ ও নায়েব নাজিম জেসারত খান বাকেরগঞ্জের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। ১৭৮১ খ্রঃ জেসারত খানের মৃত্যুর পর তার কন্যার পুত্র হাসমত জং নায়েব নাজিম হন। মুর্শিদাবাদের নবাব গুরুত্বর অপরাধের বিচার করতেন। অধিকাংশ ফৌজদারী বিচার ঢাকার নায়েব নাজিমের দরবারে হতো। জমিদার ও তালুকদাররা স্থানীয় শাসন ও পুলিশ ব্যবস্থা দেখতেন। ঢাকা প্রাদেশিক কাউন্সিল দেওয়ানী সংক্রান্ত বিচার করত। ১৭৭৪ খ্রিঃ বারওয়েল ঢাকার চীফ ছিলেন। ১৭৮০ খ্রিঃ বারওয়েলের স্থলে হল্যান্ড ঢাকার চীফ নিযুক্ত হয়। হল্যান্ডের পর ১৭৮৫ খ্রিঃ মিঃ ডে ঢাকার চীফ বা প্রধান হয়ে আসেন। ১৭৮১ খ্রিঃ প্রাদেশিক কাউন্সিল বাতিল করে প্রত্যেক জেলায় পুনরায় ইংরেজ কালেক্টর নিয়োগ করা হয়। ঢাকা জেলার চীফ মিঃ ডে ঢাকা জেলার কালেক্টর নিযুক্ত হন। মিঃ ডে বাকেরগঞ্জের প্রথম কালেক্টর। ঢাকা একটি বিচারালয়ও প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ডানকানসন বিচারক নিযুক্ত হন। বরিশাল হতে ঢাকা ও কলিকাতা দূরে অবস্থিত হওয়ায় কোম্পানি এ অঞ্চলের বিদ্রোহী কৃষকদের দমনে ব্যর্থ হয়। তাই কোম্পানি ১৭৮১ খ্রিঃ বাকেরগঞ্জে একটি সিভিল কোর্ট প্রতিষ্ঠা করে। কমন্স সভার ষষ্ঠ বিবরণে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল মুদ্রিত রাজস্ব বিভাগের নির্দেশাবলীতে বাকেরগঞ্জে সিভিল কোর্ট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ আছে। উক্ত বিবরণে ভূমিকার অংশবিশেষ উদ্ধৃত করা হল;১ বোর্ড সারা প্রদেশের বর্তমান ফৌজদারী ও দেওয়ানী বিচার ব্যবস্থা বিবেচনা করে নিম্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ তারিখের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত মফঃস্বল দেওয়ানী আদালতের বিস্তৃত এলাকায় সৃষ্ট অসুবিধা দূরীকরণ এবং অতিদ্রুত কার্যকরী আইনের শাসনের উন্নতির জন্য বর্তমান কোর্টসহ নি¤œলিখিত আদালতগুলো প্রতিষ্ঠিত হোক। তারপর বাকেরগঞ্জসহ ১৮টি কোর্টের নাম। বাকেরগঞ্জের সীমানা নিম্নলিখিতভাবে দেখানো হয়েছে, “ঢাকা বিভাগের যে অংশ গঙ্গা বা পদ্মা এবং কালী গঙ্গার দক্ষিণ পশ্চিমে, মেঘনার পশ্চিমে চাঁদপুর হতে সমুদ্র পর্যন্ত, পশ্চিমে ভুষণা ও যশোরের পূর্ব সীমান্ত, নিম্নে রায়মঙ্গল নদীর মোহনা, সন্দ্বীপ পরগণা ও অধীনস্থ এলাকা ব্যতীত ঢাকা বিভাগের উপকূলীয় দ্বীপগুলো নিয়ে বাকেরগঞ্জ গঠিত। বাকেরগঞ্জ সিভিল কোর্টের অধীনে বর্তমান মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, হাতিয়া, বাগেরহাট ও পটুয়াখালী অন্তর্ভূক্ত ছিল। উক্ত আদেশে বলা হয়েছে যে, সিভিল জজের ডাকাত গ্রেফতারের ক্ষমতা থাকবে কিন্তু তিনি বিচার করতে পারবেন না। নবাবের প্রতি আদেশ হলো, তিনি যেন হুগলী ব্যতীত সকল ফৌজদারকে উঠিয়ে নিয়ে যান। বাকেরগঞ্জের সিভিল ও দেওয়ানী আদালত ১৭৮১ খ্রিঃ নলছিটি থাকার বারৈকরণে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাকেরগঞ্জ, বরিশাল প্রভৃতি স্থানের ফৌজদারী পদ বিলুপ্ত হয়। ১৭৮১ খ্রিঃ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাকেরগঞ্জ নামের সরকারী স্বীকৃতি প্রদান করল। বাণিজ্যের গুরুত্ব ও মধ্যস্থানে অবস্থিত থানার জন্য বাকেরগঞ্জ পূর্ব হতে বহুল পরিচিতি লাভ করে। পলাশী যুদ্ধের পর বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের নাম বেঁচে রইল শুধু রাজস্ব বিভাগের নথিপত্রে। জেলার বাইরে বাকেরগঞ্জ নামটি ছড়িয়ে পড়লেও ভিতরে এ অঞ্চল সাধারণত পরগণার নামে পরিচিত ছিল। হিজলা মুলাদির উত্তর ভাগ ইদিলপুর, পিরোজপুর, সেলিমাবাদ প্রভৃতি নামে প্রচলিত ছিল। পরগণার অধিবাসীদের শাহবাজপুরী বলা হতো। আবার নোয়াখালীর লোকেরা বাকেরগঞ্জের অধিবাসীদের বাকলাইয়া বলত।

১৭৮১ খ্রিঃ মিঃ রাফটন বাকেরগঞ্জ সিভিল কোর্টের প্রথম জজ ছিলেন। বারৈকরণে তার দপ্তর ছিল। ১৭৮২ খ্রিঃ হল্যান্ডের সাথে রফটনের ঝগড়া হয়। গভর্নর জেনারেল হেষ্টিংস এ ঘটনার জন্য রাফটনের বিচারের নির্দেশ দেন। ১৭৮৬ খ্রিঃ চীফের পদ বিলুপ্ত করে তদস্থলে কালেক্টর নিযুক্ত হয়। ১৭৮৬ খ্রিঃ হতে মিঃ ডে ঢাকার কালেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য ১৭৮৬ খ্রিঃ বাকেরগঞ্জে একজন সহকারী কালেক্টর নিয়োগ করা হয়। সুন্দরবন কমিশনার মিঃ লজ সহকারী কালেক্টরের দায়িত্ব পালন করতেন। বারৈকরণে সহকারী কালেক্টরের দপ্তর ছিল।

তথ্য নির্দেশ

১। The District of Bakerganj, Page 425-426