বাকেরগঞ্জে দপ্তর স্থানান্তর

Barisalpedia থেকে

১৭৯০ খ্রিঃ গভর্নর জেনারেল কর্নওয়ালিস ভারতে শাসন সংস্কার করে ইংরেজ শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। তিনি সদর নিজামত আদালত মুর্শিদাবাদ হতে কলিকাতায় স্থানান্তরিত করেন এবং ৪টি ভ্রাম্যমান আদালত বা কোর্ট অব সারকুইট স্থাপন করেন। তারা প্রত্যেক জেলাায় বছরে দু’বার করে ফৌজদারী বিচার করত। তিনি কালেক্টরের বিচারের ক্ষমতা লাভ করে প্রত্যেক জেলায় একজন জজ-ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করেন। পুলিশ ম্যাজিষ্ট্রেটের অধীনে ছিল। দেওয়ানী বিচারের জন্য তিনি সর্বনিম্নে কমিশনার, সদর আমিন ও মুন্সেফ নিয়োগ করেন। কর্নওয়ালিসের শাসন সংস্কারের ফলে বাকেরগঞ্জের প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন হয়। বাকেরগঞ্জ ঢাকার কালেক্টর ও জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের অধীনে ছিল। কোর্ট অব সারকুইট বছরে দু’বার বাকেরগঞ্জে বিচার করতে আসত। এতদিন জমিদাররা পুলিশের খরচ বহন করতেন এবং শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতেন। ১৭৯০ খ্রিঃ শাসন সংস্কারের ফলে বাকেরগঞ্জকে ১০টি থানায় ভাগ করা হয় এবং প্রত্যেক থানায় একজন দারোগা নিয়োগ করা হয়। এ থানাগুলো হল বুখাইনগর, নলচিড়া, চান্দিয়া, বারৈকরণ, আঙ্গারিয়া, টেগরা, বাউফল, খলিসাখালী ও কাউখালী।

বরিশাল বা গিরদে বন্দরে দক্ষিণ বঙ্গের লবণ চৌকি ছিল। এ লবণ চৌকির নাম ছিল “দক্ষিণ-পূর্ব চেীকি-বরিশাল”। কালেক্টর লবণ চৌকির দায়িত্বে ছিলেন। বাকেরগঞ্জের সহকারী কালেক্টর বরিশাল লবণ চৌকির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। বরিশাল লবণ চৌকির অধীনে কয়েকটি লবণ চৌকি ছিল। লবণ দারোগা একেকটি চৌকির দায়িত্বে ছিলেন।

নলছিটি থানার বারৈকরণে নবাবী আমলে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। কোম্পানি আমলে বারৈকরণের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। তাই কোম্পানি এখানে প্রশাসনিক দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু বারৈকরণের যাতায়াত পথে চর পড়ে বাণিজ্যের অসুবিধা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে বিদ্রোহী কৃষকদের ভয়ে কোম্পানীর কর্মচারীরা বারৈকরণে বসবাস করতে অনিচ্ছুক ছিল। তাই স্যামুয়েল মিডলটন সুন্দরবন কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই তার দপ্তর বাকেরগঞ্জ বন্দরে স্থানান্তরিত করার আয়োজন করেন। ইংরেজ সরকারের নির্দেশে মিডলটন ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সিভিল কোর্ট, সহকারী কালেক্টর ও সুন্দরবন কমিশনারের দপ্তর বারৈকরণ হতে বাকেরগঞ্জে স্থানান্তরিত করেন। আসে আস্তে বারৈকরণের গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে এবং বাকেরগঞ্জের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মিডলটন বাকেরগঞ্জ বন্দরে বুজুর্গ উমেদ খান ও আগাবাকের নির্মিত গোলাবাড়িতে তার দপ্তরের কাজ শুরু করেন। মিডলটন বাকেরগঞ্জে কয়েকটি ইটের ভবন নির্মাণ করেন। তিনি বন্দরের মধ্যে শ্রীমন্তপুর খালের তীরে জেলখানা নির্মাণ করেন। এজন্য শ্রীমন্তপুরের খালের নাম জেলখানার খাল। জেলখানার একটি প্রাচীরের চিহ্ন ছিল। এ ছাড়া একটি সিভিল জেল ছিল। বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রী নিবাসী পঞ্চনন্দ দত্ত ১৮০২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ এপ্রিল রাজস্ব বোর্ডের নিকট জেলখানা সম্পর্কে এক পত্র লেখেন। এ পত্রে দেখা যায় তার বিষ্ট নারায়ন তালুকে মিঃ লজ ১৭৮৬ খ্রিঃ জেলখানা নির্মাণ করেছেন। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ অক্টোবরের এক পত্রে দেখা যায় নায়েব নাজিম একজন ফৌজদার দিয়ে জেলখানা রক্ষা করতেন। নাযেব নাজিমের আদেশে ১৭৯২ খ্রিঃ জেলখানার অনেক বন্দীকে কম্বল দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। ১৭৯৩ খ্রিঃ বন্দীদের আন্দামানে পাঠাবার জন্য মিডলটনের নিকট তালিকা চাওয়া হয়। ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অক্টোবরের পত্রে জেলখানার বন্দীদের তামাক পুনরায় সরবরাহের কথা উল্লেখ আছে। নিজামত আদালতের অধীনে ম্যাজিষ্ট্রেট জেলখানার দায়িত্বে ছিলেন। মিডলটন জেলখানার দায়িত্ব পালন করতেন।