বাকলার পীর-আউলিয়া
পরিচ্ছেদসমূহ
সুলতানী আমল
সুলতানী আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপে মুসলমানরা আগমন করে। তখন মুসলমানদের সংখ্যা খুব কম ছিল। সম্রাট জাহঙ্গীরের রাজত্বকাল হতে বাকেরগঞ্জ-পটুয়াখালীতে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য মোগল শাসনাধীনে চলে যাওয়ার পর হতে আরব, ইরান, ইরাক ও দিল্লী হতে অনেক পীর-আউলিয়া এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন। এ সকল সুফী-সাধকের কাহিনী আলোচনা করতে দেখা যায় মোগল আমলে। এ অঞ্চলে মুসলমানদের প্রভাব বেশি বৃদ্ধি পায়।
মোগল আমল
মোগল আমলের পীর-আউলিয়াদের মধ্যে হজরত দুধ মল্লিক অন্যতম।তার প্রকৃত নাম জানা যায়নি। তবে তার নাম হজরত মালিক হতে পারে। মালিক হতে মল্লিক হয়েছে। তিনি ইয়েমেনের বাদশাহের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন। বাদশাহের সাত পুত্র বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন। দ্বিতীয় কুমার সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৬-২৭ খ্রিঃ) গৌরনদী থানার কসবা গ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন। স্থানীয় প্রবাদ-সম্রাট জাহাঙ্গীর স্বয়ং কসবায় এসে দুধ কুমারের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। সম্রাট জাহঙ্গীর হজরত দুধ কুমারের মাজারের জন্য ১৬ দরুণ ১৩ কানি লাখেরাজ সম্পত্তি প্রদান করেন। এজন্য কসবার এক নাম লাখেরাজ কসবা। সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রদত্ত লাখেরাজের তাম্রলিপি কসবার কাজীদের নিকট আছে। হজরত দুধ কুমার দীর্ঘদিন ঘরে বরিশাল-ফরিদপুরে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। শত শত অমুসলমান তার নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি কয়েকটি দীঘি খনন করেন। এগুলো পদ্মবুনিয়া, গোয়ালিয়া, মালী মাঝোর আন্ধি নামে পরিচিত। দুধ কুমারের মালী পদ্মবুনিয়া দীঘি থেকে পদ্মফুলের মালা এবং গোয়ালিয়ার পারের গোয়ালা দুধ মল্লিককে দুধ দিতেন। এজন্য তাদের নামে দীঘিগুলোর নামকরণ হয়। তিনি শুধুমাত্র গাভীর দুধ খেয়ে বেঁচে ছিলেন, এজন্য তার নাম হয় দুধ কুমার। গাভীগুলো গভীর রাতে দুধ খাওয়াতে আসত। তার কয়েকটি প্রিয় কড়ি ছিল। কড়িগুলো দুধ খেয়ে দীঘিতে চলে যেত। মাজারে বর্তমানে একটি মৃত বড় কড়ি আছে। তার ব্যবহৃত একজোড়া পাথরের পাটাপুতা মাজারের নিকটে কাঁঠাল গাছে পাশে মাটির নিচে পোঁতা আছে। মাজারের খাদেম শাহ্ বংশ দাবি করেন যে, তারা পীরের সাথে কসবায় আগমন করেন। মাজারের খাদেম হিসেবে তারা লাখেরাজ সম্পত্তি ভোগ করতেন। শাহ্ বংশের বর্তমানে ১৩ পুরুষ চলছে। সে হিসেবে দেখা যায় হযরত দুধ কুমার সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে কসবায় আগমন করেন। বর্তমানে কসবার কাজী ও শাহ্ বংশ মাজারের রক্ষণাবেক্ষণ করেন। এ মাজারে প্রত্যেক বছর উরস পালিত হয়। ১
হযরত সৈয়দ কুতুব শাহ্
হযরত সৈয়দ কুতুব শাহ্ বরিশালের পীর-আউলিয়াদের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত। তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের উজির উলফৎ গাজীর পুত্র ছিলেন। তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের নিকট হতে সরকার বাকলায় নাজিরপুর পরগণায় জমিদারী লাভ করেন। সৈয়দ কুতুবশাহ্ মুলাদী থানার তেরচরে প্রথম বসতি স্থাপন করে। তিনি বরিশাল, মাদারীপুর ও বাগেরহাটে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। তিনি অনেক দীঘি খনন ও মসজিদ নির্মাণ করেন। তেরচরে কুতুব শাহের এক বিরাট দীঘি ছিল। দীঘিটি আড়িয়াল খাঁ নদে বিলীন হয়েছে। তেরচর নদী ভাঙ্গনের সম্মুখীন হলে সৈয়দ কুতুবশাহ্ নলচিড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। ছবি খাঁ তার সমকালীন। তিনি কুতুব শাহের গুণে মুগ্ধ হয়ে তাকে লাখেরাজ সম্পত্তি প্রদান করেন। কথিত আছে সাক্ষাত করতেন এবং এক গ্রাস দুধ পান করে যেতেন। কিন্তু এক বৃহস্পতিবার কুতুব শাহ্ আর দুধ খেতে এলেন না। এক আগন্তুক এসে কুতুব শাহের পুত্রের নিকট দুধ পান করে মারা যান এবং তাকে কুতুব শাহের পাশে সমাহিত করা হয়। পুত্র রাতে স্বপ্ন দেখলেন যে, পিতা কুতুব শাহ্ আর কোনদিন ফিরে আসবেন না। কারণ তিনি তার আকাক্সিক্ষত বন্ধুকে পেয়েছেন। কুতুব শাহ্ নলচিড়া মিয়াবাড়ীতে একটি মসজিদ নির্মাণ ও দীঘি খনন করেন। তিনি কৃষ্ণ পাথরের হজরত মুহম্মদের পায়ের ছাপ বা কদমরসুল রেখে গেছেন। তার সময়ের পাথরে খোদাই কলেমা য়ৈব ও হাতের লেখা একখান কোরান শরীফ আছে। কোরান শরীফখানা মিয়াবাীর একটি সিন্দুকে রক্ষিত আছে। প্রত্যেক বছর ফান্ডুনের পূর্ণিমায় মাজারে মেলা ও উরস অনুষ্ঠিত হয়।২
হযরত দাউদ শাহ
হযরত দাউদ শাহ কোন সময় চন্দ্রদ্বীপে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন তা নিয়ে মতান্তর আছে। কেউ বলেন তিনি সুলতানী আমলে খড়ম পায়ে সুগন্ধা নদী অতিক্রম করে এ অঞ্চলে আগমন করেন। আবার কেউ বলেন তিনি মোগল আমলে এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। কাহিনী ও মসজিদের নির্মাণ কৌশল দেখে মনে হয় হজরত দাউদ শাহ মোগল আমলে প্রথম দিকে বাকলায় আগমন করেন। সুগন্ধিয়ায় সরদারদের পূর্বপুরুষ শ্রাবণ ঠাকুর দাউদ শাহের সমকালীন। সরদারের বংশতালিকা অনুসারে দেখা যায় দাউদ শাহ্ ১৬ শতকের শেষভাগে এ অঞ্চলেআসেন। প্রবাদ আছে তিনি একজন শ্রমিকের ছদ্মবেশে শ্রাবণ ঠাকুরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ্েকদিন তার স্ত্রী দেখতে পেলেন দাউদ শাহের হাতের ইশারায় নারিকেল গাছ নিচু হয়ে যায় এবং তিনি সে গাছ থেকে দাঁড়িয়ে নারিকেল পাড়েন। আর একদিন দেখা গেল দাউদ শাহ্ চুলায় কোন কাঠ না দিয়ে তার নিজের পা জ্বালিয়ে ধান সিদ্ধ করছেন। এঘটনা দেখে শ্রাবণ ঠাকুর ও তার স্ত্রী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তারপর তিনি শ্রাবণ খাঁ নির্মিত খানকায়ে খোদার ধ্যানে মগ্ন হলেন।তিনি একদিন তার ভক্তদের বললেন, তিনি কবরের মধ্যে তিন দিন ধ্যানে মগ্ন থাকবেন এবং এ সময় তাকে যেন ওঠানো না হয়। কিন্তু ভক্ষগণ বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পালনে না। তারা কবরখোঁড়া শুরু করল। কবরে শব্দ শোনাগেল। দেখা গেল কবরে একচাপ রক্ত পড়ে আছে। ভক্তগণ রক্ত কবর দিলেন। কথিত আছে গৌড়ের শাসনকর্তা দাউদ শাহের সাধনার কথা শুনে মুগ্ধ হন। তিনি রাজমহল ও রাজস্থান থেকে সাদা পাথর এনে মাজার নির্মাণ করেন। মাটি থেকে তিন ফুট উঁচু সাদা পাথর এবঙ কবরের মেঝে কালো পাথর দিয়ে বাঁধানো। দাউদ শাহের কবরের উপরে কাল পাথরে কোরানের বাণী এতবড় আকারে উৎকীর্ণ আছে। বাংলাদেশে অন্যকোন মাজারে কোরানের বাণী এতবড় আকারে উৎকীর্ণ নেই। সামনে তার খাদেম মতান্তরে সর্দার বংশধর আলামত খাঁ ও নেয়ামত খাঁর কবর আছে। মাজারে দুই খন্ড পাথর আছে। প্রবাদ আছে পাথরগুলো এখানে ভেসে এসেছে। মাজারের সামনে মসজিদ আছে। পাশেই একটি দীঘি। এ দীঘিনিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। মাজারের তত্ত্বাবধানের জন্য বাদশাহ লাখেরাজ সম্পত্তি প্রদান করেন এবং সর্দারবংশ মাজারের খাদেম ছিল। চেরাগী দাউদ শাহ কিসমত চরামদ্দি পরগণা চন্দ্রদ্বীপ নামে লাখেরাজ সম্পত্তি ছিল। ইংরেজ সরকার এ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেয়। সর্দারের নিকট ফার্সী ভাষায় লেখা দু’খানা দলিল আচে। শ্রাবণ ঠাকুরের নামে শ্রাবণকাঠি গ্রামের নাম। তার পুত্র আলামত খাঁ। আলামত খাঁর পুত্র আহম্মদের নামে চর আহম্মদিয়া বা চরামদ্দির নাম হয়েছে। প্রবাদ আছে দাউদ শাহের দীঘি হতে প্রত্যেক উরসের সময় থালা-বাটি ও ডেগ পাড়ে উঠে আসত। এক ব্যক্তি একটি পাত্র চুরি করলে আর কোনদিন পাত্রগুলো পাড়ে উঠে আসেনি। বর্তমানে খন্দকার পরিবার মাজারের খাদেম।৩
ষোল শতকের শেষভাগে হজরত শাহ আহম্মদ ও তার পুত্র মীর মোশায়েক বাগদাদ হতে সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম আসেন। সেখান থেকে পিতা-পুত্র বাকলায় পৌঁছেন। তারা নৌকায় সুগন্ধা নদী অতিক্রম করেছিলেন। শাহ্ আহম্মদ ধ্যানে ছিলেন। হঠাৎ তার তসবিহ সুগন্ধা নদীতে পড়ে যায়। তখন তিনি খোদাকে স্মরণ করলেন। শব্দ হলো, .. তুমি এখানে বসবাস করবে। সুগন্ধা নদী শুকিয়ে গেল এবং নৌকা আটকে পড়ে। তসবিহ উদ্ধার হলো। স্থানীয় সওদাগ শাহ আহম্মদের সাথে দেখা করেন এবং তার গ্রামে বাস করতে অনুরোধ করেন। শাহ আহম্মদ ঝালকাঠির উদ্চাড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন এবং অনুরোধ করেন। শাহ্ আহম্মদ ঝালকাঠির উদ্চাড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করে এবং সওদাগরের কন্যাকে বিয়ে করেন। তিনি দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে উদ্চাড়া গ্রামে বাস করতেন। মীর মোশায়েক তেরআনা গ্রামে বাস করতেন। পিতা-পুত্র উভয়ে বিখ্যাত সুফী-সাধক ছিলেন। ইসলাম প্রচারে মীর মোশায়েক ও তার পিতার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মোগল স¤্রাট তাদের বাগপুরে লাখেরাজ সম্পত্তি দিতে চাইলেন। কিন্তু শাহ্ আহম্মদ বিনা খাজনায় ভূমিদান গ্রহণে অস্বীকার করেন। স¤্রাট গ্রামটির রাজস্ব মাত্র তেরআনা ধার্য করেন। তাই গ্রামের নাম তেরআনা। উদ্চাড়া গ্রামে শাহ্ আহম্মদের মাজার আছে। উঁচু দেয়াল দিয়ে তার মাজার ঘেরা আছে। মাজারের উপরে ছাড় ছিল, তা ভেঙ্গে পড়েছে। তার মাজারে নিকটে তার দুই ছেলের মাজার আছে। মীর মোশায়েকের মাজার তেরআনা গ্রামে অবস্থিত। তার মাজারে তিন খন্ড পাথর আছে। একটি পাথরে পায়ের ও কনুর ছাপ আছে। অন্য পাথর দুটি পাটাপুতার আকৃতি। মীর মোশায়েকের আমলের একটি প্রাচীন পুকুর আছে। শাহ্ আহম্মদের মাজারে যুগ যুগ ধরে দুটি শেরবাজ পাখি শিমুল গাছে বাস করে। মীর মোশায়েক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিরেন যে, এ বংশের চতুর্দশ পুরুষ পীর হবেন। বর্তমানে চতুর্দশ পুরুষ চলছে। কিন্তু কোন পরীরের আবির্ভাব হয়নি। তবে তারা বারো পুরুষ পর্যন্ত পীরালি ব্যবসা করত। মীর মোশায়েকের বংশধর বর্তমানে খন্দকার নামে পরিচিত।
হজরত শাহ্ কামাল
হজরত শাহ্ কামাল মোগল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে (১৬৫৮-১৭০৭) বাকলায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের প্রাচীন নাম বাঙ্গালা। তাই শাহ্ কামাল এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করে শাহ্ বাঙ্গাল উপাধি গ্রহণ করেন। শাহ্ বাঙ্গাল পরিবর্তিত হয়ে শেহাঙ্গল হয়েছে। শাহ কামাল যখন বাকলায় আগমন করেন তখন সেলিমাবাদ পরগণার এক বিরাট অংশ সুন্দরবনে আবৃত ছিল। শাহ কামাল সুন্দরবনের বাঘ বশীভূত করেন। ফলে জঙ্গল কেটে বসতি হলো। শত শত লোক শাহ কামালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। দক্ষিণ বাংলায় তার কয়েকটি ইসলাম প্রচার কেন্দ্র ছিল। শেহাঙ্গলের পরেই তার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রচার কেন্দ্র ছিল মোরেলগঞ্জ থানার হোগলাপাশা। হোগলাপাশায় শাহ কামাল একটি মসজিদ নির্মাণ ও দীঘি খনন করেন। তার সময়ের কয়েকটি ইটে বাঘের পায়ের ছাপ আছে। হজরত শাহ কামাল শেহাঙ্গলে ৭টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। তার মধ্যে ৬টি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। ১৯৬৭ খ্রিঃ মাটির টিলা খনন করে একটি মসজিদ আবিষ্কার করা হয়। মসজিদের মধ্যে ধাতু নির্মিত যন্ত্রপাতি ও মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়। মনে হয় জলোচ্ছ্বাস বা মগ-পর্তুগীজদের আক্রমণের ফলে এ অঞ্চল জনশূন্য হয়ে পড়ে। শাহ কামাল ও তার দরগাহের অনেক কাহিনী আছে। তার শিষ্য ছিলেন দিলরাজ খাঁ। দিলরাজ খাঁ একরাতে ৭টি দরজা নির্মাণ ও একটি দীঘি খনন করেন। শাহ কামালের মসজিদের নিকট খাঁ বাড়ীর পিছনে দিলরাজ খাঁর মাজার আছে। ১৭ শতকে হজরত শাহ কামাল বাকলা সরকারের সেলিমাবাদ পরগণার জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তার সুফী-সাধনায় মুগ্ধ হয়ে এ অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমান তাকে পরম শ্রদ্ধা করত। আজও শত শত ভক্ত শাহ কামালের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে আছে। প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসে মাজারে উরস ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।৪
হজরত শাহ্ চেরাগ আলম
হজরত শাহ্ চেরাগ আলম ১৭ শতকে বাকলায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। প্রবাদ আছে শাহ্ চেরাগ আলম বাঘের পিঠে চড়ে এবং সর্পকে হাতের লাঠি বানিয়ে এ অঞ্চলে আসেন। তিনি নলছিটি থানার মেহাঙ্গলে বসতি স্থাপন করেন। দিল্লীর বাদশাহ তার আধ্যাত্মিক শক্তির কথা শুনে মাজারের জন্য ৩৬০ বিঘা ভূমি লাখেরাজ প্রদান করেন। তিনি শেহাঙ্গলে একটি মসজিদ নির্মাণ ও দীঘি খনন করেন। মাজারে একখন্ড পাথর আছে। পাথর খন্ডের উপর নাকি কোরান শরীফ ভেসে মাজারে পৌঁছেছিল। মাজারকে কেন্দ্র করে শেহাঙ্গলের কাজী পরিবার, চাচোরের সৈয়দ, নাটিমসারের লস্কর ও মানপাশার সরদার বংশ এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। শেহাঙ্গলের কাজী পরিবার লাখেরাজ সম্পত্তি ভোগ করত। তারা মোগল যুদে খুব প্রতাপশালী ছিলেন। মাজারে প্রত্যেক বছর উরস অনুষ্ঠিত হয়। শাহ চেরাগ আলম শাহ বাঙ্গাল উপাধি গ্রহণ করেছিলেন এবং তার নামানুসারে এলাকার নাম শেহাঙ্গল হয়েছে।
হজরত সৈয়দ ফকির
মোগল আমলে হজরত সৈয়দ ফকির নামে একজন পীর আরব দেশ থেকে বণিকদের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরে আসেন। সৈয়দ ফকির বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের সুখ্যাতি শুনে এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেন। চট্টগ্রাম থেকে তিনি নৌপথে বাকলায় আসেন। তখন বানারীপাড়ার অধিকাংশ এলাকা সুন্দরবনে আবৃত ছিল। হজরত সৈয়দ ফকির এ অঞ্চলের এক জঙ্গলে আরাধনা শুরু করেন। তার গুণে মুগ্ধ হয়ে শত শত শিষ্য জঙ্গল পরিষ্কার করে বসতি স্থাপন করেন। সৈয়দ ফকিরের নাম অনুসারে নতুন জনপদের নাম হলো সৈয়দকাঠি। তিনি একজন বিখ্যাত দরবেশ চিলেন। তিনি অত্যন্ত সাধারণভাবে জীবন যাপন করতেন। তিনি সৈয়দকাঠিতে এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তার নির্মিত মসজিদ হতে গ্রামের নাম মসজিদবাড়ী হয়েছে। পানীয়জলের কষ্ট নিবারণের জন্য তিনি কয়েকটি দীঘি খনন করেন। ১৯০৩ খ্রিঃ জরিপের বিবরণে দেখা যায় সৈয়দ ফকির প্রথম এ অঞ্চল আবাদ করেন। তার বংশধর সৈয়দ আবু মোহাম্মদ ও সৈয়দ ক্রোশের নামে লাখেরাজ সম্পত্তি ছিল। ইংরেজ রাজত্বের প্রথম দিকে জনৈক লক্ষ্মীকান্ত তাদের সৈয়দকাঠি থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং জমিদারী কেড়ে নেয়। সৈয়দ ফকিরের বংশধররা টাঙ্গুখাঁর আশ্রয়ে লবণসারা গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। সৈয়দ আবদুল হাকিম তার শিষ্য মুছা-মাছিমের নামে লাখেরাজ সম্পত্তি ভোগ করতেন। লবণসারার সৈয়দ পরিবার সৈয়দ ফকিরের বংশধর।
বারআউলিয়ার দরগা
স¤্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১২ জন আউলিয়া বাকেরগঞ্জ থানার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে নন্দপাড়ায় চিল্লায় বসেন। তারা খোদার ধ্যানে এতই মগ্ন ছিলেন যে, তারা আহার নিদ্রা ভুলে যান। স¤্রাট আওরঙ্গজেব এ সংবাদ শুনে আউলিয়াদের জন্য কাপড়, ঘোড়া ও টাকা পাঠিয়ে দেন। আউলিয়াগন স¤্রাটের দান প্রত্যাখ্যান করেন। স¤্রাট এ সংবাদ শুনে তার দান ফেরত চাইলেন। আউলিয়াগণ এ কথা শুনে রাগান্বিত হয়ে রাতের অন্ধকারে একটি সুড়ঙ্গ পথে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। ভক্তরা মাজারের উত্তর পাশে এই সুড়ঙ্গপথে দুধ ঢেলে দিত। স¤্রাট আওরঙ্গজেব আউলিয়াদের নিরুদ্দেশের কথা শুনে দরগা পরিচালনার জন্য তিন দরুণ তেরো কানি ভূমি লাখেরাজ প্রদান করেন। স্থানীয় ফকির জালাল আরেফিন একজন বিখ্যাত দরবেশ ছিলেন। তিনি মাজারের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। মাছিম শাহ নামে আর একজন পীর পূর্ব থেকে এখানে বাস করতেন। তার আহবানে বারআউলিয়াগণ এ অঞ্চলে আগমন করেন। বারআউলিয়ার দরগায় তার মাজার আছে। অনেকে বলেন মাছিম শাহ ও জালাল আরেফিন এক ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু এ তথ্য ঠিক বলে মনে হয় না। স¤্রাট আওরঙ্গজেব দরগা নির্মাণ করান। তিনি পাশেই একটি মসজিদ নির্মাণ ও দীঘি খনন করা। এ দরগাকে কেন্দ্র করে শত শত ভক্তের আগমন ঘটে। দরগার পশ্চিম পাশে এক বিরাট এলাকা নিয়ে কয়েকটি দালান ছিল। মসজিদ ও বৈঠকখানা ধ্বংস হয়ে ড়েছে। এখন মাজারটি বর্তমান আছে। একটি পাকুড় গাছ মাজারটিকে অদ্ভুতভাবে ঘিরে আছে। দীঘিটি ভরে গেছে। কালু খাঁ বর্তমানে মাজারের তত্ত্বাবধানে আছেন। তার পূর্বপুরুষ মঙ্গল খাঁ ফকির নবাবী আমলে মাজারের খাদেম ছিলেন।
হজরত ওয়াজির আলী শাহ্
হজরত ওয়াজির আলী শাহ্ দক্ষিণ শাহ্বাজাপুরে (ভোলা) ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। তিনি সব সময় আল্লার ধ্যানে মগ্ন থাকতেন এবং মাঝে মাঝে অদৃশ্য হয়ে যেতেন। তিনি বাংলা ১০১০ সন মোতাবেক ১৬০৩ খ্রিঃ ইন্তেকাল করেন। প্রত্যেক বছর ২৭ ফান্ডুন তার মাজারে উরস হয়। হজরত শাহ্ সাজেন্দ বাগেরহাটের খানজাহান আলীর সঙ্গী ছিলেন। তার বংশধর হজরত শাহাবুদ্দীন নবাবী আমলে পিরোজপুরে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। রায়েকাঠির জমিদাররা তাকে নিষ্কর ভূমি প্রদান করেন। তিনি রাজাপুর থানার শুক্তাগড়ে বসতি স্থাপন করেন। সেখানে তার মাজার আছে। তিনি ফকির শাহাবুদ্দিন নামে পরিচিত ছিলেন। তার বংশধররা সাতুরিয়ায় বাস করেন। হজরত গজনী শাহ কোতোয়ালি থানার চাঁনপুরা গ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য বসতি স্থাপন করেন। মোগল কর্মচারী বৈরম খাঁ বা বুরুম খাঁ চানপুরা গ্রামে একটি দীঘি খনন করেন। গজনী শাহ দীঘির পাড়ে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। কিছু দিনের মধ্যে বুরুম খাঁর দীঘিটি গজনীর দীঘি বলে পরিচিত হয়। বুরুম খাঁ ঈর্ষান্বিত হয়ে হজরত গজনী শাহের শিরñেদ করেন। গজনী শাহ নিজের মাথা হাতে নিয়ে কিছুদূর হেঁটে যান এবং তারপর চিরন্দ্রিায় শায়িত হন। দীঘির পাড়ে তাঁর মাজার আছে। বাকেরগঞ্জ থানার দুর্গাপাশা ইউনিয়নে গোবিন্দপুর গ্রামে বাঘাই শাহের মাজার। তিনি সুন্দরবনের বাঘ বশীভূত করে বাঘাই শাহ উপাধিপ্রাপ্ত হন। তার প্রকৃত নাম জানা যায়নি। তিনি এক অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। বাঘাই শাহ কয়েকটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
সৈয়দ মুনীর হোসেন ঠাকুর
১৮ শতকের প্রথম ভাগে সৈয়দ মুনীর হোসেন ঠাকুর নামে এক সাধক গৌরনদীর নাঠে গ্রামে বসতি স্থাপন করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। নাঠৈর সৈয়দগণ তার বংশধর। শেখ কবির মাহমুদ ১৮ শতকের মধ্যভাগে পটুয়াখালী অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। তিনি লোহালিয়ায় বসতি স্থাপন করেন। তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ ও দীঘি খনন করেন। হজরত নেয়ামত শাহ শাহ সুজার সাথে বরিশালের দক্ষিণাঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। বিবিচিনি গ্রামে তার মাজার ও মসজিদ আছে। মিয়া জমির শাহ মোগল আমলে দক্ষিণ শাহবাজপুরে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। মনপুরার মাঝগ্রামে তার মসজিদ ও মাজার ছিল। গ্রামটি মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মীর শাটল নামে একজন পীর বাকেরগঞ্জের কানকি গ্রামে বিয়ে করে বসতি স্থাপন করেন। তার মসজিদ ও মাজার নদীতে ভেঙ্গে গেছে। কানকির সৈয়দ পরিবার তার বংশধর। হজরত মাহমুদ ইদ্রাক সুবাদার শায়েস্তা খানের সাথে বাংলাদেশে আগমন করেন এবং ধামুরায় বসতি স্থাপন করেন। মাহমুদ ইদ্রাক এ াঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। ধামুরায় তার মাজার আছে। তার সময় নির্মিত দালান ও দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ আছে। নবাব তার আধ্যাত্মিক শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে তার নামে ইদ্রাকপুর পরগণার জমিদারী প্রদান করেন। ধামুরার মিয়ারা তার বংশধর। পীর মোহাম্মদ তক্কী বাকেরগঞ্জে ইসলাম প্রচার করেন এবং পারশিবপুরে বসতি স্থাপন করেন। এখানে তার মাজার ও তিনটি মসজিদ আছে। পারশিবপুরের সিকদার পরিবার তার বংশধর। উজিরপুরে ডহরপাড়া গ্রামে মাছিম শাহের মসজিদ ও দীঘি আছে। তিনি মোগল আমলে এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। চাখারের মেহেদী মজুমদারের জামাতা মীর কুতুব ও তার বংশধর মর মাহমুদ আলী পীর ছিলেন।
স¤্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে দিল্লীতে শাহানা নামে এক তাপসী মহিলা ছিলেন। তার পুত্র দস্তর খাঁ ও রুস্তম খাঁ শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশে চলে আসেন। দস্তর খাঁ স্বরূপকাঠি থানার সোহাগদলে বসতি স্থাপন করেন। সোহাগদলে তার মাজা ও দীঘি আছে। দীঘিটি ভরে গেছে। তার মাজারে ফার্সী ভাষায় লেখা একখানা পাথর আছে। সোহাগদলের খাঁ ও কোতোয়াপলি থানার সিংহেরকাঠির আমজেদ খাঁর পরিবার তার বংশধর।
ফকির শেখ শাহ্ খুদগীর
১৭ শতকে ফকির শেখ শাহ্ খুদগীর আরব থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য ঢাকা হয়ে ফরিদপুরে আসেন। তিনি ফরিদপুরের পাতবাইল ও পাইতলেদি মসজিদ নির্মাণ করেন। তারপর তিনি ঝালকাঠি থানার রাজপাশা গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। রাজপাশা গ্রামে তিনি জান্নাতবাসী হন। এখানে তার মাজার ও দীঘি আছে। মাজার পাথর দিয়ে বাঁধানো এবং পাথরে ফার্সী লেখা আছে। তার বংশধরদের নামানুসারে শেখেরহাটের নামকরণ হয়েছে। তিনি হজরত আবু বকরের (রাঃ) বংশধর ছিলেন। আবদুস সোমেদ বাঘের পিঠে চড়ে চৌদ্দবুড়িয়ায় আসেন। তিনি একজন বিখ্যাত দরবেশ ছিলেন। চৌদ্দবুড়িয়ার খন্দকাররা তার বংশধর। শায়েস্তাবাদের রাজাপুরে কালাপীর ও গুঠিয়ার বান্নাপীর মোগল আমলে এ অঞ্চলে ধর্ম প্রচার করেন।
শিয়া সম্প্রদায়
সতেরো ও আঠারো শতকে বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের প্রভাব ছিল। বিশেষ করে নবাবী আমলে শিয়ারা বাংলার মুসলিম সমাাজে প্রাধান্য বিস্তার করে। আঠারো শতকের গোড়ার দিকে পারসে্েযর সাফাবী বংশের রাজত্ব শেষ হয়ে যায়। সাফাবী রাজপরিবার ও কর্মচারীদের অনেকেই শিয়া ছিলেন। তাই রাজনৈতিক দুর্যোগে ও অর্থনৈতিক কারণে শত শত শিয়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। নবাব সুজাউদদৌলা, আলীবর্দী খাঁ, সিরাজউদ্দৌলা, নায়েব নাজিম ও নওয়াজিশ খাঁ, জেসারত খাঁ, হোসেনকুলী খাঁ, মীর জাফর, আগা বাকের কাঁ, আগা সাদেক প্রমুখ শিয়া ছিলেন। ইরান ও ইরাক থেকে অনেক শিয়া ভূমি ও চাকরি লাভ করে বাকলায় বসতি স্থাপন করেন। তাদের আমলে মহররম, তাজিয়া ও মর্সিয়া মুসলমানদের জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাড়িতে ইমামবাড়া ছিল। নলচিড়ার মিয়া, বাউরগতির মিয়া, চাখারের মীর বাড়ী, চৌদ্দবুড়িয়ার মীর বাড়ী প্রভৃতি স্থানে ইমামবাড়া ছিল। মিয়াদের প্রভাবে বাকেরগঞ্জ-পটুয়াখালী জেলায় প্রায় শতাধিক জোড়মসজিদ নির্মিত হয়। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পরেও এ অঞ্চলে জোড়মসজিদ নির্মিত হয়েছে। জোড়মসজিগুলো হজরত আলী ও ফাতেমা (রাঃ) নামে নির্মাণ করা হয়েছে।
বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ পীর আউলিয়াদের দেশ। উল্লিখিত সুফী সাধকগণ ছাড়া আরও অনেক নাম না জানা আউলিয়া-দরবেশও এ অঞ্চলে এসেছেন। তাদের তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মোগল ও নবাবী আমলে পীর-আউলিয়াগণ ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন। তাদেরকে কেন্দ্র করে মুসলিম আচার ব্যবহার স্থানীয় সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে। তাদের সাথে আরব, ইরান, ইরাক প্রভৃতি দেশ হতে অনেকে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। অবশ্য পীর-আউলিয়াদের জীবন কাহিনী কিংবদন্তি ও লোককাহিনীতে পূর্ন। তাদের কেন্দ্র করে নানান অলৌকিক কাহিনী সৃষ্টি হয়েছে। তাদের কার্যাবলী আলোচনা করলে দেখা যায় তারা ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে কোন রকম শক্তি প্রয়োগ করেননি। তারা প্রায় সকলে সুফী মতাবলম্বী ছিলেন। তারা হিন্দু-মুসলমানদের কাছে প্রিয় ছিলেন। তাদের অপূর্ব মানবতাবাদী গুণাবলী দেখে শত শত হিন্দু তাদের মাজারে আগমন করত। তারা হিন্দু মুসলমানের ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় করেন।
তথ্য নির্দেশ
১. সাক্ষাৎকার-ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব, কসবা, গৌরনদী ২. সাক্ষাৎকার-সৈয়দ জিয়াউদ্দিন, নলচিরা, গৌরনদী ৩. সাক্ষাৎকার-এডভোকেট এম.এ ওয়াহেদ, বিনয়কাঠি, ঝালকাঠি ৪. সাক্ষাৎকার-প্রয়াত নুরুল ইসলাম খান সুলতান, ভাসানী ন্যাপ নেতা ৫. এডভোকেট এস এম ইকবাল, বরিশাল বার