বাইতুল আমান মসজিদ, গুঠিয়া, উজিরপুর

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:০২, ১৩ আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত সংস্করণে ("বাইতুল আমান মসজিদ, গুঠিয়া, উজিরপুর: বরিশাল জেলার উজিরপুর..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

বাইতুল আমান মসজিদ, গুঠিয়া, উজিরপুর: বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রামে অবস্থিত বাইতুল আমান নামক মসজিদটি বরিশাল বিভাগের আধুনিক স্থাপত্যের িএক অনন্য নিদর্শন। এটি গুঠিয়া মসজিদ নামেই সমধিক পরিচিত।


প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর উজিরপুরের গুঠিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা হযরত শাহ্ সুফী আশরাফ জাহান খানের (র)-এর বংশধর আলহাজ আব্দুল মজিদ সরদার (মরহুম)-এর দ্বিতীয় পুত্র এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু গুঠিয়ার চাংগুরিয়ার নিজ বাড়ির সামনে প্রায় ১৪ একর জমির ওপর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ-ঈদগাহ কমপ্লেক্সের নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন। প্রায় চার বছর মেয়াদের মধ্যে ২০০৬ সালে উক্ত জামে মসজিদ- ঈদগাহ কমপ্লেক্সে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। তার নির্মাণাধীন সময়কালের মধ্যে তিনি একটি বৃহৎ মসজিদ-মিনার, ২০ হাজার অধিক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ঈদগাহ ময়দান, এতিমখানা, একটি ডাক বাংলো নির্মাণ, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, হেলিপ্যাড, লেক-পুকুর খনন কাজসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ-ফুলবাগান তৈরি ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করেন। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়।


কমপ্লেক্সের অন্যান্য স্থাপনাসমূহ

মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্সের মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করলে ডান পাশে রয়েছে একটি পুকুর, পুকুরটির চার পাশ বিভিন্ন রঙের ফুল ও গাছ দিয়ে সাজানো। দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য পুকুর পাড়ের রাস্তা পাকা করে দেয়া হয়েছে। বাদাম গাছের নিচে রয়েছে মোজাইক দিয়ে তৈরি শান বাঁধানো ঘাট । ঘাটের ঠিক উল্টো দিকে মসজিদের প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে দুটি ফোয়ারা। রাতে আলোর ঝলকানিতে ফোয়ারাগুলো আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। মসজিদের তিন পাশে খনন করা হয়েছে কৃত্রিম খাল। মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তিন-চারটি মসজিদের আদলে, তবে হুবহু একই রকম নয়। এটির প্রতিষ্ঠাতা সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু তার কয়েকজন স্থপতি বন্ধুকে নিয়ে যান শারজাহ, দুবাই, তুরস্ক, মদিনা শরিফ, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। স্থপতিরা বিদেশী বিভিন্ন স্থাপত্য কর্মময় মসজিদের আদলে গুঠিয়ায় এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।

মসজিদের সামনের পুকুরটি এমনভাবে খনন করা হয়েছে যাতে পুকুরের পানিতে মসজিদটির পুরো প্রতিবিম্ব দেখা যায়। ২০টি গম্বুজের স্থাপত্যকলায় সাজানো হয়েছে বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স। মাঝখানের কেন্দ্রীয় গম্বুজের চার পাশে বৃত্তাকারে ক্যালিওগ্রাফির মাধ্যমে লেখা হয়েছে পবিত্র আয়াতুল কুরসি। গোটা মসজিদের ভেতরের চার পাশজুড়ে ক্যালিওগ্রাফির মাধ্যমে লেখা হয়েছে সূরা আর রাহমান। ভেতরের চার কোণের চার গম্বুজের নিচে প্রবেশ তোরণের সামনে এবং ভেতরের দর্শনীয় কয়েকটি স্পটে শোভা পাচ্ছে আল কোরানের বিভিন্ন আয়াত সংবলিত ক্যালিওগ্রাফি। এসব সুদৃশ্য ক্যালিওগ্রাফি এবং আলপনা করা হয়েছে বর্ণিল কাচ, মূল্যবান মার্বেল পাথর, গ্রানাইট ও সিরামিক দিয়ে। ভেতরের নয়টি গম্বুজে বিশালাকৃতির নয়টি অত্যাধুনিক ও মূল্যবান ঝাড়বাতি বসানো হয়েছে। মসজিদটির মিনারের উচ্চতা ১৯৩ ফুট। মসজিদটির মেঝেতে বসানো হয়েছে ভারত থেকে আনা সাদা মার্বেল পাথরের টাইলস। মসজিদটির ভেতরে এক হাজার ৪০০ মুসলি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। বাইরের অংশে আরও পাঁচ হাজার মুসল্লি একত্রে নামাজ পড়তে পারেন। মুসল্লিদের সুবিধার্থে স্থাপন করা হয়েছে বিদেশ থেকে আনা অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। মসজিদের উত্তর পাশে দুই তলা বিশিষ্ট ভবনে রয়েছে কমপ্লেক্সের অফিস, খতিব ও মুয়াজ্জিনের কোয়ার্টার, এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা। মসজিদটির পূর্ব-দক্ষিণ কোনে আড়াই একর জায়গায় রয়েছে কবরস্থান। পুরো কমপ্লেক্সের আঙিনাজুড়েই রয়েছে ফুলের বাগান, গাড়ি পার্কিং ও হেলিপ্যাড। নিরাপত্তার জন্য কমপ্লেক্সের তিন দিকে মনোরম লেক তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া কাঁটাতারের বেষ্টনী তো আছেই। বিদ্যুত লাইনের পাশাপাশি রয়েছে ১৫০-১৫ কেভিএ শক্তিসম্পন্ন নিজস্ব দুটি জেনারেটর, যার কারণে মসজিদটি রাতে অনেক বেশি নয়নাভিরাম মনে হয়। সব মিলিয়ে নিপুণ হাতের সুনিপুণ এক সৃষ্টি গুঠিয়ার বায়তুল আমান জামে মসজিদ।

প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ পথের বাঁয়ে নির্মিত হয়েছে একটি ¯স্তম্ভ। বিশ্বের ২১টি স্থানের মাটি এবং জমজম কূপের পানি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই স্তম্ভটি। আশ্চর্যকর এই স্তম্ভটি দেখে আরও বেশি আবেগাপ্লুত হন আগত পর্যটকরা।

ক্যালিগ্রাফির শিল্পী

মজার ব্যাপার হলো মসজিদ কমপ্লেক্সের সৌন্দর্যবর্ধন কাজের কীর্তিমান শিল্পী আরিফুর রহমানের বাড়িও সেই বরিশালে। গোটা মসজিদের সিংহভাগ ক্যালিগ্রাফি এবং আঁকাআঁকির কাজ তিনিই করেছেন। এ ছাড়াও এই কাজে তাঁর সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিলেন আরেক ক্যালিগগ্রাফার বশির মেসবাহ।

উপসংহার

এমনিভাবে প্রতিদিন বহু মানুষের আগমন ও তাদের মনোমুগ্ধকর মন্তব্যের মধ্য দিয়ে দেশের সর্বত্র সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে এ মসজিদ ও কমপ্লেক্সের।


তথ্য উৎস: ২৪সংবাদ, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮