বরুণ সেনগুপ্ত

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:০১, ১৭ এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত সংস্করণে ("প্রখ্যাত সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্তের (২৩.১.১৯৩৪- ১৯.৬.২০০৮) জন..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

প্রখ্যাত সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্তের (২৩.১.১৯৩৪- ১৯.৬.২০০৮) জন্ম বরিশাল শহরে। পিতা পোর্ট্রটে পেইন্টার নির্মলানন্দ; মাতা রানীবালা দেবী।

পিতার কর্মস্থল ওড়িশার বামড়া স্টেটে পিতার সঙ্গেই বরুণ সেনগুপ্ত চলে যান। বরুণ সেনগুপ্তের শৈশব কেটেছে ওড়িশার বামড়া স্টেটের দেবগড়ে। সেখানে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ে বরিশালে ফিরে ব্রজমোহন স্কুলে ভর্তি হন। দেশভাগের আগেই ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় চলে আসেন। শ্যামবাজার টাউন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, আই.কম. ও বি.কম. পাশ করেন সিটি কলেজ থেকে। কলেজে পড়ার সময়েই পত্রিকা প্রকাশের ইচ্ছা জাগে এবং ‘ভাবীকাল’ নামে একটি পত্রিকাও বের করেন। তবে সে পত্রিকাটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এর পর ফরওয়ার্ড ব্লকের জননেতা হেমন্ত বসুর কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার নিয়ে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘বর্তমান’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা চালাতে শুরু করেন। এখান থেকে বরুণ সেনগুপ্তের সাংবাদিকতার পথ চলা শুরু। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে আনন্দবাজারে রাজনৈতিক সংবাদদাতা হন। তার আগে কলকাতার সংবাদপত্রে রাজনৈতিক সংবাদদাতার কোনো পদ ছিল না। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে আনন্দবাজার ত্যাগ করেন নিজে একটি দৈনিক কাগজ বার করবেন বলে। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে পত্রিকা প্রকাশের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি, তা বাস্তবায়িত হয ১৯৮৪-র ৭ ডিসেম্বর। প্রকাশিত হয় ‘বর্তমান’। অর্থ সাহায্যোর আবেদন জানিয়েছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে। প্রভূত সাড়াও পেয়েছিলেন। কারণ ইতিপূর্বে আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘রাজ্য রাজনীতি’ কলামটি ছিল মানুষের অত্যন্ত প্রিয় কলাম। এছাড়া রাজনৈতিক সংবাদদাতা হিসেবে তাঁর প্রসিদ্ধিও ছিল তুঙ্গে। সাংবাদিকতার সুবাদে বিশিষ্ট শিল্পপতিদের সঙ্গেও তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ভারতের নানা রাজ্য ছাড়াও পৃথিবীর বহু দেশ, যেমন- ১৯৬৪ তে রাশিয়া, ১৯৬৫-তে পাকিস্তান, ১৯৭৮-এ আমেরিকা এবং ১৯৭৯-তে চীন সফর করেছেন। সঞ্চয় করেছেন বহু অভিজ্ঞতা। কভার করেছেন ’৭১-এর বাংলাদেশ যুদ্ধ, বেইরুটেও গিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের লড়াইয়ের রিপোর্টিং করতে। দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে মোরারজি দেশাই, চরণ সিং, রাজীব গান্ধী, অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদভানীর নানা উত্থান এবং পতনের তিনি সাক্ষী ছিলেন। দীর্ঘদিনের রাজনেতিক রিপোর্টিংয়ের অভিজ্ঞতার ফসল তাঁর লেখা বিভিন্ন বই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বই হল ‘পালাবদলের পালা’ (১৯৭১), ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ (১৯৭১), ‘বিপাক-ই-স্তান’ (১৯৭২), ‘নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য’ (১৯৭৫), ‘ইন্দিরা একাদশী’ (১৯৭৭), ‘অন্ধকারের অন্তরালে’ (১৩৮৬ ব.), ‘দিল্লির পালা বদল’ (১৯৭৯), ‘বরুণ সেনগুপ্ত রচনা সমগ্র; (২০০৭) প্রভৃতি। ছাত্রাবস্থায় বরুণ সেনগুপ্ত জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ফরওয়ার্ড ব্লকের ছাত্র সংগঠন ছাত্র ব্লকের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। সেই সূত্রে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ নির্বাচনেও তিনি বামপন্থীদের পক্ষে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৬-এর জানুয়ারি মাসে জরুরি অবস্থা চলাকালীন সরকার তাঁকে ‘মিসা’য় আটক করে সাড়ে আটমাস রাখে। জেল থেকে বেরিয়ে ১৯৭৭- এর জানুয়ারিতে আনন্দবাজার পত্রিকায় বেশ কয়েকটি লেখা লেখেন ‘এতদিন জেলে ছিলাম’ এই শিরোনামে। তিনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন। শেষ বয়সে বেশ কিছুদিন তিনি অসুখে ভুগে নার্সিংহোমে মারা যান।



তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান