বরিশাল শহরের হাসপাতালের ইতিহাস

Barisalpedia থেকে

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আগমনের পূর্বে বরিশালে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। তখন আয়ুর্বেদী, কবিরাজী, হেকিমী, তাবিজ ও ঝাড় ফুঁক-এর ওপর মানুষ নির্ভরশীল ছিল। চাঁদসীর ক্ষত চিকিৎসা ও বালাবাড়ির চিকিৎসা জনপ্রিয় ছিল। টীকা ও ইনজেকশন আবিস্কৃত হলে মৃত্যুর হার হ্রাস পেতে থাকে। ১৯২১ সালে জন্মহার ছিল ৩০.৯ এবং মৃত্যু হার ছিল ২৭.০৬।

১৮৪৭ সালে বরিশালে একটি চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী প্রতিষ্ঠিত হয়। একজন সাব এ্যাসিস্টান্ট সার্জন এর পরিচালক ছিলেন। পরবর্তীতে বর্ধমান ও বরিশাল হাসপাতাল অবিভক্ত বাংলায় উন্নত ছিল। বরিশালের সদর হাসপাতাল ভবন ১৯১০ সালে নির্মিত হয়। হাসপাতাল ভবন নির্মাণে অনেকে চাঁদা ও জমি দিয়েছেন। পূর্ববঙ্গের লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার ল্যান্সলট হেয়ার ১৯১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ১৯১২ সালের ১৩ জুলাই হসপিটাল উদ্বোধন করেন। ১৯২৫ সালে বানারীপাড়ার বাইশারির ইন্দ্রনাথ দত্ত তার মা’র নামে গোলকমণি মহিলা ওয়ার্ড, কালীচন্দ্র ১৯৩৮ সালে শশীমুখী অপারেশন থিয়েটার, ১৯৩৮ সালে ব্যারিস্টার নলিনীগুপ্ত ও তার ভাই বিনয়গুপ্ত তাদের পিতা ও মাতার নামে জগচন্দ্র ও মুক্তাকেশীর নামে দু’টি পেয়িং ওয়ার্ড নির্মাণ করেন। রাজাপুরের সাতুরিয়ার জমিদার মেহেরুন্নেছা ভবনের জন্য জমি প্রদান করেছিলেন। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত একটি কমিটি হাসপাতাল পরিচালনা করত। ১৯৪৪ সালে কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার হাসপাতালের সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে।

এলএমএফ ও এমবিবিএস পাস করা কয়েকজন ডাক্তার শহরে চিকিৎসা ব্যবসা করে সুনাম অর্জন করেন। তাদের মধ্যে ডা. তারিণী গুপ্ত স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ষাটের দশকে আমানতগঞ্জে মাতৃসদন, যক্ষ্মা ও রেডক্রস হসপিটাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ম্যালেরিয়া দূরীকরণে সরকার বিশেষ কমৃসূচী গ্রহণ করে। ফলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ হ্রাস পায়। বরিশাল বিএম স্কুল রোডে একটি নাসিং ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর চিকিৎসা ক্ষেত্রে বরিশাল শহরে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়। শেরে বাংলা মেডিক্যাল ৫০০ বেডে উন্নীত হয়েছে, সাথে আছে নাসিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। সিটি করপোরেশনসহ বরিশাল বিভাগবাসী শেরে বাংলা মেডিক্যাল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।