বরিশাল পৌরসভা

Barisalpedia থেকে

১৭৯৭ সালে বাকেরগঞ্জ জেলা সৃষ্টি হয়। ১৮০১ সালে জেলা সদর বাকেরগঞ্জ হতে বরিশালে স্থানান্তর করা হয়। জেলার নাম বাকেরগঞ্জ হলেও জেলা সদর বরিশালে অবস্থিত থাকায় জেলাটি বরিশাল নামেই পরিচিত হতে শুরু করে। ১৮৬৯ সালে ৬ নম্বর আইনের আওতায় ১৮৬৯ সালে বরিশাল টাউন কমিটি সৃষ্টি হয়। ১৮৬৯ সালে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নিয়ে টাউন কমিটি গঠিত হয়। ১. মি. জেসি প্রাইজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সভাপতি ২. মি. ব্রাউন অতিরিক্ত জেলা জজ সহ-সভাপতি ৩. আর জি ম্যাথিউ পৌর চিকিৎসক সচিব ৪. ডবিøউ এল ওয়েন - - ৫. দুর্গামোহন দাস - - ৬. চÐীচরণ রায় - - ৭. তোফায়েল আহমেদ - - ৮. ই. ব্রাউন - - ৯. স্বরূপচন্দ্র গুহ - -

১৮৭৬ সালে বরিশাল টাউন কমিটি বরিশাল পৌরসভায় উন্নীত হয়। পৌরসভায় ১০ জন নির্বাচিত, ৪ জন মনোনীত, একজন পদাধিকারবলে সদস্য ছিলেন। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন। তখন শহরে ৩০৪২টি হোল্ডিং ছিল। কর থেকে বছরে ৭০০০ টাকা আদায় হতো। ১৯১৪ সালে পৌরসভার আয়তন ছিল ৭.৫ বর্গমাইল। করদাতার সংখ্যা ছিল ৩৩৮২ জন। ১৮৯১ হতে ১৯০০ সাল পর্যন্ত পৌরসভার গড় আয় ছিল ২২৬৭৫ টাকা। ১৯১৪ সালে আয় ছিল ৬০৩২৪ টাকা এবং ব্যয় হয় ৫৬২৩২ টাকা।

ডাঃ তারিণী কুমার গুপ্ত ১৯১০ হতে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাই উকিল নিবরণ চন্দ্র দাশগুপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার সময় ডা. তারিণী কুমার গুপ্ত, কালীপ্রসন্ন গুহ, কৈলাশ চন্দ্র সেন, যোগেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, যোগেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী, জি জি ব্রাউন, মুহাম্মদ ইসমাইল চৌধুরী কমিশনার ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান ছিলেন। তারপর শরৎ চন্দ্র গুহ ও বরদাকান্ত ব্যানার্জী পর্যায়ক্রমে চেয়ারম্যান ছিলেন। শরৎ চন্দ্র গুহ ১৯৩৫-৪০, বরদাকান্ত ব্যানার্জী ১৯৪১-৪৫ এবং মোফাজ্জল হক ১৯৪৬-৫০ পর্যন্ত পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

বরদা কান্ত ব্যানার্জীর সময় সদর রোড নির্মাণ ও রাস্তার পাশে তাল বৃক্ষসমূহ রোপন করা হয়। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল পৌরসভার আয়তন ছিল সাড়ে সাত বর্গমাইল এবং করদাতাদের সংখ্যা ছিল ৩৩৮২ জন। ১৮১৯-১৯০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পৌরসভার গড়ে বছরে আয় ছিল ২২৬৭৬, ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে আয় ছিল ৬০৩২৪ টাকা এবং ব্যয় হয় ৬৫২৩২ টাকা। আয়ের প্রধান উৎস ট্যাক্স। ১৯১১-১২ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালে পানীয়জলের ব্যবস্থা করা হয়। কীর্তনখোলা নদী হতে পাইপের মাধ্যমে পানি এনে বিশুদ্ধ করে শহরে সরবরাহ করা হয়। আমানতগঞ্জ পানীয়জলের কল স্থাপনে ১৬০০০০ টাকা খারচ হয়। তন্মধ্যে সরকার ৬০০০০ টাকা প্রদান করে এবং চাঁদা বাবদ আদায় হয়েছিল ৩০০০০ টাকা। জেলা বোর্ড ৩৫০০০ টাকা অনুদান দেয়। পানির কল স্থাপন ঢাকার নবাব স্যার আব্দুল গণি চাঁদা দিয়েছিলেন।

১৯১১ থেকে ১৯১৯ সালে বরিশাল পৌরসভায় পানীয়জলের ব্যবস্থা করা হয়। ২৬০০০ টাকা ব্যয়ে আমানতগঞ্জে পানির কল স্থাপন করা হয়। নদীর পানি এনে বিশুদ্ধ করে শহরে সরবরাহ করা হতো। পানীয়জলের কল স্থাপনে সরকার ৬০ হজার টাকা, জেলা বোর্ড ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করে এবং চাঁদা বাবদ ৩০ হাজার টাকা আদায় হয়। নবাব আব্দুল গণিও চাঁদা দেন।

১৯৩৪ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে বরিশাল শহরে প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। রায় কোম্পানি বরিশালে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। তারা ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিল। ইতিপূর্বে স্টীমার ঘাটে আরএসএন এবং আইজিআর স্টীমার কোম্পানি ১৯২৯ সালে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ১৯৩০ সালের পূর্বে শহরে যাতায়াতের জন্য একমাত্র ঘোড়ার গাড়ি ছিল। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের পর টানা রিকশা এবং ১৯৪০ সালের পর রিকশা চালু হয়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে শহরে ইসমাইল চৌধুরী, উলানিয়ার বাদশা চৌধুরী, ডি সালভা, ডা. নিশিকান্ত প্রমুখের গাড়ি ছিল। বিনোদনের জন্য শহরে ২টি সিনেমা হল- জগদীশ থিয়েটার, দিপালী ছায়া মন্দির চালু হয়।

দেশ বিভাগোত্তর ও স্বাধীনতা পরবর্তী বরিশাল পৌরসভা ১৯৫৯ সালের মৌলিক গণতন্ত্র আদেশে ১৯৬০ সালে মিউনিসিপ্যাল প্রশাসন অধ্যাদেশ অনুসারে বরিশাল মিউনিসিপ্যাল কমিটি গঠন করা হয়। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করত। ১৬টি ইউনিয়ন কমিটি ছিল। প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন কমিশনার নির্বাচিত হতো এবং তারা একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতো। ১৯৬৯-৭০ সালে মিউনিসিপ্যাল কমিটির আয় ছিল ২০ লাখ টাকা এবং কর থেকে আদায় ছিল ৭,৮৭,০০০ টাকা। স্বাধীনতার পর লোকাল কাউন্সিল এন্ড মিউনিসিপ্যাল কমিটি সংশোধন আদেশ ১৯৭২ জারি করা হয়। এ আদেশ অনুসারে বরিশাল মিউনিসিপ্যাল কমিটির স্থলে বরিশাল পৌরসভা গঠন করা হয়। ১৯৭৩ সালে নির্বাচনে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও ডাঃ এম এ আজিজ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে পৌরসভার আয়তন ছিল ৯ বর্গমাইল এবং লোকসংখ্যা ছিল ৯৮ হাজার। পৌরসভার হোল্ডিং ছিল ৬৩১৩, পাকা রাস্তা ৫৫.৭৫ বর্গমাইল। ১৯৭৬ -৭৭ সালে আয় ছিল ৪৩১৫৮০৫ টাকা।

বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যানদের তালিকা:

১. প্যারিলাল রায়, উকিল ১৮৮৫-১৮৮৮; ২. দ্বারকানাথ দত্ত ১৮৮৯-১৮৯২; ৩. অশ্বিনীকুমার দত্ত ১৮৯৩-১৯০৯; ৪. ডা. তারিনী কুমার গুপ্ত ১৯১০-১৯১৯; ৫. নির্বারণচন্দ্র দাশগুপ্ত, উকিল ১৯২০-১৯৩৪; ৬. শরৎচন্দ্র গুহ, উকিল ১৯৩৫-১৯৪০; ৭. বরদাকান্ত ব্যানার্জী, উকিল ১৯৪১-১৯৪৫; ৮. মোফাজ্জল হক, উকিল ১৯৪৬-১৯৫২; ৯. খান বাহাদুর হাশেম আলী খান ১৯৫২-১৯৫৪; ১০. মোফাজ্জল হক, উকিল ১৯৫৪-১৯৫৮; ১১. অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ১৯৫৮-১৯৭২ (পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান); ১২. আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ১৯৭৩-১৯৭৫; ১৩. ডাঃ এম. ও. আজিজ ১৯৭৫-১৯৭৮. ১৪. এডভোকেট আব্দুর রহমান বিশ্বাস ১৯৭৮-১৯৮২; ১৫. গোলাম মাওলা ১৯৮৫-১৯৯০; ১৬. এম এ কামাল ১৯৯১-২০০২।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।