বরিশাল জিলা স্কুল

Barisalpedia থেকে

বরিশাল জিলা স্কুল বরিশাল বিভাগের তথা সমগ্র বাংলার প্রাচীনতম বিদ্যালয়সমূহের মধ্যে একটি। বরিশাল জিলা স্কুল.jpg

ইতিহাস

জেলা জজ ম্যাজিস্ট্রেট ডব্লিউ এন গ্যারেট জনসাধারণের নিকট থেকে চাঁদা তুলে শ্রীরামপুর মিশনের দ্বারা ১৮২৯ সালে ২৫ ডিসেম্বর বরিশালে একটি ইংরেজি স্কুল শুরু করেন। প্রোটেস্টান্ট গির্জার পশ্চিম পাশে জমিদার লুকাসের ভূমিতে মাত্র ৮ জন ছাত্র নিয়ে স্কুলের যাত্রা।পরে স্কুলটি ব্রাউন কম্পাউন্ডে স্থানান্তরিত হয়। ১৮৪২ সালে এটি বর্তমান জায়গায় স্থাপিত হয়। এই জমির মালিক ছিলেন মি. স্পেনসার। তৎকালীন বাংলার গভর্নর এর নির্দেশ মোতাবেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং স্কুলের সেক্রেটারি ই জে বার্টন সরকারকে বিদ্যালয়টি উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিতে থাকেন। তিনি নিজ প্রচেষ্টায় অভিজাত ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে ৩৮,৮১৭ টাকা চাঁদা তোলেন এবং তা সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন। ফলাফল স্বরূপ বিশাল পরিমাণ জমির উপর বরিশাল জিলা স্কুল নির্মিত হয়। ১৮২৯ থেকে মিশন কর্তৃক স্কুলটি পরিচালিত হয়। স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন মিস্টার জন স্মিথ। মিশনের কাজের জন্য স্মিথ ১৮৩৩ সালের অক্টোবর মাসে বরিশাল থেকে চলে যান। তার স্থলে প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন মি. সিলবেস্টার ব্যারিরো। এ সময় স্কুলের যথেষ্ট উন্নতি হয়। মি. স্মিথ পুনরায় বরিশাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে আসেন। মি. ব্যারিরো শ্রীরামপুরের মিশন সদস্য হিসেবে বরিশালে থেকে যান। ১৮৪১ সালের ১৭ এপ্রিল স্মিথ যশোর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে চলে যান। ব্যারিরো পুনরায় বরিশাল জিলা স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ দখল করেন। ১৮৪৬ সালে তিনি স্কুল থেকে বিদায় নিয়ে মিশনের কাজে আত্মনিয়োগ করলেও তাঁকে পুনরায় ফিরে আসতে হয় এবং তিনি ১৮৫৩ সালে পর্যন্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে বহাল থাকেন। ১৮৫৩ সালে বরিশাল ইংরেজি স্কুলের ব্যয়ভার সরকার গ্রহণ করে এবং স্কুলের নামকরণ হয় বরিশাল জিলা স্কুল। ১৮৫৩ সাল হতে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত স্কুলের ব্যয়ভার সরকার বহন করে। এ সময় স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ছিল ৬০০। বরিশাল সহরে কয়েকটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে ১৮৯২ সালে সরকার জিলা স্কুলকে বেসরকারি ঘোষণা করে।সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলার গভর্নরকে স্কুলে অর্থ ও জমি প্রদানের আশ্বাস প্রদান করলে ১৯০৬ সালে পুনরায় এ স্কুল সরকারি স্কুলে পরিণত হয়। নামকরণ হয় বরিশাল জিলা স্কুল। স্কুল উনয়নে সায়েস্তাবাদের জমিদার সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীন প্রমুখ অবদান রেখেছেন। খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীন পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৬১ সাল থেকে এই স্কুলকে পাইলট স্কুলে পরিণত করা হয়। তখন আমেরিকান বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে এর নানাবিধ পরিবর্তন ও সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এই স্কুলের ছাত্ররা গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখে।

অবকাঠামো

১৮০ বছরের প্রাচীন বিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ২০ একর। বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনসহ একাডেমিক ভবনের সংখ্যা ৬টি। স্কুলে ১টি মসজিদ, ১টি ছাত্রাবাস, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন ও ২টি খেলার মাঠ রয়েছে। বরিশাল জিলা স্কুল থেকে একে ফজলুল হক ১৮৮৯ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট জিলা স্কুল পরিদর্শন করেন এবং ছাত্রদের বলেন যে, ‘আজ আমার জীবন ধন্য, যেহেতু আমি এই স্কুলের ছাত্র’। তিনি স্কুল ভবন সম্প্রসারণ করেন। পরেশ সাগরের পারের জমি খেলার মাঠ হিসেবে স্কুলকে প্রদান করেন।

প্রধান শিক্ষকগণের তালিকা

১. মিঃ জন স্মিথ (১৮২৯ - ১৮৩৮) ২. মিঃ সিলভেস্টার বারীরো ( ১৯৩৮ - ১৮৫৩) ৩. মিঃ জন স্মিথ ৪. মিঃ অ্যান্থনি ৫. রামতনু লাহিড়ী ৫. গোপাল চন্দ্র দত্ত (১৮৫৬ - ১৮৫৭) ৭. চন্দ্র মোহন ঠাকুর (১৮৫৭ - ১৮৬৩) ৮. ব্রজমোহন রায় (অস্থায়ী) ৯. গৌর নারায়ণ রায় (১৮৬৩ - ১৮৭০) ১০. জগবন্ধু লাহা (১৮৭০ - ১৮৭৮) ১১. রসময় বসাক (মার্চ ১৮৭৮ - সেপ্টেম্বর ১৮৭৯) ১২. হরিপ্রসাদ ব্যানার্জী ( অক্টোবর ১৮৭৯ - ডিসেম্বর ১৮৯২) ১৩. হরি মোহন সেন (জানুয়ারী ১৮৯৩ - জুলাই ১৮৯৭) ১৪. কালি প্রসন্ন দত্ত (আগস্ট ১৮৯৭ - ফেব্রুয়ারী ১৯০৩) ১৫. পরেশ নাথ সেন (মার্চ ১৯০৩ - জুন ১৯০৩) ১৬. প্রসন্ন কুমার বসু (জুলাই ১৯০৩ - জুন ১৯০৩) ১৭. নব কৃষ্ণ ভাদুরী (নভেম্বর ১৯০৩ - আগস্ট ১৯১৫) ১৮. ক্ষীরোদ চন্দ্র সেন (সেপ্টেম্বর ১৯১৫ - ১৯২১) ১৯. রায় সাহেব বসন্ত চন্দ্র দাস (১৯২১ - ১৯২৫) ২০. সুধাংশু মোহন সেন গুপ্ত (অস্থায়ী) ২১. দ্বিজেন্দ্র মোহন সেন গুপ্ত (১৯৩৬ - ১৯৩৫) ২২. খান সাহেব সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (মার্চ ১৯৩৫ - আগস্ট ১৯৪২) ২৩. অবিনাশ চন্দ্র সেন গুপ্ত (আগস্ট ১৯৪২ - মে ১৯৪৩) ২৪. বি কে বিশ্বাস (জুন ১৯৪৩ - ) ২৫. আব্দুল হামিদ (১৪/৮/৪৭ - ২/৯/৪৭) ২৬. আজিজুর রহমান (৩/৯/৪৭ - ১৮/২/৫০) ২৭. এ কে এম আবদুল আজিজ (৮/৩/৫০ - ১/১১/৫০) ২৮. আবদুল ওয়াহেদ মুহাম্মদ কাবেল (২/১১/৫০ - ২৭/৮/৫৪) ২৯. আবদুর রশীদ (২৮/৮/৫৪ - ৮/৬/৫৬) ৩০. মোহাম্মদ সিরাজুল হক (৮/৬/৫৬ - ১০/১১/৫৬) ৩১. খান মোহাম্মদ সালেক (১১/১১/৬০ - ৬/৬/৬১) ৩২. পল গুডা (৪/১১/৬১ - ২৩/৯/৬৩) ৩৪. বজলুল হক (১৩/৪/৭০ - ২/৫/৭২) ৩৫. তসীর উদ্দীন আহমদ (৩/৫/৭২ - ৩১/১/৭৩) ৩৬. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক (৩/২/৭৩ - ১৫/১/৮৭) ৩৭. রাজিয়া বেগম (৩১/১/৮৭ - ৩/৯/৮৭) ৩৮. রওশন আরা বেগম (৩/৯/৮৭ - ২০/৩/৯০) ৩৯. মুহাম্মদ মতিউর রহমান (৩০/৩/৯০ - ২৯/৪/৯১) ৪০. সৈয়দ মোহাম্মদ ইসমাইল (ভারপ্রাপ্ত) (৩০/৪/৯১ - ১৯/১০/৯১) ৪১. রাজিয়া বেগম (২০/১০/৯১ - ০৮/০১/২০০১) ৪২. সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম (০৬/০১/২০০১ - ১০/১২/২০০৩০ ৪৩. মুহাম্মদ আবদুর রব (১১/১২/২০০৩ - ২৪/০৩/২০০৪ ৪৪. নমিতা সরখেল ( ২৫/০৩/২০০৪ - ২৩/০৫/২০০৪) ৪৫. মুহাম্মদ আবদুর রব (২৪/০৫/২০০৪ - ১৯/১০/২০০৫ ৪৬. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (১৯/১০/২০০৫ - ০২/০২/২০০৬) ৪৭. মোহাম্মদ দলিল উদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত) (০৩/০২/০৬ - ১০/০২/০৬) ৪৮. সৈয়দ মোঃ মানছুর ৪৯. মোহাম্মদ দলিল উদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত) ৫০. মোঃ এবাদুল ইসলাম ৫১. সাবিনা ইয়াসমিন


তথ্যসূত্র: ১. সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (২য় খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫। ২. উইকিপিডিয়া, বাংলা।