বরিশালে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচন

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১১:৪১, ৮ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত সংস্করণে ("১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনের পর ১৯৪২ খৃৃস্টাব্দে প্রা..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনের পর ১৯৪২ খৃৃস্টাব্দে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের জন্য নির্বাচন হতে পারেনি। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগ, কৃষক প্রজাপার্টি ও কংগ্রেস এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।


১৯৪৬ খৃৃস্টাব্দের নির্বাচনে বাকেরগঞ্জ জেলার কৃষক প্রজা পার্টি ও মুসলিম লীগ প্রার্থী

নির্বাচনী এলাকা ১- বাকেরগঞ্জ-উত্তর (হিজলা মেহেন্দিগঞ্জ ও মুলাদি): কৃষক প্রজা পার্টির মুহাম্মদ হোসেন চৌধুরী, বনাম মুসলিম লীগের আরিফ হোসেন চৌধুরী।

নির্বাচনী এলাকা ২ - বাকেরগঞ্জ উত্তর-পশ্চিম (কোতোয়ালি, বাবুগঞ্জ, গৌরনদী ও উজিরপুর): কৃষক-প্রজা পার্টির আব্দুল ওহাব খান বনাম মুসলিম লীগের মাওলানা আবুল কাশেম।

নির্বাচনী এলাকা ৩ - বাকেরগঞ্জ দক্ষিণ (বাকেরগঞ্জ, নলছিটি, ঝালকাঠি ও রাজাপুর): কৃষক-প্রজা পার্টির এ কে ফজলুল হক বনাম মুসলিম লীগের উকিল সদর উদ্দিন আহমেদ।

নির্বাচনী এলাকা ৪- ভোলা দক্ষিণ (ভোলা, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও তজুমদ্দিন): কৃষক-প্রজা পার্টির খান বাহাদুর হাশেম আলী খান বনাম মুসলিম লীগের আজিজুর রহমান (নওয়াব মিয়া)।

নির্বাচনী এলাকা ৫- ভোলা উত্তর (ভোলা, দৌলত খাঁ): কৃষক-প্রজা পার্টিরতোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বনাম মুসলিম লীগের খান বাহাদুর নুরুজ্জামান।

নির্বাচনী এলাকা ৬ - পিরোজপুর উত্তর (স্বরূপকাঠি, নাজিরপুর পিরোজপুর, বানারীপাড়া, কাউখালী): কৃষক-প্রজা পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ আফজাল বনাম মুসলিম লীগের আবদুস ছোবহান মিয়া।

নির্বাচনী এলাকা ৭ - পিরোজপুর দক্ষিণ (ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া, কাঁঠালিয়া, বামনা, পাথরঘাটা): কৃষক-প্রজা পার্টির খান সাহেব হাতেম আলী জমাদ্দার বনাম মুসলিম লীগের আফতাব উদ্দিন উকিল

নির্বাচনী এলাকা ৮ - পটুয়াখালী উত্তর (পটুয়াখালী, বেতাগী, গলাচিপা, মির্জাগঞ্জ): কৃষক-প্রজা পার্টির বিডি হাবিবুল্লাহ বনাম মুসলিম লীগের শামসুদ্দিন সানু মিয়া।

নির্বাচনী এলাকা ৯- বেতাগী, বরগুনা, আমতলী, খেপুপাড়া: কৃষক-প্রজা পার্টির আবদুল কাদের লাল মিয়া বনাম মুসলিম লীগের আবদুর রহমান খান


নির্বাচনের প্রচারণা

মুসলিম লীগের প্রচার পাকিস্তান দাবির ফলে এ কে ফজলুল হক ও তাঁর কৃষক প্রজা পার্টি জনপ্রিয়তা হারায়। মুসলিম লীগ এ কে ফজলুল হককে ভয় করত। তাই মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তার কর্মীদের নিয়ে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে বরিশালে আগমন করেন এবং নির্বাচনী প্রচার চালান। মুসলিম লীগের উদ্দেশ্য ছিল- ফজলুল হককে বরিশালে এবং বিশেষ করে তার নির্বাচনী এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখা। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রায় এক মাস বরিশালের বিভিন্ন কেন্দ্রে গমন করেন এবং পাকিস্তান দাবির ইস্যুতে জনসভা করেন। তিনি বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠি, রাজাপুর, কাউখালী ও পিরোজপুরে জনসভা করেন। এ কে ফজলুল হকের কেন্দ্রে মুসলিম লীগ প্রার্থী সদর উদ্দিন উকিল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন গালুয়ার সৈয়দ আনছার উদ্দিন উকিল। মূলত বাকেরগঞ্জের এ ভোটযুদ্ধ ছিল এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে। বরিশালের মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ, কর্মী ও ব্রজমোহন কলেজের মুসলিম ছাত্ররা এ কে ফজলুল হকের বিরুদ্ধে প্রচার চালায়। বাকেরগঞ্জ, নলছিটি, ঝালকাঠি ও রাজাপুরের জনসভায় সোহরাওয়ার্দী এ কে ফজলুল হকের ভক্ত কৃষক সমাজের বিক্ষোভের সম্মুখীন হন এবং অনেক সময় তাকে মারমুখী জনতা আক্রমণ করে। নলছিটির একদল জনতা মুসলিম লীগ কর্মীদের ষ্টীমার ঘাটে আক্রমণ করে এবং নলছিটির মধুমিয়া আইএইচ জুবেরীর দাঁত ভেঙ্গে ফেলে।


নির্বাচনের ফলাফল

শেষ পর্যন্ত এ কে ফজলুল হক তাঁর কেন্দ্রে ৩০ হাজার ভোটে জয়লাভ করলেন এবং সদর উদ্দিন উকিল পেলেন ২০ হাজার ভোট। বাকেরগঞ্জ হতে কৃষক প্রজা পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ আফজাল, খান সাহেব হাতেম আলী জমাদ্দার ও এ কে ফজলুল হক জয়লাভ করলেন। সারা বংলায় কৃষক প্রজা পার্টি মাত্র ৮টি আসন দখল করেছিল। মুসলিম লীগের আরিফ হোসেন (ধনু মিয়া), মাওলানা আবুল কাসেম, খান বাহাদুর নূরুজ্জামান, সৈয়দ আজিজুর রহমান, আবদুর রহমান খান, শামসুদ্দিন মিয়া প্রজা পার্টির প্রার্থীদের পরাজিত করে আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। হিন্দু নির্বাচনী এলাকা বাকেরগঞ্জ দক্ষিণ হতে সতীন্দ্রনাথ সেন, বাকেরগঞ্জ উত্তর-পূর্ব হতে মনোরঞ্জন গুপ্ত এবং বাকেরগঞ্জ উত্তর-পশ্চিম হতে ললিত কুমার বল নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ খৃৃস্টাব্দে প্রাদেশিক আইন পরিষদে বাকেরগঞ্জ হতে মুসলিম লীগের নবাবজাদা ফজলে রাব্বী এমএলসি নির্ভাচিত হন।

১৯৪৬ খৃৃস্টাব্দে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাকেরগঞ্জ হতে এ কে ফজলুল হক, আজিজ উদ্দিন আহমেদ, তফসিল দল হতে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল এবং কংগ্রেস হতে অরুণ চন্দ্র গুহ সদস্য নির্বাচিত হন। দেশ বিভাগের পর অরুণ চন্দ্র গুহ ভারতে চলে যান এবং সেখানে তিনি গণপরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ খৃৃস্টাব্দে নির্বাচনে মুসলিম লীগের জয়লাভের ফলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পার্লামেন্টারি দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২১ এপ্রিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বাংলার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। বরিশালের যোগেন্দ্রনাথ মÐল মুসলিম লীগকে সমর্থন করলেন এবং ভারতীয় অন্তর্বর্তীকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের আইনমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট মুসলিম লীগ প্রত্যক্ষ দিবস পালন করে এবং ঐদিন কলকাতায় হিন্দু মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়। এ কে ফজলুল হক, হাশেম আলী খান দাঙ্গা বন্ধের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।