বরিশালে ইংরেজদের/ ইউরোপীয়দের বসতি (প্রাথমিক যুগ)
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজরা জলে-স্থলে বরিশালকে দখল করে ক্ষান্ত হয়নি। অনেক ইংরেজ ও পর্তুগীজ স্থায়ীভাবে বাণিজ্য ও জমিদারী করার জন্য বরিশালে বসতি স্থাপন করে। একসময় তাদের একটি কমিউনিটিই গড়ে ওঠে। এদের কয়েকজনের পরিচয় নিম্নরূপ।
পরিচ্ছেদসমূহ
ডি সিলভা
ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে পর্তুগীজরা এ জেলায় প্রথম বসতি স্থাপন করে। পাদ্রী শিবপুরে কয়েক শ’ পর্তুগীজ বাস করত। এ গ্রামের ডি সিলভা একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও জমিদার ছিলেন। এখনও কয়েক ঘর পর্তুগীজ পাদ্রী শিবপুরে বাস করছে।
মি. ডবিনস
বাকেরগঞ্জে শ্রীমন্ত খালের তীরে ইংরেজ ও ফরাসী বণিকদের ফ্যাক্টরিও ছিল। ইংরেজ বণিক মিঃ ডবিনসের বাকেরগঞ্জে দু’টি ফ্যাক্টরি ছিল। ফ্যাক্টরিতে কাপড় ও লবণ তৈরি হতো।
মি. উড
ঝালকাঠি বন্দরে লবণ এজেন্ট মি. উড ও মি. ইউয়ার্ড বাস করত। লন্ডনে ভারতীয় অফিসে রক্ষিত নথিপত্রে দেখা যায় ১৭৭৫ খৃৃস্টাব্দে মি. উড জয়নগর বা ঝালকাঠির লবণ এজেন্ট ছিল। লবণ এজেন্ট ও তার কর্মচারী ব্যতীত অন্য কারোর নিকট লবণ বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল। বেপারীরা লবণ এজেন্টের নিকট হতে দাদন বা ঋণ গ্রহণ করে মোলঙ্গীদের মধ্যে বিতরণ করত।
মি. ইউয়ার্ড
ঝালকাঠির লবণ এজেন্ট মি. ইউয়ার্ড একজন অত্যাচারী বিলাসী কর্মচারী ছিলেন। তিনি এতই শৌখিন ছিলেন যে, ঝালকাঠিতে তিনি এক বৃহৎ ভবন নির্মাণ করে সেখানে ইউরোপিয়ান রুটি তৈরিকারক ও নাপিত নিয়োগ করেছিলেন।
মি. উইলিয়ম রবিনসন
ইংল্যান্ডের অন্তর্গত স্কটল্যান্ডের অধিবাসী মি. উইলিয়ম রবিনসন ১৭৬৬ খৃৃস্টাব্দে জুন মাসে ফ্যালমাউথ জাহাজযোগে সুন্দরবনে পৌঁছলে ঝড়ে তার জাহাজ ডুবে যায়। রবিনসন অতি কষ্টে নলছিটি থানার মধুপুরে এসে ব্যবসা শুরু করে। তিনি বরিশালে প্রথম স্থায়ী ইংরেজ বাসিন্দা। বরিশাল শহরের প্যারেরা পরিবার তার বংশধর ছিল।
মি. গিল
বারৈকরণে আগমন করেন। তিনি চালের ব্যবসা ও নৌকা নির্মাণ করাতেন। সিভিল সার্জেন্ট হার্পার ও গিল একত্রে নৌকা নির্মাণ করাতেন এবং তারা ১৭৯৪ খৃৃস্টাব্দে নৌকা নির্মাণের জন্য এন্টয়েন পিয়াজি নামে একজন ফ্রেঞ্চ কর্মচারী নিয়োগ করেন। ব্রাউন কম্পাউন্ডের ব্রাউন পরিবার তাঁর বংশধর ছিল।
ন্যাথানিয়েল মনরো
ন্যাথানিয়েল মনরো স্কটল্যান্ডের অধিবাসী ছিলেন। ১৭৮৬ খৃৃস্টাব্দে তিনি ২৪ পরগণার লবণ এজেন্টের সহকারী ছিলেন। তিনি গভর্নর জেনারেলের অনুমতি নিয়ে ঝালকাঠিতে নীল চাষ শুরু করেন।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যুগে বরিশালে এই কয়জন ইংরেজ ও ইউরোপীয়দের বসতি স্থাপনের রেকর্ড পাওয়া যায়
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।