বরিশালের সংবাদপত্র

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১১:০৭, ৭ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত সংস্করণে ("বরিশালের সংবাদপত্রের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। উনবিংশ শতকেই এখ..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

বরিশালের সংবাদপত্রের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। উনবিংশ শতকেই এখানে মানসম্পন্ন অন্যূন আটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছে।


ঊনবিংশ শতকে বরিশালের সংবাদপত্র

সংবাদপত্র সাহিত্যের প্রধান অঙ্গ। সাহিত্যের মতো সংবাদপত্রে বরিশাল অগ্রণী ছিল। কলকাতার মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করার প্রায় ৫০ বছর পরে ১৮৬৬ খৃৃস্টাব্দে বাসÐার বাবু পূর্ণচন্দ্র সেন সর্বপ্রথম “পূর্ণ চন্দ্রোদয়” নামে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন। ঝালকাঠি থানার তারাপাশা নিবাসী আয়ুর্বেদ বৈদ্য বংশের পÐিত হরকুমার রায় পূর্ণ চন্দ্রোদয় মুদ্রণযন্ত্র থেকে “পরিমল বাহিনী” নামক পত্রিকা প্রকাশ করেন। কয়েক বছর পরে এ মুদ্রণ যন্ত্র উঠে যায়। ১৮৭৩ খৃৃস্টাব্দে বাংলা ১২৮০ সনে মাগুরার বাবু ঈশ্বর চন্দ্র সত্য প্রকাশ যন্ত্র স্থাপন করেন এবং এ প্রেস হতে তিনি “বরিশাল বার্ত্তাবহ” সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। ১৮৭১ খৃৃস্টাব্দে তারপাশা নিবাসী পÐিত নবীন চন্দ্র চক্রবর্তী ‘হিতসাধিনী’ পত্রিকা প্রচার করেন। কাশীপুরের প্রতাপ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৮৭১ খৃৃস্টাব্দে “কাশীপুর নিবাসী” পত্রিকা বের করেন। ১৮৭২ খৃৃস্টাব্দে ‘বঙ্গ দর্পণ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এ সময় ‘বালরঞ্জিকা’ ও ‘সত্য প্রকাশ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৮৮৫ খৃৃস্টাব্দে প্রতাপ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় কাশীপুর যন্ত্র, ১৮৮৭ খৃৃস্টাব্দে রাজমোহন চট্টোপাধ্যায় হিতৈষী যন্ত্র এবং ১৮৯৫ খৃৃস্টাব্দে বাবু অক্ষয় কুমার চট্টোপাধ্যায় আদর্শ প্রেস স্থাপন করেন। জেল ম্যাজিষ্ট্রেট মি. বেভারিজের সময়- ১৮৭৫ খ্রি. ‘পূর্ণ চন্দ্রোদয়’ ও ‘সত্য প্রকাশ’ প্রেস ছিল। ‘বরিশাল বার্তা’, ‘হিতসাধিনী’, ‘বালরঞ্জিকা’, ‘সত্য প্রকাশ’ ইত্যাদি নামে মোট ৮টি পত্রিকা উনবিংশ শতকে বরিশাল থেকে বের হতো। ‘ স্বদেশী’ ও ‘সহযোগী’ নামক ২টি পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৯৫ খৃৃস্টাব্দে বরিশাল বঙ্গ বিদ্যালয়ের হেড পÐিত বাবু রাজমোহন চট্টোপাধ্যায় ‘বরিশাল হিতৈষী’ নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯০০ খৃৃস্টাব্দে অশ্বিনী কুমার দত্তের চেষ্টায় কাঁচালিয়ার প্রিয়নাথ গুহের সম্পাদনায় ‘বিকাশ’ পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করে।


বিংশ শতকের প্রথমার্ধের বরিশালের সংবাদপত্র

‘বরিশাল হিতৈষী’ (১৮৯৫) কলকাতার বাইরে স্বাধীনতা আন্দোলনের বাহক ছিল। পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সংগ্রামী নেতা দুর্গামোহন সেন (১৮৮৪-১৯৭২)। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গ্রেফতার হন এবং দাঙ্গার পর কলকাতায় চলে যান। স্বদেশী আন্দোলন থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সকল আন্দোলনের ঘটনা ‘বরিশাল হিতৈষী’ বহন করেছে। বরিশাল সম্পর্কে জানতে হলে এ পত্রিকা জানা দরকার। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে এ কে ফজলুল হক ও নিবারণা চন্দ্র পালের সম্পাদনায় ‘বালক’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীনের উদ্যোগে এবং মফিজ উদ্দীন উকিলের সম্পাদনায় ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘বঙ্গ মিহির’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। কলকাতার বাইরে ‘বঙ্গ মিহির’ মুসলমানদের প্রথম পত্রিকা। প্রতাপচন্দ্র গুহ রায়ের সম্পাদনায় ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘প্রদীপ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ২৩ ডিসেম্বর সিরাজ উদ্দীনের উদ্যোগে এবং আবদুল গফুর ও নরেন্দ্র ব্যানার্জীর সম্পাদনায় পটুয়াখালী হতে ‘পল্লী সেবা’ বের হয়। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে পিরোজপুর হতে ‘পিরোজপুর নিবাসী’ বের হতো। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে নূর আহমদের সম্পাদনায় ‘নকীব’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

‘সত্য প্রকাশ’, ‘সহযোগী’, ‘ইসলাম দর্শন’, ‘সত্যবাদী’, ‘নমঃশূদ্র’, ‘বাসন্তী’, ‘তরুণ’, ‘শেফালী’, ‘ব্রহ্মবাদী’, ‘সাপ্তাহিক বরিশাল’, ‘সাধনা’, ‘উজ্জ্বল ভারত’, ‘বাকেরগঞ্জ’, ‘মাসিক মাতৃবক্ষ’, ‘পথিক’, ‘সপ্তক’ (সম্পাদক সুধাংগু চৌধুরী এবং সুধীর কুমার ঘোষ) প্রভৃতি পত্রিকা বরিশাল থেকে বিংশ শতকের গোড়ার দিকে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু একমাত্র ‘বরিশাল হিতৈষী’ ‘বঙ্গ মিহির’, ‘ব্রহ্মবাদী’ ব্যতীত প্রায় সকল পত্রিকা কিছুদিন বের হবার পর বন্ধ হয়ে যায়। বরিশাল তরুণ সংঘের উদ্যোগে সরল কুমার দত্তের সম্পাদনায় ১৯২৩ খৃৃস্টাব্দে মাসিক ‘তরুণ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকায় করি সুফিয়া কামালের প্রথম লেখা ‘সৈনিক বধূ’ প্রকাশিত হয়। দু’বছর চলার পর পত্রিকাটি বন্ধা হয়ে যায়।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।