বরিশালের লবণ আন্দোলন ১৯২১-১৯৩০

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:৫১, ১৭ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত সংস্করণে ("মহাত্মা গান্ধী ১৯৩০ খৃৃস্টাব্দে লবণ আন্দোলন শুরু করেন।..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

মহাত্মা গান্ধী ১৯৩০ খৃৃস্টাব্দে লবণ আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু ৭ বছর পূর্বে বরিশালে লবণ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বিলাতের লবণ বিক্রির জন্য ইংরেজ সরকার এ দেশে লবণ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। সরকারী আদেশ অমান্য করে ভোলা মহকুমার কৃষকরা দেশীয় লবণ উৎপন্ন অব্যাহত রাখে। তারা মির্জাকালু, ভোলা, দৌলতখাঁ, তজুমদ্দিন, লাল মোহন, বোরহান উদ্দীন, মনপুরা প্রভৃতি বাজারে লবণ বিক্রি করত। স্বদেশী আন্দোলনের সময় বিলেতী লবণ পরিত্যাগ করে দেশীয় লবণের আন্দোলন শুরু হয়। দৌলতখাঁ থানার মির্জাকালু লবণ বিক্রির প্রধান কেন্দ্র ছিল। সরকার এ বন্দরে লবণ উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু কৃষকরা সরকারের নিষেধ উপেক্ষা করে লবণ উৎপাদন করতে থাকে, ফলে অনেক কৃষক পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়। সরকারী দমন নীতির বিরুদ্ধে ভোলার উকিল দক্ষিণারঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বারকানাথ ঘোষ, আবদুল বারি, চুনীলাল সেন, অমূল্য মুখোপাধ্যায়, নূর আহমেদ সিকদার, তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী আন্দোলন শুরু করে।৬ মির্জাকালু বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় হতে রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য বিখ্যাত ছিল। আন্দোলনের ব্যাপকতা ও সফলতার জন্য মির্জাকালুর আর এক নাম হয় স্বরাজগঞ্জ। মির্জাকালুর অনুশীলন কর্মী যোগেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও কংগ্রেস নেতা সুরেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক বিরাট প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন। মির্জাকালু বন্দরে দেশীয় লবণ বিক্রি হতে থাকে। সরকার এ সংবাদ জানতে পেরে প্রথমে পুলিশ ও গুর্খা পুলিশ প্রেরণ করে। বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। পুলিশ ও গুর্খা পুলিশ প্রথমে লাঠি চার্জ করে আন্দোালন দমন করতে ব্যর্থ হয়। ১৯২২ খৃৃস্টাব্দে, বাংলা ১৩৩০ সনে পহেলা বৈশাখ সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনগণ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। গুর্খা পুলিশ জনতার ওপর গুলি বর্ষণ করলে মোট ৫০ জন আহত হয়। শহীদ হলেন পেয়ারপুর গ্রামের কোরবান আলী এবং বিশারাম গ্রামের কেরামত আলী। মতিউর রহমান, পঞ্চানন বণিকসহ অনেকে আহত হলেন। রাজকুমার দত্ত, বিনয় চক্রবর্তী, চন্দ্রমাধব গাঙ্গুলী, বেলায়েত হোসেন (মাষ্টার) ও মুখলেসুর রহমান গ্রেফতার হলেন। গঙ্গাপুরের ডাঃ গোলামুল হক বেলায়েত মাস্টার এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ৮০ বছর বয়স্ক গোলামুল কখনও গুর্খা পুলিশের সে নির্মম হত্যাকগেুর কথা ভুলতে পারেননি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মির্জাকালুর কোরবান আলী ও কেরামত আলী বরিশালের প্রথম শহীদ। ১৯৪৭ খৃৃস্টাব্দে পর্যন্ত- পহেলা বৈশাখ তাদের স্মরণে এ জেলায় অনেক লবণবিহীন খাদ্য গ্রহণ করত এবং জনসভা হতো। এ বিদ্রোহী কৃষকদের আজ আর কেউ স্মরণ করছে না। অথচ তাদের স্মরণে একদিন মির্জাকালু বাংলাদেশে স্বরাজগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। শহীদ কোরবান আলী, কেরামত আলী বরিশালের গৌরব ও অহঙ্কার। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তাদের নাম চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।

১৯২২ খৃৃস্টাব্দে মৃজাকালুর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ১৯৩০ খৃৃস্টাব্দে পর্যন্ত এ জেলায় লবণ আন্দোলন চলে। ১৯৩০খৃৃস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধী ধর্শনার সমুদ্র তীরে লবণ তৈরি আন্দোলন করলে সারা ভারতে লবণ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের বৈশাখ মাসে ২২ জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা নিয়ে শরৎ কুমার ঘোষ বরিশাল থেকে নলচিড়া পর্যন্ত পদব্রজে গমন করেন এবং জনগণকে দেশীয় লবণ ব্যবহারে উৎসাহিত করেন। লবণ আইন অমান্যের অপরাধে শরৎ কুমার ঘোষ সহ অনেককে ইংরেজ সরকার কারাদগু প্রদান করেন। শরৎ ঘোষের অবর্তমানে তার স্ত্রী উষাঙ্গনী দেবী লবণ আন্দোলন চালিয়ে যান।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।