বরিশালের মুক্তিযুদ্ধ (একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস)

Barisalpedia থেকে

পাকিস্তান বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল বরিশাল এবং ২৬ এপ্রিল পটুয়াখালী দখল করে। পাকবাহিনীর আক্রমণের ফলে বরিশালবাসীর প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। ২৫ এপ্রিল নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, মহিউদ্দীন আহমেদ, ডা. শাহজাহান, বাদল, সুরুজ, ফিরু, ফরিদ প্রমুখ পিএলডি-৪ লঞ্চ ও পাতারহাট হতে আর একটি লঞ্চ সংগ্রহ করে সুন্দরবন হয়ে ২ মে ২৪ পরগনা জেলার হাসনাবাদ বিএসএফএর সহায়তায় পৌঁছেন। বরিশাল পতনের পূর্বে ১৮ এপ্রিল মেজর জলিল আনোয়ারা লঞ্চে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য সুন্দরবন হয়ে হাসনাবাদ গমন করেছিলেন বিধায় তিনি আগেই হাসনাবাদ পৌঁছেছিলেন। নুরুল ইসলাম মঞ্জুর যখন হাসনাবাদ পৌঁছেন তখন তিনি লঞ্চে অস্ত্র ভর্তি করে বরিশাল যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তারা দুটি লঞ্চে অস্ত্র বোঝাই করে সুন্দরবন হয়ে বরিশাল রওয়ানা হন পুনরায় যুদ্ধ করে বরিশাল-পটুয়াখালী দখল করার উদ্দেশ্যে। আনোয়ারা লঞ্চে ছিলেন মেজর জলিল, ওবায়দুর রহমান মোস্তফা, হাবিলদার সিদ্দিকুর রহমান, কালু, প্রবাল প্রমুখ এবং সোহাগদল লঞ্চে ছিলেন নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, মহিউদ্দীন আহমেদ, সর্দার জালাল উদ্দীন, লে. নাসির ফিরোজ, কামরুল, কুতুব, সুরুজ, কাক্কা প্রমুখ। ভারতীয় বিএসএফএর পেট্রোলবোট ‘চিত্রাঙ্গদা’ লঞ্চ দুটো শমশের নগর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। তারপর বাংলাদেশ। রাতের অন্ধকারে লঞ্চ দুটো সুন্দরবনের গাবুয়া নদীতে যখন চলছে তখন হঠাৎ পাক-বাহিনী সার্চলাইট মেরে লঞ্চ আক্রমণ করে। মেজর জলিল, হাবিলদার সিদ্দিক এলএমজি ও এনারগা দ্বারা পাক সেনাদের গানবোট পাল্টা আক্রমণ করে। একটি গানবোট ঘায়েল হয়। এতে সবাই পালানোর সুযোগ পান। বেড়িবাঁধ দিয়ে গাবুয়া দ্বীপের অন্ধকারে মহিউদ্দিন আহমদসহ ১৭ জন পথ হারিয়ে অন্যদিকে চলে যান। তাদের না পেয়ে এম এ জলিল, নূরুল ইসলাম মঞ্জুরসহ ১৩ জনের একটি দল হেঁটে আবার বিএসএফ বিওপিতে পৌঁছেন। সেখান থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চে পুনরায় হাসনাবাদ পৌঁছেন। হাসনাবাদে এসে নূরুল ইসলাম মঞ্জুর ও মেজর জলিল পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করে সীমান্তে পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। এপ্রিলে মেজর জলিলকে নবম সেক্টরের কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। নবম সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিল ভারতের হাসনাবাদ থানার টাকিতে। খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের একাংশ নবম সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সেক্টরের অধীন বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের কর্মকা-কে বর্তমান জেলাগুলোর ভিত্তিতে আলাদা আলাদা করে আলোচনা করা যায়।

বরিশাল জেলা অঞ্চল

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই এখানেও ৭ মার্চ হতে ২৫ মার্চ অসহযোগ আন্দোলন, ২৬ মার্চ হতে ২৫ এপ্রিল প্রতিরোধ এবং ২৬ এপ্রিল হতে ৩১ আগস্ট মুক্তিবাহিনী গঠন এবং বিচ্ছিন্ন আক্রমণ চলে। জুলাই মাস হতে ভারত হতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত গেরিলা বাহিনী অস্ত্র নিয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। নিয়মিত বাহিনী সীমান্তে যুদ্ধ করে এবং অনিয়মিত বা গেরিলা বাহিনী অভ্যন্তরে যুদ্ধ করে। ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বাকেরগঞ্জ জেলার মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক ছিলেন চাঁদপাশার আবদুর রহমান। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের সাথে সমন্বয় সাধন করতেন এবং হাজার হাজার ছাত্র-যুবক সংগ্রহ করে ভারতে পাঠাতেন। ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তিনি মুক্তিবাহিনীর প্রধান সমন্বয়কারী ছিলন। সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখে ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে উজিপুর থানার বরাকোটায় পৌঁছেন। গৌরনদীর কসবার বিচ্ছু আলম শাহজাহান ওমরের হাসনাবাদ হতে পথ প্রদর্শক ছিলেন। শাহজাহান ওমরকে বাংলাদেশ সরকার বাকেরগঞ্জ জেলার সাব সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করে। ক্যাপ্টেন শাহজাহানের ছদ্মনাম ছিল ওমর সিং। একই সঙ্গে প্রত্যেক থানায় রাজনৈতিক দল হতে বেসামরিক প্রধান ও মুক্তিযোদ্ধা সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নি¤েœ থানা কমান্ডারদের নাম দেয়া হলো। কোতোয়ালি- আবদুল মান্নান; বাকেরগঞ্জ- মহম্মদ নাসিরউদ্দীন; বাবুগঞ্জ- আবদুল ওহাব খান ও আবদুল মজিদ খান; গৌরনদী- নিজামউদ্দীন; মুলাদী- কুতুবউদ্দীন; হিজলা- আনোয়ার হোসেন; মেহেন্দীগঞ্জ- কুদ্দুস মোল্লা; উজিরপুর- হাবিবুর রহমান খান ও এম এ অদুদ; এবং বানারীপাড়া- বেনুলাল দাসগুপ্ত। গোপালগঞ্জ ও বরিশালের গৌরনদী নিয়ে গঠিত সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন হেমায়েত উদ্দিন। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানের এবোটাবাদ থেকে পালিয়ে ঢাকায় আসেন এবং জয়দেবপুরে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। তার কয়েকজন সৈন্য নিয়ে কোটালিপাড়ায় এসে নিজস্ব হেমায়েত বাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে পাকবাহিনীকে পর্যুদস্ত করেন। যে সকল যুদ্ধ বরিশাল জেলা অঞ্চলে স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তন্মধ্যে ছিল বড়াকোটা-হারতা যুদ্ধ, দোয়ারিকা ও জয়শ্রীর যুদ্ধ, গৌরনদীর যুদ্ধ, বাকেরগঞ্জে শ্যামপুর যুদ্ধ, বরিশাল শহরে সুইসাইডাল স্কোয়াডের অভিযান ইত্যাদি। এই সকল বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ৮ ডিসেম্বর বরিশাল শহর এবং ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশের সাথে বরিশাল জেলা বিজয় অর্জন করে।


ভোলা জেলা অঞ্চল

ভোলায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা বিষয়ে ২৬ মার্চ স্থীনীয় এমপিএ মোশাররফ হোসেন শাহজাহানের বাসভবনে এক সভা হয়। ২৭ মার্চ হাবিলদার সিদ্দিকুর রহমানসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অস্ত্রের জন্য ট্রেজারিতে গমন করেন। এসডিও তাদের গুলিসহ ৭৫টি রাইফেল দেন। তৌফিক আলী তখন ভোলার এসডিও ছিলেন। ২৮ মার্চ যুবক-ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বরিশাল থেকে মেজর জলিল একদল মুক্তিযোদ্ধা পাঠাতে বলেন। এমএল ভোলা-৩ লঞ্চে হাবিলদার সিদ্দিকুর রহমান ও জব্বার বরিশাল যাত্রা করেন। তাঁরা বরিশাল, খুলনা ও সুন্দরবনে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ১০ মার্চ ভোলা জেলা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। ১. শামসুদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগ সভাপতি, আহবায়ক; ২. ডা. আজহারউদ্দিন আহমদ এমএনএ, সদস্য; ৩. মোশাররফ হোসেন শাহজাহান এমপিএ, সদস্য; ৪. মোতাহার উদ্দিন মাস্টার এমপিএ. সদস্য; ৫. রেজায়ে করিম চৌধুরী এমপিএ, সদস্য; ৬. এমডি নজরুল ইসলাম এমপিএ, সদস্য; ৭. রিয়াজউদ্দিন মোক্তার, সদস্য; ৮. মওলানা মমতাজুল করিম, সদস্য; ৯. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মাস্টার, সদস্য; ১০. একেএম নাসিরউদ্দিন, সদস্য; ১১. ডা. সাইফুল্লাহ মিয়া, সদস্য; ১২. ওবায়দুল হক, সদস্য; ১৩. খোরশেদ আলম, সদস্য; ১৪. মাকসুদুর রহমান,সদস্য; ১৫. মোক্তার ডাক্তার, সদস্য; ১৬. আবদুল হাই, সদস্য; ও ১৭. ডাক্তার আবদুল লতিফ। ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ ভোলা কলেজ মাঠে প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয় কলেজের ডামি রাইফেল দিয়ে। ৭ মার্চের পর প্রশিক্ষণের হার বৃদ্ধি পায়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর যুদ্ধ প্রস্তুতি চলছে। ভোলায় বাংলা স্কুল, বাংলাবাজার মাদ্রাসা মাঠ, সরকারি স্কুল ও কলেজে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। প্রশিক্ষকদের নামের তালিকা: ১. সুবেদার গাজী জয়নাল আবেদীন, ২. হাবিলদার আফসার উদ্দিন, ৩. নায়েক আবদুর রব, ৪. বশির আহমদ. ৫. সিপাহী শাহজাহান। ভোলা সরকারি স্কুল মাঠ, কলেজ মাঠে প্রশিক্ষণ চলে। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদে খাবার ব্যবস্থা করেন মোশাররফ হোসেন শাহজাহান ও অন্যান্যরা। ৩ মে পাকবাহিনীর হাতে ভোলার পতন হয়। এর পরে আগস্ট মাস থেকে ভোলায় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ রচনা শুরু করেন। উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ও সংঘর্ষগুলো হলো ওসমানগঞ্জের যুদ্ধ, দেউলার যুদ্ধ, লালমোহন থানাদখল যুদ্ধ, বোরহানউদ্দিন থানাদখল যুদ্ধ, বাংলাবাজার যুদ্ধ, ঘুইঙ্গারহাট যুদ্ধ,গুপ্তগঞ্জ যুদ্ধ, গুরুচৌকা খালের যুদ্ধ, চালতাতলার যুদ্ধ ইত্যাদি। এই সকল যুদ্ধের সাফল্যে কোনঠাসা পাকবাহিনী ১০ ডিসেম্বর ভোলা শহর থেকে পালিয়ে যায় এবং ভোলা জেলা শত্রুমুক্ত হয়।

ঝালকাঠি জেলা অঞ্চল

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর ঝালকাঠি মহকুমার প্রত্যেক থানা, ইউনিয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ঝালকাঠি থানার সংগ্রাম পরিষদ ছিল এরূপ: ১. মোহাম্মদ আলী খান, আহ্বায়ক; ২. আবদুল বারী, সদস্য; ৩. শাহজাহান আশ্রাব, সদস্য; ৪. এবিএম মর্তুজা আলী, সদস্য; ৫. অধ্যাপক সন্তোষ কুমার, সদস্য; ৬. ডা. লুৎফর রহমান, সদস্য; এবং ৭. আক্কাস আলী সর্দার, সদস্য। রাজাপুর থানার সংগ্রাম পরিষদ ছিল এরূপ: ১. হোসেন আলী মাস্টার, আহ্বায়ক; ২. মোফাখখর হোসেন বিশ্বাস, সদস্য; ৩. আবু বকর মৃধা, সদস্য। কাঠালিয়া থানার সংগ্রাম পরিষদ: ১. আব্দুল রসুল সিকদার, আহ্বায়ক; ২. ফারুক সিকদার, সদস্য; ৩. নিজামউদ্দিন হাওলাদার, সদস্য; ৪. ফখরউদ্দিন মোল্লা, সদস্য; ৫. শামসুল হক মৃধা, সদস্য; ৬. মোশাররফ হোসেন গোলদার, সদস্য; ৭. মহসিন নকিব, সদস্য; ৮. আজাহার আলী খান, সদস্য; ৯. মজিবর রহমান জমাদ্দার, সদস্য; ১০. ইসহাক হাওলাদার, সদস্য। নলছিটি থানার সংগ্রাম পরিষদ: ১. কবির আহমেদ চান্দু মিয়া এমপিএ, আহ্বায়ক; ২. মৌজে আলী সরদার, সদস্য; ৩. ডা. বাসেত লস্কর, সদস্য; ৪. মোক্তার হোসেন, সদস্য; ৫. রুস্তম হাওলাদার, সদস্য; ৬. মফেজ মোল্লা, সদস্য; ৭. মতি খান, সদস্য; ও ৮. তাহের উদ্দিন, সদস্য। সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা ছিলেন এডভোকেট আব্দুল বারেক এমএনএ, এডভোকেট ইসমাইল হোসেন এমপিএ, নূরুল ইসলাম এমপিএ, কবীর আহমেদ চান্দু মিয়া। থানায়, গঞ্জে, স্কুলে সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ১৯৭১ সারের ২৩ মার্চ ঝালকাঠিতে অনুষ্ঠানিকভাবে মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বরিশালের নূরুল ইসলাম মঞ্জুর ২৬ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা বার্তা পেয়ে তা সকল মহকুমা ও থানায় প্রেরণ করেন। ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ২৭ মার্চ রাজাপুর শহীদ মিনারে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। নেতৃত্বে ছিলেন আবদুর রহমান। নূরুল ইসলাম মঞ্জুর ট্রেনিং দেয়ার জন্য ১০টি রাইফেল নিয়ে স্পীডবোডে ঝালকাঠি আসেন। রাজাপুরের সাতুরিয়া ও ভাতকাঠি গ্রামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপিত হয়। ঝালকাঠির পুরাতন বাজারে ও নলছিটির মার্চেন্ট স্কুল মাঠে সূর্যপাশার হাবিলদার আবদুল মজিদের নেতৃত্বে ১৫০ জন করে তিন ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এভাবে মহকুমার কয়েকটি স্থানে প্রশিক্ষণ চলে। ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানী পতাকা উড়িয়ে আদম আলী ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে পাকিস্তানী গানবোটকে স্বাগত জানায় এবং পাকবাহিনীর কাছে ঝালকাঠির পতন ঘটে। এ অপরাধে মুক্তিযোদ্ধা মজিদ অবশ্য আদম আলীকে লঞ্চঘাটে গুলি করে হত্যা করেন। জুলাই থেকে ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দলে দলে এতদঞ্চলে আগমনের পূর্বেই সিরাজ সিকদার বাহিনী পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে অমিতবিক্রম যুদ্ধ ও আক্রমণ পরিচালনা করে। সিরাজ সিকদার ঝালকাঠি শহরের পালবাড়ীতে শক্ত ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন এব সেখান থেকে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মাদ্রার যুদ্ধ, ভীমরুিলর যুদ্ধ, পেয়ারা বাগান যুদ্ধ ইত্যাদি দ্ধুদ্ধ পরিচালনা করে পাকবাহিনীকে আতঙ্কিত করে তোলেন। এরপর সাবসেক্টর কমান্ডার শাহজাহান ওমরের আগমনের পর থেকে পাকবহিনীর বিরুদ্ধে ঝালকাঠি অঞ্চলে তীব্র আক্রমণ রচিত হতে থাকে। সংঘটিত হয় দরগাবাড়ির যুদ্ধ- নলছিটি, নলছিটি থানা দখল যুদ্ধ, গাবখান যুদ্ধ, রাজাপুর থানাদখল যুদ্ধ, চাচৈর যুদ্ধ ইত্যাদি এবং এসবের মধ্য দিয়েই ৯ ডিসেম্বর ঝালকাঠি শত্রুমুক্ত হয়।


পিরোজপুর জেলা অঞ্চল

পিরোজপুর জেলার (তৎকালীন মহকুমা) মুক্তিবাহিনী সংগঠনের লক্ষে নিম্নরূপ পিরোজপুর মহকুমা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। ১. এডভোকেট এনায়েত হোসেন খান এমএনএ, আহ্বায়ক; ২. নুরুল ইসলাম ভাণ্ডারি এমপিএ, ভাণ্ডারিয়া, সদস্য; ৩. সওগাতুল আলম সগীর এমপিএ, মঠবাড়িয়া, সদস্য; ৪. ডা. শাহ মাজাহার উদ্দিন এমপিএ, স্বরূপকাঠি, সদস্য; ৫. ডা. আবদুল হাই, এমপিএ, পিরোজপুর, কাউখালী, সদস্য ও ৬. ডা. ক্ষিতীশ চন্দ্র ম-ল, এমপিএ, পিরোজপুর, নাজিরপুর। পিরোজপুর সরকারি স্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এমএনএ এনায়েত হোসেন খানকে গার্ড অব অনার জানায়। তিনি ছিলেন বেসামরিক প্রধান। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকদের মধ্যে ছিলেন: ডাঃ ক্ষিতিশ মন্ডল, আবদুল হাই, আ স ম সিদ্দিক, শফিজউদ্দিন আহমেদ, হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ, ওমর ফারুক, শহীদুল আলম নীরু, আবুল কালাম মহিউদ্দিন, লুৎফুল কবির দুলাল, ওবায়দুল কবীর বাদল, নূর দিদা খালেদ রবি, ফজলুল হক ফজলু, ন্যাপ নেতা আলী হায়দর খান, নিরোদ নাগ প্রমুখ। ছাত্রইউনিয়নের ফজলু গ্রুপ ও বাদল রবি গ্রুপ পৃথক দুটো ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। আগরতালা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী সুবেদার তাজুল ইসলাম ট্রেনিং প্রদানে নেতৃত্ব দেন। মহকুমা প্রশাসন মুক্তি ফৌজের সহযোগিতা করে। বিশেষ করে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়ায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। সকল থানা, গঞ্জ ও অনেক গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। পিরোজপুর শহর তখন ১ হাজার ৪শ’ মুক্তিযোদ্ধার দখলে। রায়েরকাঠি জমিদার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। সকল থানার পুলিশের অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেয়। কিন্তু পাকবাহিনী কর্তৃক ২৬ এপ্রিল বরিশাল পতনের পর মুক্তিযোদ্দারা বিছিন্ন হয়ে পড়ে। ৫ মে পাকসেনারা পিরোজপুর দখল করে নেয়। লে. জিয়াউদ্দিন পিরোজপুর হতে টুঙ্গিপাড়ায় গমন করেন। টুঙ্গিপাড়া থেকে তিনি সুন্দরবনে চলে যান। এ সময় বাগেরহাটের শামসুল আলম তালুকদার, কবীর আহমদ মধুর নেতৃত্বে মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে অবস্থান করছেন। তারা লে. জিয়াউদ্দিনকে পেয়ে তাঁকে কমান্ডার হিসেবে গ্রহণ করেন। জিয়াউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সুন্দরবন গমন করেন। ইতোমধ্যে পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল ও বাগেরহাট মহকুমা থেকে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা সুন্দরবনে একত্রিত হয়। জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়। ট্রেনিং ও অস্ত্র সংগ্রহ চলতে থাকে। জুলাই মাসে লে. জিয়াউদ্দিন ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ভারতে অবস্থিত নবম সেক্টর হেড কোয়ার্টারে উপস্থিত হন। তিনি নবম সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল ও জেনারেল এমএজি ওসমানীর সাথে দেখা করেন। হিরন পয়েন্ট ও মংলা পোর্টে জাহাজ আক্রমণ করার জন্য জিয়াউদ্দিন নৌ কামান্ডো চাইলেন। তাকে ৩৪ জন নৌ কমান্ডো দেয়া হয়। অস্ত্র ও ২০০ লিস্পেট মাইন নিয়ে তিনি জুলাই মাসের ২২ তারিখে সুন্দরবন যাত্রা করেন। এরপর চতুর্দিক থেকে শানানো হতে থাকে রাজাকার ও পাকবাহিনীর আক্রমণ ও যুদ্ধ। সংঘটিত হয় মোরেলগঞ্জ যুদ্ধ, তুষখালী খাদ্য গুদাম দখল যুদ্ধ, কাউখালীস্থ কেউন্দিয়ার যুদ্ধ, শর্ষিনার যুদ্ধ এবং এমন আরো অনেক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এসবের মধ্য দিয়ে ৭ ডিসেম্বর পিরোজপুর মুক্ত হয়।

পটুয়াখালী জেলা অঞ্চল

পটুয়াখালী ও বরগুনা মহকুমা নিয়ে পটুয়াখালী সাবসেক্টর গঠিত ছিল। ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ইমাম পটুয়াখালী কমান্ডার এবং জহির শাহ আলমগীর টুআইসি বা সহঅধিনায়ক ছিলেন। কয়েকটি উপদলকে একত্রিত করে মেহেদী অস্ত্র সংগ্রহ করেন। বেতাগীর ছাত্রলীগ নেতা হুমায়ুন কবীর হিরু আনসারদের নিকট থেকে কয়েকটি রাইপেল উদ্ধার করে মেহেদীকে দেন। মির্জাগঞ্জের হারুন-অর-রশিদ কয়েকটি অস্ত্র নিয়ে মেহেদীর সাথে যোগ দেন। বরগুনার ছাত্রলীগ নেতা সিদ্দিক, দীলিপ, রশীদ, হোগলাপাতির কামাল, জালাম প্রমুখ ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে চলে আসেন। মেহেদী অস্ত্র আনার জন্য ৩০ আগস্ট জহির শাহ আলমগীর ও আউয়ালকে ভারতে পাঠিয়ে দেন। তিনি নিজে সুন্দরবন গমন করে ক্যা. জিয়াউদ্দীন এর ক্যাম্প হতে অস্ত্র নিয়ে আসেন। বামনা থানার বুকাবুনিয়া স্কুলে পটুয়াখালী সবা-সেক্টরের প্রধান ক্যাম্প ছিল। ক্যা. মেহেদী ৫ জন কমান্ডার নিয়োগ করেন- সুবেদার হাতম আমতল-িখেপুপাড়া, সুবেদার আবদুল মজি-বামনা, পুলিশ কাসেম পাথরঘাটা, মোতালিব বেতাগী। জুন মাস হতে মুক্তিবাহিনী রাজাকার ও দালাল হত্যা করে। পটুয়াখালী জেলার কমান্ডারগণ: ১. পটুয়াখালী- গাজী দেলওয়ার হোসেন নূরুল হুদা; ২. মির্জাগঞ্জ- আলতাফ হায়দার, ৩. বাউফল- পঞ্চম আলী, ৪.গলাচিপা- আবদুর রব ও নূরুল হুদা, ৫. খেপুপাড়া-আমতলী- সুবেদার হাতেম আলী, ৬. বরগুনা- সিদ্দিকুর রহমান, আবদুর ছাত্তার ও জুলফিকার জুলফু, ৭. বেতাগী- আবদুল মতলেব, ৮. বামনা- আবদুল মজিদ, ও ৯. পাথরঘাটা = আবুল কাসেম। পটুয়াখালীতে সংঘটিত উল্লেখযোগ্য যুদ্ধগুলো হলো কালীশূরী-চাঁদকাঠি যুদ্ধ, পানপট্টির যুদ্ধ, বাউফল, গলাচিপা ও খেপুপাড়া দখল যুদ্ধ। এসব যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৭ ডিসম্বর পটুয়াখালী শত্রুমুক্ত হয়।

বরগুনা জেলা অঞ্চল

২৩ নভেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সুবেদার জামানের নেতৃত্বে বেতাগী যায়। তারা বদনীখালী বন্দর লুট করে এবং আগুন দিয়ে বাজার পুড়ে ফেলে। লুটের পর লঞ্চে পাকবাহিনী বরগুনায় ফিরছিল। বেতাগী মীর্জাগঞ্জ হতে কমান্ডার আলতাফ হায়দার ও মোতালেব তাদের দল নিয়ে পাক বাহিনীর লঞ্চ আক্রমণ করে। পাক বাহিনীর লঞ্চ হতে পাল্টা আক্রমণ চালায়। নদীর পশ্চিম তীর হতে বুকাবুনিয়া ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা এলএমজির ফায়ার করছে। জামান ছিলেন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। তিনি অতি দ্রুত লঞ্চ থেকে তীরে উঠে মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ চালান। এলএমজির সামনে মুক্তিবাহিনী টিকতে পারেনি। তারা পিছু হটে যান। এক বাক্স কার্তুজসহ মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝি ধরা পড়ে। পাকবাহিনী আহত হয়। তারা বরগুনা পৌঁছে দেখলো সেখানে থাকা নিরাপদ নয়। তাই রাতের অন্ধকারে পাকসেনারা সদলবলে বরগুনা ত্যাগ করে। ২৪ নভেম্বর বরগুনা মুক্ত হয়। সি আই পুলিশ অনোয়ার, এসআই শওকাত তাদের অনুগত পুলিশ, শান্তি কমিটির মোতালেব ও রাজকারেরা মুক্তিযোদ্ধাদের মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নেয়। ২৪ তারিখ ভোরে বুকাবুনিয়ার মুক্তিবাহিনী বামনা থানা আক্রমণ করে। সারাদিন সংঘর্ষ চলে। জহির শাহ আলমগীর, জুলফু, মজিদ, মোবারক মল্লিক, ছত্তার প্রমুখ বামনা থানা আক্রমণে অংশ নেয়। হাজার হাজার জনতা জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিচ্ছে। বিকেলে দেশীয় পুলিশ ও রাজাকারেরা আত্মসমর্পণ করে। বামনা থানায় ২৪ জন রাজাকার নিহত হয়। ২৪ নভম্বর জহির শাহ, মোতালেব, জুলফু প্রমুখ বেতাগী আক্রমণ করে থানা দখল করে। ২৫ নভেম্বর জহির শাহ, কমান্ডার কাসেম, জুলফু প্রমুখ পাথরঘাটা থানা আক্রমণ করে এবং কয়েক ঘন্টা যুদ্ধের পর থানার পুলিশ ও রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। পাথরঘাটা সংঘর্ষের সময় একদল শান্তি কমিটি নৌকায় পালাচ্ছিল। মুক্তিবাহিনী তাদের ধরে গুলি করে হত্যা করে। ২৭ নভেম্বর সকালে বেতাগীর আবদুস ছত্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, বরগুনা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি নুরুল ইসলাম সিকদার, মুহম্মদ জহির প্রমুখ মুক্তিবাহিনী নিয়ে বরগুনা মহকুমা শহর দখল করে। ২৭ নভেম্বর বরগুনা মহকুমা স্বাধীনতা লাভ করে। বরগুনা মহকুমা দখলের পর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়। ৪ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে বরগুনায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। বরগুনা থানার মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন সেনাবাহিনীর মোহাম্মদ জুলফু। বরগুনা থানা মুক্তিবাহিনীর কাছে পতনের পূর্বে সিআই পুলিশ আনোয়ার হোসেন অনুগত পুলিশ নিয়ে আমতলী থানায় আশ্রয় নেয়। ১২ ডিসেম্বর রাতে গলাচিপার আবদুর রব তার বাহিনী নিয়ে এ কে স্কুল হতে আমতলী থানা আক্রমণ করেন। তাঁর সাথে ছিল আমতলী থানা আওয়ামী লীগের সম্পাদক আফাজউদ্দিন বিশ্বাস, নুরুল ইসলাম তালুকদার পাশা, মইন তালুকদার, নিজামউদ্দিন আহমদ তালুকদার, কুতুবউদ্দিন তালুকদার প্রমুখ। সারা রাত সংঘর্ষের পর আমতলী থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আসমত আলী আকনের মাধ্যমে থানার পুলিশ ও রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। সিআই পুলিশ আনোয়ার হোসেন ও দারোগা রইস ভুইয়াকে হত্যা করা হয়। এই সকল যুদ্ধের সুবাদেই পাক সেনারা ১৬ নভেম্বর হতে বরিশাল, পটুয়াখালীর ক্যান্টনমেন্টে সীমাবদ্ধ থাকে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রায় সকল থানা মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেয়। ৩ ডিসেম্বর পাক ভারত যুদ্ধ শুরু হয়। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর বরিশাল ও রহমতপুর বিমান ঘাঁটিতে মিত্র বাহিনী বোমা বর্ষণ করে। ৮ ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় বরিশালে পাক সেনারা কার্ফু দেয়। যশোর, খুলনা থেকে পাক সেনারা পালিয়ে আসে এবং তারা কয়েকটি লঞ্চে ঢাকা অভিমুখে যাবে। বরিশাল ওয়াপদা অফিসের পাকসেনা বেলা ১১টার মধ্যে লঞ্চে আরোহণ করে। তারা ১২টার মধ্যে লঞ্চ ও স্টিমারযোগে বরিশাল ত্যাগ করে এবং এভাবেই ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর বরিশাল স্বাধীন হয়। বেলা ১১টার পরই জনগণ জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির দালালেরা দ্রুত পালাতে থাকে। সকল বাসভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়তে থাকে। ৮ ডিসেম্বর বিকালে সুলতান মাস্টার তার বাহিনী নিয়ে শহর উঠে পড়ে। ১০ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর শহরে আসে। তারপর সকল মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তাদের দল নিয়ে শহরে আসতে থাকে। ১৭ ডিসেম্বর নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ৫০০ মুক্তিযোদ্ধাসহ বরিশাল শহরে পৌঁছেন এবং তিনি সাময়িকভাবে জেলার প্রশাসন পরিচালনা করেন।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খ-)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।

          ২। মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল। গতিধারা, ঢাকা। ২০১৬