বরিশালের খালবিল

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০২:৫৫, ৪ জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত সংস্করণে

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

খাল

বরিশাল বিভাগে অসংখ্য খাল আছে। খাল ছাড়াও এ অঞ্চলে অনেক বড় বড় দোন বা ভারাণী আছে যারা দুই নদীকে সংযুক্ত করে। আড়াআড়ি নদীগুলোই মূলত স্রোত হারিয়ে দোনে পরিণত হয়েছে। বিষখালী, দামোদর, হলতা, আমুয়া, গাবখান, শিকারপুর, দোয়ারিকা প্রভৃতি প্রধান দোন। বরিশাল-পটুয়াখালীর খালগুলো উত্তরবাংলার অনেক নদীর চেয়ে বড়। খালগুলোর মধ্যে ঝালকাঠি, বানারীপাড়া, লাখুটিয়া, ভোলা, গৌরনদী, গুঠিয়া, সরিকল, টরকী, দামোদর, গুলিসাখালী, সুবিদখালী, হাজীখালী, ঝোপখালী, বদনীখালী, কাকচিরা, লেমুয়া, চরদোয়ানী, নলী, ধানখালী, কেওড়াবুনিয়া, বগী, আমতলী, তালতলী, বেতুয়া প্রভৃতি প্রাধান। অনেক নদী ভরাট হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। ঝালকাঠি থেকে রাজাপুর পর্যন্ত ধানসিড়ি নদী এখন ভরাট হয়ে খালে পরিলত হয়েছে। পূর্বে এ নদী দিয়ে স্টিমার যাতায়াত করত। বরিশালের বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশ এ ধানসিড়ি নদী নিয়ে কবিতা লিখেছেন। ভোলার বৃহৎ নদী বেতুয়া বর্তমানে খালে পরিণত হয়েছে।


বিল

নদী মরে গিয়ে বরিশালে শতাধিক বিল সৃষ্টি হয়েছে। বিলগুলোর মধ্যে স্বরূপকাঠির আটঘর-কুড়িয়ানা, উজিরপুরের সাতলা, গৌরনদীর বাগদা, বাউফলের ধরান্দি ও আদমপুর বিল প্রধান। অনেক সময় প্রাকৃতিক কারণে বিল সৃষ্টি হয়েছে। কালারাজা, রামপুর, চেচ্রি, সাতলা-বাগদা প্রভৃতি বিলে প্রাচীন কীর্তির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে এক ভয়ঙ্কর ভূকম্পন হয়। খুব সম্ভব এই ভূকম্পনের ফলে রামপুর চেচ্রি, কালারাজা প্রভৃতি জনপদ তলিয়ে বিল সৃষ্টি হয়। জোয়ার-ভাটার ফলে অনেক বিল ভরে গেছে এবং জনবসতি গড়ে উঠেছে। সাতলা-বাগদা ও আটঘর-কুড়িয়ান বিলগুলোও ভরে যাচ্ছে।

স্বরূপকাঠি থানার অন্তর্গত ‘উমারের পাড়’ নামক স্থানে বিলে জলের প্রায় তিন চারি হাত নীচে একখানি বাঁদাঘাট পাওয়া গিয়াছে। সিড়িগুলি এখন ভগ্নপ্রায়, ইট দেখিলে বোধ হয় যে, বর্তমান ইট হইতে তাহার আকার অনেক ভিন্ন। ভগ্নাবশেষ দেখিয়া অনুমান হয় যে ইহা বহুকাল আগের। স্থানীয় প্রবাদ যে, যখন চন্দ্রদ্বীপের রাজবংশ অতুল প্রতাপে বাকলায় রাজত্ব করিতেন, তখন রানী করুণাময়ী ‘গোবিন্দ রায়’ বিগ্রহের নামে দেবোত্তর দান করেন। তৎকালে ঐ বিল শস্যশালিনী ভূমি ছিল। হাট, বাজার, লোকালয় প্রভৃতি সমস্তই ছিল। উমর নামক জনৈক সমৃদ্ধিশালী মুসলমান ঐ দেবোত্তরাধীনে বাস করিত, তৎকর্তৃক ঐ ঘাট নির্মিত হইয়াছিল, পরে নৈসর্গিক কারণে উক্ত জনপদ অকস্মাৎ বিলে পরিণত হইয়াছে।



তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।