"পান্নালাল ঘোষ"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
 
[[চিত্র:Pannalal_ghosh.jpg]]
 
[[চিত্র:Pannalal_ghosh.jpg]]
  
বিখ্যাত বংশীবাদক। জন্ম ৩১ জুলাই ১৯১১। মৃত্যু ২০ এপ্রিল ১৯৬০। জন্মস্থান বরিশাল। আর এক নাম অমলজ্যোতি ঘোষ  পিতা অক্ষয়কুমার ভালো সেতার বাজাতেন। পিতামহ হরকুমার ঘোষ প্রখ্যাত ছিলেন ধ্রুপদীশিল্পী মা সুকুমারী ছিলেন একজন সুগায়িকা।পান্নালালের ছোট ভাই নিখিল ঘোষ ছিলেন প্রখ্যাত তবলাবাদক।
+
বিখ্যাত বংশীবাদক। জন্ম ৩১ জুলাই ১৯১১। মৃত্যু ২০ এপ্রিল ১৯৬০। জন্মস্থান বরিশাল। আর এক নাম অমলজ্যোতি ঘোষ।পিতা অক্ষয়কুমার ভালো সেতার বাজাতেন। পিতামহ হরকুমার ঘোষ প্রখ্যাত ধ্রুপদীশিল্পী ছিলেন। মা সুকুমারী ছিলেন একজন সুগায়িকা।পান্নালালের ছোট ভাই নিখিল ঘোষ ছিলেন প্রখ্যাত তবলাবাদক।
  
 
বংশীবাদন ছাড়া শরীরচর্চাতেও পান্নালাল ঘোষের খ্যাতি ছিল। চৌদ্দ বছর বয়সে পান্নালাল বাঁশি শিখতে শুরু করেন। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ১৯২৬ সালে বরিশাল থেকে কলকাতায় চলে যান। ১৯৩৬খ্রি. ব্যান্টম ভারোত্তলন প্রতিয়োগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৩৫খ্রি. অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সে প্রথম পুরস্কার পান। এ সময় ফিল্ম কোম্পানি নিউ থিয়েটার্সে চাকরি নেন। এখানে অমৃতসরের ওস্তাদ খুশি মহম্মদ হারমোনিয়াম বাজাতেন। তাঁর কাছে মার্গসংগীত শিখতে থাকেন। পরে শিখেন গিরিজাশঙ্কর এর কাছে। তবে বাঁশরিয়া হিসাবেই তাঁর খ্যাতি। ১৯৩৮ সালে সেরাইকেল্লার যুবরাজের নাচের দলের সঙ্গে তিনি ইউরোপ ভ্রমণে যান। এরপর দেশ-বিদেশের বহু কনফারেন্সে আমন্ত্রণ পেয়ে বাঁশি বাজিয়েছেন। অল ইন্ডিয়া রেডিওতে বেশ কয়েকটি ঐক্যতানবাদন পরিচালনা করেছেন।  
 
বংশীবাদন ছাড়া শরীরচর্চাতেও পান্নালাল ঘোষের খ্যাতি ছিল। চৌদ্দ বছর বয়সে পান্নালাল বাঁশি শিখতে শুরু করেন। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ১৯২৬ সালে বরিশাল থেকে কলকাতায় চলে যান। ১৯৩৬খ্রি. ব্যান্টম ভারোত্তলন প্রতিয়োগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৩৫খ্রি. অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সে প্রথম পুরস্কার পান। এ সময় ফিল্ম কোম্পানি নিউ থিয়েটার্সে চাকরি নেন। এখানে অমৃতসরের ওস্তাদ খুশি মহম্মদ হারমোনিয়াম বাজাতেন। তাঁর কাছে মার্গসংগীত শিখতে থাকেন। পরে শিখেন গিরিজাশঙ্কর এর কাছে। তবে বাঁশরিয়া হিসাবেই তাঁর খ্যাতি। ১৯৩৮ সালে সেরাইকেল্লার যুবরাজের নাচের দলের সঙ্গে তিনি ইউরোপ ভ্রমণে যান। এরপর দেশ-বিদেশের বহু কনফারেন্সে আমন্ত্রণ পেয়ে বাঁশি বাজিয়েছেন। অল ইন্ডিয়া রেডিওতে বেশ কয়েকটি ঐক্যতানবাদন পরিচালনা করেছেন।  
  
১৯৪০খ্রি. ফিল্ম জগতে সংগীত পরিচালকরূপে মুম্বাই যান। স্নেহবন্ধন (১৯৪০) তাঁর সংগীত পরিচালনায় প্রথম ছবি। আনজান (১৯৪১), বসন্ত্ (১৯৪২), দুহাই (১৯৪৩), নন্দকিশোর (১৯৫১), বসন্ত বাহার (১৯৫৬), মুঘল-এ-আজম (১৯৬০) প্রভৃতি বিখ্যাত ছবির গান ও আবহসংগীতে মিশে আছে তাঁর বাঁশির কারুকাজ। আঁধিয়া (১৯৫২) ছবির আবহসংগীতে তিনি কাজ করেন ওস্তাদ আলী আকবর খান ও পন্ডিত রবিশঙ্কর-এর সঙ্গে যৌথভাবে। ১৯৪৭খ্রি. আলাউদ্দীন খাঁর কাছে কিছুদিন শিক্ষাগ্রহণ করেন। তাঁরই উৎসাহে সৃষ্টি করেন নানা রাগ; নূপুরধ্বনি, চন্দ্রমৌলি, দীপাবলি, কুমারী। ফৈয়াজ খান ও ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের মতো কণ্ঠশিল্পীদের অনুরোধে পান্নালাল তাঁদের খেয়ালের সঙ্গে বাঁশিতে সঙ্গত করেছেন। ১৯৪২ খ্রি. ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে বন্দি অবস্থায় অসুস্থ গান্ধীজিকে তিনি বাঁশি শুনিয়ে তাঁর আর্শীবাদ লাভ করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে আকাশবাণী দিল্পী কেন্দ্রে সংগীত নির্দেশক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।
+
১৯৪০খ্রি. ফিল্ম জগতে সংগীত পরিচালকরূপে মুম্বাই যান। স্নেহবন্ধন (১৯৪০) তাঁর সংগীত পরিচালনায় প্রথম ছবি। আনজান (১৯৪১), বসন্ত্ (১৯৪২), দুহাই (১৯৪৩), নন্দকিশোর (১৯৫১), বসন্ত বাহার (১৯৫৬), মুঘল-এ-আজম (১৯৬০) প্রভৃতি বিখ্যাত ছবির গান ও আবহসংগীতে মিশে আছে তাঁর বাঁশির কারুকাজ। আঁধিয়া (১৯৫২) ছবির আবহসংগীতে তিনি কাজ করেন ওস্তাদ আলী আকবর খান ও পন্ডিত রবিশঙ্কর-এর সঙ্গে যৌথভাবে। ১৯৪৭খ্রি. আলাউদ্দীন খাঁর কাছে কিছুদিন শিক্ষাগ্রহণ করেন। তাঁরই উৎসাহে সৃষ্টি করেন নানা রাগ: নূপুরধ্বনি, চন্দ্রমৌলি, দীপাবলি, কুমারী। ফৈয়াজ খান ও ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের মতো কণ্ঠশিল্পীদের অনুরোধে পান্নালাল তাঁদের খেয়ালের সঙ্গে বাঁশিতে সঙ্গত করেছেন। ১৯৪২ খ্রি. ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে বন্দি অবস্থায় অসুস্থ গান্ধীজিকে তিনি বাঁশি শুনিয়ে তাঁর আর্শীবাদ লাভ করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে আকাশবাণী দিল্পী কেন্দ্রে সংগীত নির্দেশক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।
 
   
 
   
 
বাঁশির যে আধুনিক রূপটি আমরা দেখি, সেটি পান্নালাল ঘোষের উদ্ভাবন। ৩২ ইঞ্চি আকৃতির সাত ছিদ্রবিশিষ্ট বাঁশির প্রথম প্রচলন তিনিই করেছিলেন। আগেকার বাঁশিতে দু'একটি স্বর বাজানো বেশ অসুবিধাজনক ছিল। সপ্তম ছিদ্রটি উদ্ভাবন করে পান্নালাল সেই সমস্যার সমাধান করেন। তিনিই বাঁশিকে উন্নীত করেছিলেন সেতার, সরোদ, সানাই, সারেঙ্গীর পর্যায়ে যা এককভাবে ধ্রুপদী সংগীতের গৌরবে বাজতে পারে মূল যন্ত্র হিসেবে।
 
বাঁশির যে আধুনিক রূপটি আমরা দেখি, সেটি পান্নালাল ঘোষের উদ্ভাবন। ৩২ ইঞ্চি আকৃতির সাত ছিদ্রবিশিষ্ট বাঁশির প্রথম প্রচলন তিনিই করেছিলেন। আগেকার বাঁশিতে দু'একটি স্বর বাজানো বেশ অসুবিধাজনক ছিল। সপ্তম ছিদ্রটি উদ্ভাবন করে পান্নালাল সেই সমস্যার সমাধান করেন। তিনিই বাঁশিকে উন্নীত করেছিলেন সেতার, সরোদ, সানাই, সারেঙ্গীর পর্যায়ে যা এককভাবে ধ্রুপদী সংগীতের গৌরবে বাজতে পারে মূল যন্ত্র হিসেবে।

০৮:৪৩, ২০ এপ্রিল ২০২০ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

Pannalal ghosh.jpg

বিখ্যাত বংশীবাদক। জন্ম ৩১ জুলাই ১৯১১। মৃত্যু ২০ এপ্রিল ১৯৬০। জন্মস্থান বরিশাল। আর এক নাম অমলজ্যোতি ঘোষ।পিতা অক্ষয়কুমার ভালো সেতার বাজাতেন। পিতামহ হরকুমার ঘোষ প্রখ্যাত ধ্রুপদীশিল্পী ছিলেন। মা সুকুমারী ছিলেন একজন সুগায়িকা।পান্নালালের ছোট ভাই নিখিল ঘোষ ছিলেন প্রখ্যাত তবলাবাদক।

বংশীবাদন ছাড়া শরীরচর্চাতেও পান্নালাল ঘোষের খ্যাতি ছিল। চৌদ্দ বছর বয়সে পান্নালাল বাঁশি শিখতে শুরু করেন। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ১৯২৬ সালে বরিশাল থেকে কলকাতায় চলে যান। ১৯৩৬খ্রি. ব্যান্টম ভারোত্তলন প্রতিয়োগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৩৫খ্রি. অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সে প্রথম পুরস্কার পান। এ সময় ফিল্ম কোম্পানি নিউ থিয়েটার্সে চাকরি নেন। এখানে অমৃতসরের ওস্তাদ খুশি মহম্মদ হারমোনিয়াম বাজাতেন। তাঁর কাছে মার্গসংগীত শিখতে থাকেন। পরে শিখেন গিরিজাশঙ্কর এর কাছে। তবে বাঁশরিয়া হিসাবেই তাঁর খ্যাতি। ১৯৩৮ সালে সেরাইকেল্লার যুবরাজের নাচের দলের সঙ্গে তিনি ইউরোপ ভ্রমণে যান। এরপর দেশ-বিদেশের বহু কনফারেন্সে আমন্ত্রণ পেয়ে বাঁশি বাজিয়েছেন। অল ইন্ডিয়া রেডিওতে বেশ কয়েকটি ঐক্যতানবাদন পরিচালনা করেছেন।

১৯৪০খ্রি. ফিল্ম জগতে সংগীত পরিচালকরূপে মুম্বাই যান। স্নেহবন্ধন (১৯৪০) তাঁর সংগীত পরিচালনায় প্রথম ছবি। আনজান (১৯৪১), বসন্ত্ (১৯৪২), দুহাই (১৯৪৩), নন্দকিশোর (১৯৫১), বসন্ত বাহার (১৯৫৬), মুঘল-এ-আজম (১৯৬০) প্রভৃতি বিখ্যাত ছবির গান ও আবহসংগীতে মিশে আছে তাঁর বাঁশির কারুকাজ। আঁধিয়া (১৯৫২) ছবির আবহসংগীতে তিনি কাজ করেন ওস্তাদ আলী আকবর খান ও পন্ডিত রবিশঙ্কর-এর সঙ্গে যৌথভাবে। ১৯৪৭খ্রি. আলাউদ্দীন খাঁর কাছে কিছুদিন শিক্ষাগ্রহণ করেন। তাঁরই উৎসাহে সৃষ্টি করেন নানা রাগ: নূপুরধ্বনি, চন্দ্রমৌলি, দীপাবলি, কুমারী। ফৈয়াজ খান ও ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের মতো কণ্ঠশিল্পীদের অনুরোধে পান্নালাল তাঁদের খেয়ালের সঙ্গে বাঁশিতে সঙ্গত করেছেন। ১৯৪২ খ্রি. ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে বন্দি অবস্থায় অসুস্থ গান্ধীজিকে তিনি বাঁশি শুনিয়ে তাঁর আর্শীবাদ লাভ করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে আকাশবাণী দিল্পী কেন্দ্রে সংগীত নির্দেশক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।

বাঁশির যে আধুনিক রূপটি আমরা দেখি, সেটি পান্নালাল ঘোষের উদ্ভাবন। ৩২ ইঞ্চি আকৃতির সাত ছিদ্রবিশিষ্ট বাঁশির প্রথম প্রচলন তিনিই করেছিলেন। আগেকার বাঁশিতে দু'একটি স্বর বাজানো বেশ অসুবিধাজনক ছিল। সপ্তম ছিদ্রটি উদ্ভাবন করে পান্নালাল সেই সমস্যার সমাধান করেন। তিনিই বাঁশিকে উন্নীত করেছিলেন সেতার, সরোদ, সানাই, সারেঙ্গীর পর্যায়ে যা এককভাবে ধ্রুপদী সংগীতের গৌরবে বাজতে পারে মূল যন্ত্র হিসেবে।

ভারতীয় ফিল্মের খ্যাতনামা নেপথ্যগায়িকা সুপ্রভা ঘোষ তাঁর স্ত্রী।



তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান ও Barisal - 250 Years' History in Photographs